• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯
সংসদে যেতে চান গণফোরামের দুজন

ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান

ফাইল ছবি

সংসদ

সংসদে যেতে চান গণফোরামের দুজন

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

তিন সপ্তাহ আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী ফ্রন্টের কেউই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন না। গণফোরাম থেকে নির্বাচিত মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া-কমলগঞ্জ) আসনের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও সিলেট-২ আসনের মোকাব্বির খান শপথ গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করলে ৭ জানুয়ারি মতিঝিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে নেতারা বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। তবে সেই সিদ্ধান্ত মানতে রাজি নন ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও উদিয়মান সুর্য প্রতীকের মোকাব্বির খান।

গতকাল রবিবার তারা জানান, নির্ধারিত নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ সদস্য (এমপি) হিসেবে শপথ নিতে চান তারা। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, আমরা দু’জন শপথ নেবো। তবে তাড়াহুড়োর কিছু নাই। এখনও সময় আছে। ৯০ দিনের মধ্যে শপথ নিলেই হবে। জনগণ শত প্রতিকূলতায় অনেক ত্যাগ স্বীকার করে আমাদের নির্বাচিত করেছেন। আমি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছি। তবে সরাসরি বিএনপি থেকে নির্বাচন করিনি। ধানের শীষ ঐক্যফ্রন্টের প্রতীক। যেহেতু নির্বাচন করবো, তাই এই প্রতীক নিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে আমাকে কেউ বের করে দেয়নি। আর আমি কোন দলে যোগদানও করিনি। আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। গণফোরাম থেকে নির্বাচনে গেছি- কারণ গনফোরামে বঙ্গবন্ধুর চিন্তার মিল আছে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যদি আমাকে ডাকে তাহলে চিন্তা করতে পারি। কারণ আমাকে তো আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়নি। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, বিএনপি তাদের সিদ্ধান্ত নেবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও সিদ্ধান্ত নেবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে তো সবাই আলাদা আলাদা দল। আমাদের সিদ্ধান্ত ‘অবশ্যই পজেটিভ’ হবে। আর ঐক্যফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিলেও সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের স্বাধীন চিন্তার অধিকার আছে। আমার এলাকার ভোটারদের কথা ভাবতে হবে। তারা কেনো আমাকে নির্বাচিত করেছে।’

ধানের শীষ প্রতীকে আপনি নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপির সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিলে আইনি কোনো সমস্যা হবে কি-না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এটা কোনো সমস্যা হবে না। বিএনপি যদি সংসদে যেত, আর আমি যদি তাদের বিরুদ্ধে সংসদে ভোট দিতাম সেক্ষেত্রে সমস্যা হতো। এখন যেহেতু বিএনপি সংসদে যাচ্ছে না। তাই আমার শপথে কোনো সমস্যা হবে না। আমি তো গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছি। আমার এলাকার জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছেন সংসদে কথা বলার জন্য। তাদের জন্য কাজ করতেই আমাকে সংসদে যেতে হবে।

সিলেট-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনার প্রার্থিতা হাইকোর্ট বাতিল করলে গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খানকে উদীয়মান সূর্য প্রতীকে সমর্থন দেয় বিএনপি। মোকাব্বির খান বলেন, গণফোরাম সভাপতি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন। রাতে তার দেশে ফেরার কথা। তিনি আসার পর আমাদের দলীয় ফোরামের বৈঠকে শপথের বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে শপথ গ্রহনের বিষয়ে আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। ফোরামের সিদ্ধান্তও ইতিবাচকই হবে বলে আশা করি। আমরা গণফোরামে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। তবে বিএনপি কী করবে সেটা তাদের ব্যাপার। বিএনপির সিদ্ধান্ত তাদের নিজস্ব।

এদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির দুই দফা বৈঠকে এবং ঐক্যফ্রন্টের সভায় সিদ্ধান্ত হয়,কেউ শপথ নিবেন না। গত শনিবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বারবার বলেছি, ৩০ ডিসেম্বর দেশে কোনো নির্বাচনই হয়নি। এই নির্বাচনের ফলাফল আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। সুতরাং শপথ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমাদের কেউই শপথ নেবেন না।

অপর দিকে ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, শপথ নিয়ে আপনারা বেঈমানি করবেন না।এই সরকার যে নির্বাচন করেছে, সেটাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। বিএনপির যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা জাতির সাথে প্রতারণা করবে না, বেঈমানি করবে না, সংসদে যাবেন না। সংসদে যদি যায়, আমরা মনে করব তারা জাতির সাথে প্রতারণা করেছে। আমরা যারা নির্বাচন করেছি, তারা জেলে গেছে, যারা মেহনত করেছে, তাদের সাথে প্রতারণা করেছে।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণ প্রশ্নে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে বিন্দুমাত্র অনৈক্য নেই।

ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যত্ নিয়ে জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভাঙার কোনো প্রশ্ন আসে না। জনগণের স্বার্থে গণতন্ত্র রক্ষায় যে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে তা স্থায়ী থাকবে।

প্রসঙ্গত যে, গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিএনপির ৬ জন ও গণফোরামের দুজন প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অপরদিকে খালেদা জিয়ার বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোর্শেদ মিল্টনের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় ওই আসনে বিএনপি সমর্থন দিয়েছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলুকে। তিনি বিএনপির সমর্থনে নির্বাচিত হলেও পরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে গত ৩ জানুয়ারি শপথ নেন বাবলু।

উল্লেখ্য,নির্বাচনের পর ৫ জানুয়ারী রাজধানীর শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে গণফোরামের বর্ধিত সভা শেষে শপথের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, ‘সুনির্দিষ্ট আলোচনার মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমার নিজের ধারণা, সংসদে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি ঠিকই কিন্তু আমাদের প্রার্থীরা বিরোধী দল থেকে জয়লাভ করেছেন। তারপরের দিন গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ড. কামাল হোসেনের একটি বক্তব্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ‘ড. কামাল হোসেন কোনোভাবেই বলেননি যে, গণফোরাম থেকে নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। এছাড়া ঐক্যফ্রন্টে কোনো ‘অনৈক্য’ নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads