• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
সংসদে ‘সংরক্ষিত হিজড়া’ আসন চান তারা

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ

ছবি : সংরক্ষিত

সংসদ

সংসদে ‘সংরক্ষিত হিজড়া’ আসন চান তারা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মতো ‘সংরক্ষিত হিজড়া’ আসনের দাবি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের। সংরক্ষিত নারী আসন থেকে দুই একটা আসন কমিয়ে সে জায়গায় হিজড়াদের সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত করার দাবি তাদের। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিজড়াদের নারী আসনে নয় বিশেষ ক্যাটাগরিতে সংসদে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এ জন্য তাদের আরো দক্ষ হতে হবে। আইন কানুন সম্পর্কে জানতে হবে।

গুরু মা হিসেবে পরিচিত রাখী হিজড়া বলেন, আমরা নারী না। কেন আমরা সংরক্ষিত ‘নারী’ আসনে সংসদ সদস্য হব? আমি ‘সংরক্ষিত নারী’ নয়, ‘সংরক্ষিত হিজড়া’ আসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি জানাই।

রাখীর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। থাকেন মিরপুর-২ নম্বরে। রাখীর বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। রাখী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সবার উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমার অনুরোধ তিনি যেন আমাদের জন্য সংরক্ষিত হিজড়া আসনের ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মা। তিনি আমাদের জন্য যা কিছু করেছেন, আমাদের বাবা-মাও আমাদের জন্য তা করেননি। এমন দরদি মায়ের ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারব না। আশা করছি তিনি আমাদের দাবির দিকটা বিবেচনা করবেন। সারা জীবন হিজড়া সমাজ তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।

শুধু রাখী নয়, রাখীর মতো আরো অনেক হিজড়াই এমন দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সরকার চাইলে ৫০টি ‘নারী’ আসন থেকে কমিয়ে আমাদের একটি বা দুটি আসন দিতে পারেন। যে দুটি বা একটি আসন হিজড়াদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। ওই আসনে শুধু হিজড়াই মনোনয়ন কেনবে, হিজড়াই নির্বাচন করবে, হিজড়াই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবে।

অনেক হিজড়াই থাকেন রাখীর আশ্রয়ে। এক সময় রাখীও অন্যের আশ্রয়ে থাকতেন। রাখীর কাছে যারা থাকেন, তারা তাকে গুরু মা বলে জানেন। তাদের ভালোমন্দ দেখতে হয় রাখীকে। হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন রাখী। সারা দেশের হিজড়ারা রাখীকে আলাদা চোখে দেখেন।

রাখী জানান, তিনি ২০০৭ সাল থেকে হিজড়াদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ডিআইজি হাবিবুর রহমান, রি থিংক, উত্তরণ ফাউন্ডেশন- এদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি কাজ করছেন। সম্প্রতি তারা ঘোষণা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এলাকায় বাসে কালেকশন বন্ধ করেছেন।

রাখী বলেন, শুনেছি কয়েকজন হিজড়া সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন কিনেছেন। তারা কীভাবে মনোনয়ন কিনলেন এটা আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি নারী আসনে হিজড়াদের মনোনয়ন কেনা ঠিক হয়নি। নারী আসনে যারা মনোনয়ন কিনেছেন, তারা কখনোই হিজড়া কমিউনিটির উন্নয়নের জন্য কিছু করেননি- এমন দাবি করে রাখী বলেন, যদিও তারা কেউ মনোনয়ন পাননি। যদি তারা সংসদে যেতেন, তাহলে আমাদের কমিউনিটির বিশেষ কোনো উন্নয়ন হতো বলে আমার মনে হয় না। তারা করবেন নিজের জন্য। কমিউনিটির কথা ভাবলে তারা কখনোই হিজড়া হয়ে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন কিনতে পারতেন না।

কথা হয় বকুল, রাশিদা, সিমলা ও কচি হিজড়ার সঙ্গে। তারা বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের হিজড়া লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ভোটাধিকার দিয়েছেন।

বকুল হিজড়া বলেন, আমরা সবচেয়ে বঞ্চিত। কোনো দিন সন্তানের মুখ দেখতে পারব না। সংসারের ভাগ্য নেই। এখনো অনেকেই আমাদের সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না। যেখানে আমাদের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ডিআইজি হাবিবুর রহমান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কাজ করছে, সেখানে অনেক মানুষই মানসিকভাবে আমাদের মানতে পারছেন না। রাখীসহ আমরা চেষ্টা করছি আমাদের কমিউনিটিতে পরিবর্তন আনার। আমাদের যদি উন্নয়ন হয়, তাহলে মানুষও আমাদের সহজভাবে মেনে নেবেন। চেষ্টা করছি আমাদের জীবনমান উন্নয়নের। সরকারও আমাদের সবদিক থেকে সহযোগিতা করছে। আশা করছি এ বিষয়েও আমাদের প্রতি সরকারের সুনজর থাকবে।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদিউল আলম বলেন, যদি তাদের সংসদে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে নারী আসনে নয় বিশেষ ক্যাটাগরিতে তাদের দেওয়া যেতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার মনে করেন, হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের আরো অনেক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, হিজড়াদের প্রতি আমার যথেষ্ট সহানুভূতি আছে। পার্লামেন্টে বসাতে হলে তাদের তো সেইভাবে দক্ষ হতে হবে। আইন কানুন সম্পর্কে জানতে হবে। প্রথমত, তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। কেননা, সংসদ হচ্ছে এমন একটি স্থান যেখান থেকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads