• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে  সাফল্য বেশি: সংসদে রাষ্ট্রপতি

একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরুর ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ

ছবি : সংগৃহীত

সংসদ

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাফল্য বেশি: সংসদে রাষ্ট্রপতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নের সব সূচকে রূপকল্পে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা বিপুলভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। গতকাল বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরুর ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

মো. আবদুল হামিদ বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ যাত্রা শুরু করেছে। তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার, চতুর্থবারের মতো শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করায় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি। একই সঙ্গে এই মহান সংসদের নব-নির্বাচিত সংসদ-সদস্যদের ও দেশবাসীকেও আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ‘রূপকল্প-২০২১’, দিন বদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নের সব সূচকে রূপকল্পে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণিতে উত্তরণের সব যোগ্যতা অর্জন করেছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা বিপুলভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

সরকারের দক্ষ পরিচালনায় অর্থনীতির সব সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশে অতীতের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বিনিয়োগ বেড়েছে। ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ইপিজেডসমূহে ক্রমপুঁঞ্জিত প্রকৃত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা এবং রফতানির পরিমাণ ৫ লাখ ৯১ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এ সময় ইপিজেডসমূহে মোট ৪৭৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে এবং ৫ লাখ ৮ হাজার ৬৮৯ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিনিয়োগ-বৃদ্ধি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন, বিভিন্ন প্রকার রফতানি প্রণোদনা প্রদান, ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুসহ ইজ অব ডুইং বিজনেস-এর জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জানুয়ারি ২০১৪ হতে ডিসেম্বর ২০১৮ মেয়াদে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে প্রস্তাবিত মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিগত ১০ বছরে দেশে-বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে দেশের অভ্যন্তরে মোট ১ কোটি ৩৪ লাখের অধিক এবং বিদেশে প্রায় ৮০ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। তন্মধ্যে বিগত ৫ বছরে ৩৪ লাখ ৮২ হাজার কর্মী বিদেশে গমন করায় প্রায় ৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স অর্জিত হয়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন দেশে ১৯টি শ্রম উইং খোলা হয়েছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দারিদ্র্যবিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নেও সরকারের অর্জন ছিল লক্ষ্যণীয়। ১৩০টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৭৬ লাখ ৩২ হাজার ব্যক্তি বা পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এই খাতে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরে ৬৪ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা বাজেটের ১৩  শতাংশের বেশি। ফলে দারিদ্র্যের হার ২০১০ সালের ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০১৮ সালে ২১ দশমিক ৮ শতাংশে এবং হতদরিদ্রের হার ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৩ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। এ সময়ে আয়-বৈষম্যের হারও সন্তোষজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণতাই অর্জন করেনি বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যের দেশ হিসাবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে দশম, চাল উৎপাদনে চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম এবং আলু উৎপাদনে অষ্টম স্থান অর্জন করেছে। দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদন বর্তমানে ৪ কোটি ১৩ লাখ ২৫ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ সহায়তাবাবদ বিগত ৫ বছরে ৩২ হাজার ৪৯০ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং প্রণোদনা ও কৃষি পুনর্বাসনে ৫৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বিতরণ করায় ৩৭ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮৮ জন কৃষক উপকৃত হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার দেশের প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। দেশে মোট ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু করা হয়েছে, যার উপকারভোগী ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১৫০ জন। ১০টি সম্পূর্ণ অবৈতনিক স্পেশাল স্কুল ফর চিল্ড্রেন উইথ অটিজম চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ে সার্বিক অগ্রগতির একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে। অটিজমের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাকে ‘এক্সিলেন্স ইন পাবলিক হেলথ অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি’ আইন বাতিল করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় কার্যকর করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলা এবং বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে এবং আদালত কর্তৃক দোষীদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। মাদক, জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

রাষ্ট্রপতি প্রথম অধিবেশনকে কেন্দ্র করে বলেন, আজকের এ আনন্দঘন মুহূর্তে আমি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অমর শহিদকে, যাদের অসীম সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি একটি সার্বভৌম দেশ ও স্বাধীন জাতিসত্তা, পবিত্র সংবিধান ও লাল-সবুজ পতাকা। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে যারা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এর বাইরে বাংলাদেশের এ পর্যন্ত যত অর্জন আছে সব অর্জনের পেছনে যারা শ্রম, ঘাম ও জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন রাষ্ট্রপতির ভাষণে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads