• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯
হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাতের খোঁজে

কদরের রাত সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ

সংরক্ষিত ছবি

ধর্ম

হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাতের খোঁজে

  • মিরাজ রহমান
  • প্রকাশিত ০৬ জুন ২০১৮

একদিন রসুল (সা.) বনি ইসরাইলের শামউন নামক একজন আবিদ ব্যক্তির দীর্ঘকালের কঠোর সাধনা সম্পর্কে বলছিলেন। সেই ব্যক্তি এক হাজার মাস লাগাতার দিনে সিয়াম ও জিহাদে রত থাকতেন এবং সারা রাত জেগে থেকে আল্লাহর ইবাদত করতেন। উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর এই নেক বান্দার কঠোর সাধনার কথা শুনে বলতে লাগলেন, হায়! আমরাও যদি ওই ব্যক্তির মতো দীর্ঘায়ু পেতাম, তাহলে আমরাও ওই রকম ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে দিবস-রজনী অতিবাহিত করতে পারতাম। এমন সময় সুরা কদর নাজিল হয়। ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্পর্কে তুমি কী জানো? কদরের রাত সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেরাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত (সুরা কদর, আয়াত ১-৫)। শবেকদরের যাবতীয় কাজের ইঙ্গিত দিয়ে এ রাতের অপার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) এক মুবারকময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয় (সুরা আদ-দুখান, আয়াত ১-৪)। কদরের রাতে অজস্র ধারায় আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। এ রাতে অধিকসংখ্যক রহমতের ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং সকাল পর্যন্ত এক অনন্য শান্তি বিরাজ করতে থাকে। হাদিসে এসেছে, শবেকদরে হজরত জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট এক দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে, তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন (মাজহারি)। লাইলাতুল কদরে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, বৃষ্টি ইত্যাদির পরিমাণ লিখে দেওয়া হয়, এমনকি এ বছর কে হজ করবে, তা-ও লিখে দেওয়া হয়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী চারজন প্রধান ফেরেশতাকে এসব কাজে সোপর্দ করা হয়। যথাক্রমে তাঁরা হলেন হজরত ইসরাফিল (আ.), হজরত মিকাইল (আ.), হজরত আজরাইল (আ.) ও হজরত জিবরাইল (আ.) (তাফসিরে মারেফুল কোরআন)।

সহস্র মাস ইবাদতে যে সওয়াব হয়, কদরের এক রাতের ইবাদতে তার চেয়েও বেশি সাওয়াব পাওয়া যায় বা অর্জিত হয়। রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এ রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে আত্মসমর্পিত হূদয় নিয়ে ইবাদতে কাটাবে, আল্লাহ তার ইজ্জত ও মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন। রসুল (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে শবেকদর খোঁজ করো (বোখারি ও মুসলিম)। তিনি আরো বলেছেন, মাহে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তোমরা শবেকদর সন্ধান করো (বোখারি)। সুতরাং এ রাতে তারাবি-তাহাজ্জুদসহ নফল নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, দোয়া এবং পাপমোচনে বিনীতভাবে ক্ষমা প্রার্থনায় নিয়োজিত হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads