• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

ইন্টারনেটের অসংলগ্ন ব্যবহার

  • প্রকাশিত ০৯ ডিসেম্বর ২০২০

তাসনিম হাসান মজুমদার

 

 

পৃথিবীতে যা কিছু কল্যাণকর, তার বিপরীত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। ইন্টারনেট আমাদের জীবনকে করেছে গতিময় ও মসৃণ। দুঃসাধ্য কাজকে হাতের নাগালে এনে দিয়েছে। পৃথিবীকে গ্লোবাল ভিলেজ বা বৈশ্বিক গ্রামে রূপান্তরিত করেছে ইন্টারনেট। পুরো পৃথিবীর মানুষকে একটি গ্রামের মানুষের মতো একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট এই যুগের মানুষের নিকট রথী-মহারথী। জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এনেছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব সুযোগ-সুবিধা সহজেই ভোগ করছে মানুষ। বহু দূরের আপজনের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে। অডিও, ভিডিও কিংবা ভয়েস কল আপনাকে সামনাসামনি কথা বলার মতোই অনুভূতি দিয়ে থাকে। এই করোনাকালে পুরো পৃথিবীতে অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ। লক্ষ লক্ষ জব হোল্ডার বাসা থেকেই তাদের কোম্পানি বা অফিসের কাজ করছে। শিক্ষার্থীরা বাসা থেকে ক্লাস করছে। অ্যাসাইনমেন্ট সাবমিট করা, প্রজেক্ট সাবমিট করা— সবকিছুই বাসা থেকে করতে পারছে শিক্ষার্থীরা। স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো, ইউরোপের ফুটবল লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন লিগ প্রতিনিয়ত বাসায় বসে দেখছে বিলিয়ন বিলয়ন দর্শক। এসব সম্ভব হয়েছে একমাত্র ইন্টারনেটের বদৌলতেই।

তবে ইন্টারনেটের হাজারো সুবিধার মাঝে কিছু অসুবিধাও আছে। মানুষ এখন ইন্টারনেটকে অসাধু পন্থায়ও ব্যবহার করছে। ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার হচ্ছে এখন ইন্টারনেট। সাইবার বুলিং থেকে শুরু করে নগ্নতা— সবকিছুই ইন্টারনেটের নেগেটিভ দিক। তবে এও সত্য, কেবল ইন্টারনেট ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে এর অপব্যবহার বন্ধ করাও সম্ভব নয়। পিতা-মাতা নিজেরা প্রযুক্তি না জানায় বিধিনিষেধের মাধ্যমে সন্তানদের এর ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে চান। বরং উল্টো হওয়া উচিত। প্রযুক্তির ব্যবহারে সন্তানদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। শিশুদের বিপথগামিতার কারণ হচ্ছে অভিভাবকরা সন্তানদের সময় দেন না; তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নেই। শিশুরা তাদের তথ্যগুলো অভিভাবকদের সঙ্গে শেয়ার করে না। অনলাইনে শিশুদের বিচরণের জন্য ইতিবাচক, শিক্ষামূলক কন্টেন্টের অভাবও লক্ষণীয়। তাই বাধ্য হয়েই শিশুরা অন্যদিকে ঝুঁকছে, পর্নোগ্রাফি দেখছে। অনেক সময় শিশুরা কৌতূহল থেকেও এসব দিকে যেতে পারে; নির্যাতনের শিকার হতে পারে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য পরিবার প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করে থাকে।

অন্যদিকে, রাষ্ট্র কোনো ভূমিকা রাখছে না, এমন অভিযোগও রয়েছে। কেউ নির্যাতিত হলে কোথায় যাবে, কার কাছে বিচার পাবে, তা জানে না। রাষ্ট্র এ বিষয়ে সচেতন নয়। এদিকে নজর দিতে হবে। বিচার ব্যবস্থাকে পাল্টাতে হবে। হাত-পা বেঁধে নয়; শিশুদের স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠার উন্মুক্ত পরিবেশ দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কেলেঙ্কারি ও ইন্টারনেটের অপব্যবহার সম্পর্কে আছে ধোঁয়াশা। কেউ জানতেও পারল না বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা মুহূর্তেই উধাও হয়ে গেল। আমরা প্রায় সময় দেখি আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার ও ভারত আমাদের সাইবার আক্রমণ করে। দেশের বিভিন্ন বিশ্বিবদ্যালয় বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ডাউন করে দেয়, যা ইন্টারনেটের অপব্যবহার। সাইবার যুদ্ধ। এই যুদ্ধে সবাই জিততে চায়। আর ময়দানে কেউ হারতে নামে না। সবাই কোমর বেঁধেই নামে সাইবার যুদ্ধে।

এই ইন্টারনেট অনেক বড় বড় সেলিব্রেটির গগনজোড়া জনপ্রিয়তা দিয়েছে। আবার কেড়ে নিয়েছে হাজার জীবনও। বাসায় ওয়াইফাই কানেকশন না দেওয়াতে অনেক তরুণ-তরুণীর আত্মহননের খবর ভেসে আসে মাঝেমধ্যেই। সম্প্রতি অনেককেই দেখা যায়, ফেসবুক বা ইনস্টগ্রাম লাইভে এসে বা পোস্ট করে সুইসাইড করে। ফেসবুকের ট্রেন্ড এসব। এই ট্রেন্ডে গা ভাসাতে গিয়েও অনেক প্রাণ অকালে ঝরে পড়ে। এই ইন্টারনেটের মাধ্যমেই প্রচুর মিথ্যা তথ্য উপাত্ত ছড়িয়ে পরে পৃথিবীতে। ছোট ছোট শিশুও সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে থাকে। বাদ পড়ে না সাকিবকন্যা আলাইনাও। অসুস্থ মস্তিষ্কের টিকটকারকেও দেখা যায় অশ্লীল লিরিক্সের গান দিয়ে বাচ্চাদের টিকটকে অভিনয় করতে বা জোরপূর্বক তাদের টিকটকে অভিনয় করাতে। অনলাইন গেইমগুলো নেশায় পরিণত হচ্ছে কিশোর-বয়সি ছেলেমেয়েদের। বাসায় বাবা-মাকে গেমিং পিসি কিনে দিতে বাধ্য করা কিংবা হাই রেমের মোবাইল কিনে দিতে বাধ্য করা— এ সবকিছুই ইন্টারনেটের অপব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত। আশা করব সবাই ইন্টারনেটের অপব্যবহার থেকে সরে আসবে। সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে নিজ পরিবারগুলো।

 

 

লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম।

tasnimhasan067@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads