• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ

জাতীয় সংসদ

সংরক্ষিত ছবি

সংসদ

একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ

  • রেজাউল করিম হীরা
  • প্রকাশিত ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ বুধবার। বেলা ৩টায় এই সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে। এ উপলক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সংসদ ভবন এলাকা ঘিরে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দশম সংসদের মতো এবারো বাইরে থাকছে বিএনপি। দ্বিতীয়বারের মতো বিরোধী দলের আসনে বসবে জাতীয় পার্টি। তবে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ের পর এ সংসদের মাধ্যমে উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা আটটি আসনে বিজয়ী হলেও শপথ গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। ফলে সংসদে যাচ্ছেন না দলটির কোনো প্রতিনিধি। আজ শুরু হতে যাওয়া এই সংসদকে ভুয়া ভোটের সংসদ বলছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আগামীকাল (আজ) ভুয়া ভোটের সংসদ বসছে। এই সংসদ গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রেতাত্মা। এ ছাড়া এই সংসদের প্রতিবাদে এক ঘণ্টা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে বিএনপি সংসদে যাবে এমন প্রত্যাশা করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।

তিনি বলেন, বিএনপি পার্লামেন্টে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে কত দিন থাকবে জানি না। তারা অভিমান করে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে চায়ের দাওয়াতে যাবেন না, তবে পার্লামেন্ট যাবেন। এবারো জাতীয় সংসদে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি এখন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন। বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ও দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের। বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপের দায়িত্ব পান মশিউর রহমান রাঙ্গা।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন। পরে অধিবেশনজুড়ে ওই ভাষণের ওপর আলোচনা করবেন সংসদ সদস্যরা। অধিবেশন শুরুর প্রথমেই স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের বিধান রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী স্পিকার নির্বাচনের সময় ডেপুটি স্পিকারের সভাপতিত্বে সংসদ শুরু হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়ে স্পিকার অধিবেশনে বসবেন। পরে স্পিকার ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের জন্য সংসদ পরিচালনা করবেন। এরপর সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন দেওয়া হয়।

সংসদে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সংসদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। রেওয়াজ অনুযায়ী প্রত্যেক অধিবেশনেই পাঁচজন করে সভাপতি নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে একজন নারী সদস্যকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এরপর ৫টি অধ্যাদেশ উপস্থাপন করা হবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে এই ৫টি অধ্যাদেশ তুলবেন। সংসদ অধিবেশন না থাকায় এই অধ্যাদেশগুলো জারি করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। এগুলো ক্রমান্বয়ে আইনে পরিণত করা হবে। এরপর থাকবে শোক প্রস্তাব। এবার আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মারা যাওয়ায় সংসদে শোক প্রস্তাব আনা হবে। তার স্মরণে আলোচনা হবে। শোক প্রস্তাব শেষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দেবেন। তার ভাষণের পরই সংসদ মুলতবি করা হবে। সংসদীয় রেওয়াজ অনুযায়ী চলমান সংসদের কোনো এমপি মারা গেলে অধিবেশন শুরুর পর শোক প্রস্তাব গ্রহণ করে ওই দিনের মতো অধিবেশন মুলতবি করা হয়। রাষ্ট্রপতির ভাষণ উপলক্ষে প্রধান বিচারপতি ছাড়াও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সংসদে যান। এজন্য সংসদে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে এ অধিবেশন কতদিন চলবে তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। অধিবেশন শুরুর আগে কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। অধিবেশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম অধিবেশনের মূল আকর্ষণ রাষ্ট্রপতির ভাষণ। সেটার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আসলে কিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকে, তাকে অভ্যর্থনা জানানো, লাল গালিচা দেওয়া, এগুলো করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর সংসদের অধিবেশন চলাকালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংসদবিষয়ক কাজে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীদের দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছে সরকার। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং তাদের অনুপস্থিতিতে বিকল্প মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীদের দায়িত্ব বণ্টন করে গত সোমবার আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং বিকল্প দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের অনুপস্থিতিতে কারা ওইসব মন্ত্রণালয়ের সংসদ সম্পর্কিত কাজ করবেন তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

একাদশ সংসদের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সুশাসন নিশ্চিত করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে প্রথম অধিবেশনেই সংসদীয় কমিটি গঠিত হবে। সংসদে গঠনমূলক বিরোধিতার সুযোগ সৃষ্টি করতে এসব কমিটিতেও রাখা হবে বিরোধী পক্ষের সদস্যদের। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, মানুষ চায় উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে সুশাসন হবে। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হবে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। সংসদের কার্যক্রমকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে প্রথম অধিবেশনেই গঠন করা হবে সংসদীয় কমিটিগুলো। বিরোধী দল যত ছোটই হোক না কেন তাদের কেউ সংসদে দাঁড়িয়ে কোনো ন্যায়সঙ্গত কথা বললে আমরা সে কথাকে অবশ্যই গুরুত্ব দেব।

একাদশ সংসদে কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে হারানো ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে চায় জাতীয় পার্টি। দশম জাতীয় সংসদে একই সাথে সরকারের মন্ত্রিসভা এবং বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করে এ দলটি। তাই একাদশ জাতীয় সংসদের শুরু থেকেই সরকারের অংশ না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে জাপা জনগণের পক্ষে কথা বলবে। দেশ ও জাতির যেকোনো স্বার্থে জাপা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে কখনো পিছপা হবে না। সংসদেই প্রমাণ হবে জাতীয় পার্টি দেশ ও জনগণের স্বার্থে আপস করে না।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন সংসদের প্রাণবন্ত হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে দুই পক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। এ বিষেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগেরই অংশ ছিল। এভাবে বিরোধী দল গঠন করাটা মানানসই নয়। সংসদ প্রাণবন্ত হওয়ার জন্য শুধু দাঁড়িয়ে কথা বললেই হবে না, কথায় সারবত্তা থাকতে হবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে সব পক্ষকে সংসদে যাওয়ার আহ্বান জানান এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

২০১৪-তে বিরোধীপক্ষ বিহীন নির্বাচনের পর দশম সংসদের ২৩টি অধিবেশনে পাস হয়েছিল দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৯৩টি বিল। ওই সংসদেই সংবিধান সংশোধন হয়েছে দুইবার। পাস হয়েছে বিচারপতি অপসারণে ষোড়শ সংশোধনী, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সড়ক আইনসহ আলোচিত আইনগুলো।

গত ৩ জানুয়ারি সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে চার ধাপে এমপিরা শপথ নেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবিধান ও কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী প্রথমে নিজে শপথ গ্রহণ করেন এবং শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। পরে অন্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান। পরে ৭ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দলের সংসদ নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা শপথ নিয়েছেন। এরপর গত ৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এই অধিবেশন আহ্বান করেন।

উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পায় আওয়ামী লীগ। ভোট হওয়া ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পেয়েছে দলটি, জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন। অন্যদিকে তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা সব মিলিয়ে পায় মাত্র আটটি আসন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads