• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
সত্যের মাপকাঠি কী

আচার-আচরণ আর শিষ্টাচারই বলে দেবে দলের অধিপতির পরিচয়

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

সত্যের মাপকাঠি কী

  • প্রকাশিত ২৬ অক্টোবর ২০১৮

আহমদ আবদুল্লাহ

সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে, পরিবার কিংবা ব্যক্তিগত কোনো কাজে, যে কোনো ক্ষেত্রে সত্য যাচাই করার জন্য মূলনীতি জানা একটি জরুরি বিষয়। আমাদের চারপাশ, বিভিন্ন মহলে, সাধারণ জনগণের কাছে একটাই চাওয়া- কাকে মানবো সত্যের মাপকাঠি? কার মাধ্যমে পাব দ্বীনের দিশা, পাব সত্যের পয়গাম। কার ছায়ায় মিলবে চিরস্থায়ী জান্নাতের সুঘ্রাণ? কোথায় আছে চিন্তার খোরাক? আছে মহান রাব্বুল আলামিনের সন্ধান। নিজেকে উৎসর্গ করতে পারব একদম নির্বিঘ্নে, দ্বিধাহীনভাবে পূর্ণরূপ ভুলে গিয়ে। মনকে উজাড় করে, হূদয়ের সর্বস্ব ঢেলে।

সম্প্রতি সবার মনে এমন এক প্রশ্ন প্রায়ই ঘুরপাক খাচ্ছে। সর্বত্র দেখা যায় দলাদলি, মারামারি, হানাহানি, হাঙ্গামা আর বিতর্কের কালো ছায়া। হোক তা রাজনৈতিক দল বা ইসলামিক সংস্থা অথবা উভয়টির সমন্বয়ে কোনো দল কিংবা অরাজনৈতিক কোনো সংগঠন। আমাদের সবারই অভিপ্রায় পরকাল জান্নাত। একজন মুমিন হিসেবে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হওয়া। স্বীয় জীবন সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অনুধাবন করা। এ জন্য সর্বপ্রথম দেখতে হবে প্রতিটি দল বা সংগঠনের ভক্তদের, যারা প্রভাবিত হয়েছে ওই দলের। তাদের কর্মকাণ্ড, চলাফেরা, ভাবভঙ্গি, ওঠাবসা এবং কথাবার্তা। সংগঠনের ভক্তদের আচার-আচরণ আর শিষ্টাচারই বলে দেবে দলের অধিপতির পরিচয়। তিনি ন্যায়ের পথে নাকি ভ্রান্ত পথের পথিক। ওই দলের কার্যাদি শরিয়ত সম্মত কি-না? ভক্তদের ভাবভঙ্গির মাধ্যমেই দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে উঠবে আপনার কাছে। তাই কোনো দল যাচাই করার জন্য সত্যিকার অর্থে ভক্তদের দিকে দেখুন। উত্তর পেয়ে যাবেন। প্রথম যুগে সাহাবায়ে কেরামের মজলিস ছিল, আল্লাহর আরাধনা সংবলিত। সত্যের আলোচনা ও উপাসনা প্রেরণা পাওয়ার মূল ক্ষেত্র। রবের স্মরণে ক্রন্দন এবং রাব্বুল আলামিনের প্রশংসনীয় কথাবার্তা। জুতার সামান্য ফিতা ছিঁড়ে গেলে নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছেই ছিল প্রথম চাওয়া। ঝড়ঝাপ্টা বা ভূমিকম্প হলে রবের স্মরণে মগ্ন হয়ে পড়তেন তৎক্ষণাৎ। পক্ষান্তরে বর্তমান সময়ে কোনো দলের ভক্তরা একত্র হলে শুরু হয় পরনিন্দার মহড়া। চারদিক শোরগোল। অন্যান্য দলের কুৎসা রটানোর সঙ্গে আমিরদের নিয়ে হেয় বাক্য। সবার মুখে উচ্চারিত নিজ নেতার বাহ বাহ ধ্বনি। প্রশংসনীয় সংলাপ, স্বীয় আমিরের গুণগান। সর্বত্র শুধুই আপন দলের সুনাম।

পরিতাপের বিষয়, আজকাল স্বয়ং নেতাদেরও খুব কুরুচিপূর্ণ আলোচনা প্রকাশিত হচ্ছে। নিজ সংগঠনকে বিকশিত করার জন্য অন্যের পরনিন্দা কি খুব প্রয়োজন? অন্যের সমালোচনা কি জরুরি? আমার বোধ বলে, একদমই না। অন্য দলের বদনাম গেয়ে সামনে এগোবার পথকে রুদ্ধ করা হয়। বিকশিত করার দ্বারা চিরতরে আবদ্ধ করার নামান্তর। আলেম সমাজ, সাধারণ জনগণের কাছে ঘৃণিত পথ হিসেবে বিবেচিত হয়। ইতিহাস সাক্ষী। উদাহরণ এখানে নিষ্প্রয়োজন। চাই দলটি রাজনৈতিক হোক বা অরাজনৈতিক কিংবা উভয়ের সমন্বয়ে কোনো সংগঠন।  বর্তমান সময়ে বড় বড় ইসলামী দল থাকা সত্ত্বেও যদি দ্বীন বুলন্দ না হয়, তাহলে বিন্দুমাত্র বিচলিত নই। কারণ আল্লাহর সাহায্য আল্লাহর নেক বান্দা আর রাব্বুল আলামিনের মূল দ্বীনের ওপরই আসবে। নিজেদের বানানো দ্বীনের ওপর কখনো নয়। পরিশেষে বলব, সত্যকে যাচাই করার জন্য আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বা অতীন্দ্রিয় সবসময় সর্বক্ষেত্রে খোলা রাখতে হবে। চেতনাবোধ হতে হবে নিয়ন্ত্রিত। সত্য পথ যতটা কণ্টক, ঠিক ততটাই মিষ্ট।

লেখক : শিক্ষক, রসুলপুর জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসা, ঢাকা 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads