• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
হজের প্রকারভেদ

মিকাত থেকে শুধু ওমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা

সংরক্ষিত ছবি

ধর্ম

হজের প্রকারভেদ

  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০১৮

মুফতি মুনিরুল ইসলাম

হজ প্রধানত তিন ধরনের-  এক. তামাত্তু, দুই. কিরান ও  তিন. ইফরাদ।

১. তামাত্তু : হজের মাসে পৃথকভাবে প্রথমে ওমরা ও পরে হজ আদায় করাকে তামাত্তু হজ বলে। হজযাত্রীরা হজের মাসে প্রথমে শুধু ওমরার জন্য তালবিয়া পাঠের মাধ্যমে ইহরাম বাঁধবেন। তারপর তাওয়াফ ও সায়ি সম্পন্ন করে মাথা মুণ্ডন অথবা চুল ছোট করার মাধ্যমে ওমরা থেকে হালাল হয়ে যাবেন এবং স্বাভাবিক কাপড় পরে নেবেন। তারপর জিলহজ মাসের ৮ তারিখে মিনা যাওয়ার আগে নিজ অবস্থানস্থল থেকে হজের ইহরাম বাঁধবেন। তামাত্তু হজ তিনভাবে আদায় করা যায় : ক. মিকাত থেকে ওমরার ইহরাম বেঁধে মক্কায় গিয়ে তাওয়াফ-সায়ি করে মাথা মুণ্ডন অথবা চুল ছোট করে হালাল হয়ে যাওয়া এবং হজ পর্যন্ত মক্কাতেই অবস্থান করা। ৮ জিলহজ হজের ইহরাম বেঁধে হজের কার্যক্রম সম্পন্ন করা। খ. মিকাত থেকে ওমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কা গমন করা। ওমরার কার্যক্রম তথা তাওয়াফ, সায়ি করার পর হলক-কসর সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাওয়া। হজের আগেই জিয়ারতে মদিনা সেরে নেওয়া এবং মদিনা থেকে মক্কায় আসার পথে জুল-হুলাইফা বা আবইয়ারে আলি থেকে ওমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কায় আসা। অতঃপর ওমরা আদায় করে হলক-কসর করে হালাল হয়ে যাওয়া; তারপর ৮ জিলহজ হজের জন্য নতুনভাবে ইহরাম বেঁধে হজ আদায় করা। গ. ইহরাম না বেঁধে সরাসরি মদিনা গমন করা। জিয়ারতে মদিনা শেষ করে মক্কায় আসার পথে জুল-হুলাইফা বা আবইয়ারে আলি থেকে ওমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা অতঃপর মক্কায় এসে তাওয়াফ, সায়ি ও হলক-কসর করে হালাল হয়ে যাওয়া। এরপর ৮ জিলহজ হজের ইহরাম বাঁধা।

২. কিরান : ওমরার সঙ্গে যুক্ত করে একই সফরে ও একই ইহরামে ওমরা ও হজ আদায় করাকে কিরান হজ বলে। কিরান হজ দুইভাবে আদায় করা যায়- ক. মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধার সময় একই সঙ্গে হজ ও ওমরার ইহরাম বাঁধার জন্য (লাববাইকা ওমরাতান ওয়া হজ্জান) বলে তালবিয়া পাঠ শুরু করা। খ. মিকাত থেকে শুধু ওমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা। পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর ওমরার তাওয়াফ শুরু করার আগে হজের নিয়ত ওমরার সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়া। ওমরার তাওয়াফ-সায়ি শেষ করে ইহরাম অবস্থায় হজের অপেক্ষায় থাকা এবং ৮ জিলহজ ইহরামসহ মিনায় গমন ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পাদন করা।

৩. ইফরাদ : হজের মাসে শুধু হজের ইহরাম বেঁধে হজের কার্যক্রম সম্পন্ন করাকে ইফরাদ হজ বলে। হজের মাসে ওমরা না করে শুধু হজ করাকে ইফরাদ হজ বলে। হজের মাসে শুধু হজের ইহরাম বাঁধার জন্য (লাব্বাইকা হজ্জান) বলে তালবিয়া পাঠ শুরু করা। এরপর মক্কায় প্রবেশ করে তাওয়াফে কুদুম অর্থাৎ আগমনী তাওয়াফ এবং হজের জন্য সায়ি করা। অতঃপর ১০ জিলহজ কোরবানির দিন হালাল হওয়ার আগপর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকা। এরপর হজের অবশিষ্ট কাজগুলো সম্পাদন করা। তাওয়াফে কুদুমের পর হজের সায়িকে তাওয়াফে ইফাজা অর্থাৎ ফরজ তাওয়াফের পর পর্যন্ত দেরি করা জায়েজ আছে।

বদলি হজ : যদি কোনো ব্যক্তি ফরজ হজ আদায় করতে অক্ষম হন, তাহলে তার পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে অন্য কোনো ব্যক্তির হজ পালনকে বদলি হজ বলা হয়। আবু রাজিন আল আকিলি থেকে বর্ণিত, তিনি এসে রসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করে বললেন, আমার পিতা খুব বৃদ্ধ, তিনি হজ ও ওমরা পালন করতে পারেন না। সওয়ারির ওপর উঠে চলতেও পারেন না। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ ও ওমরা করো। হজের নিয়ম এক হলেও বদলি হজ সংক্রান্ত কিছু বিষয় এমন আছে, যা বদলি হজে প্রেরণকারী ও প্রেরিত উভয়েরই জানা থাকা জরুরি। বর্তমান নিবন্ধে ওই মাসালাগুলোই উল্লেখ করা হয়েছে। যার ওপর হজ ফরজ হয়েছে এবং হজ আদায়ের শারীরিক সক্ষমতাও আছে, তার নিজে হজ করা জরুরি। এক্ষেত্রে অন্যকে দিয়ে বদলি হজ করানো জায়েজ নয়। বদলি করালে এর দ্বারা তার ফরজ হজ আদায় হবে না। (হিদায়া ১/২৯৬; আলবাহরুল আমিক ৪/২২৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৪) যার ওপর হজ ফরজ হয়েছে এবং হজ আদায়ের সক্ষমতাও ছিল কিন্তু শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ করেননি। অতঃপর হজ আদায়ের সক্ষমতা হারিয়ে মাজুর হয়ে পড়েছে এমন ব্যক্তির ওপর ফরজ নিজের পক্ষ থেকে বদলি হজ করানো অথবা মৃত্যুর সময় তার পক্ষ থেকে বদলি হজ করানোর অসিয়ত করে যাওয়া। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বলেন, বিদায় হজে খাসআম গোত্রের একজন নারী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! আমার বাবার ওপর হজ ফরজ হয়েছে কিন্তু তিনি এত বৃদ্ধ যে, বাহনের ওপর স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেন না। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারব?’ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ (তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারবে)।’ (সহিহ বুখারি ১/২০৫; সহিহ মুসলিম ১/৪৩১)

লেখক : শিক্ষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads