• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

বিশ্বনবী (সা.)-কে অবমাননাকারী এক কাফেরের ভয়ঙ্কর পরিণতি

  • ফিচার ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৬ নভেম্বর ২০২০

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে দুশমনি করে অনেকেই ক্ষমা পেয়েছেন কিন্তু তাকে অবমাননা বা অপমান করার ফলে যারা বদদোয়ার শিকার হয়েছেন, তাদের অনিবার্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলো ওতাইবা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচা ছিল আবু লাহাব। তার দুই ছেলের মধ্যে একজন ছিল ওতাইবা। সে কাফের ছিল। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অপমান ও অবমাননা করে। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বদদোয়া করেন।

আবু লাহাবের পুত্র ওতাইবা একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল— ‘ওয়ান নাজমে ইযা হাওয়া এবং ছুম্মা দানা ফাতাদাল্লা’ (কোরআনের আয়াতের) সঙ্গে আমি কুফরি করছি। সুরা নাজমের এ দুটি আয়াতের অর্থ হচ্ছে, ‘শপথ নক্ষত্রের, যখন তা অস্তমিত হয়। অতঃপর সে তার কাছাকাছি হলো অতি নিকটে।’ তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর কুখ্যাত ওতাইবা অত্যাচার শুরু করে দেয়। নবীজির জামা ধরে টেনে তা ছিঁড়ে ফেলে এবং তাঁর পবিত্র চেহারায় থুথু নিক্ষেপ করে। কিন্তু ওতাইবার থুথু বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারায় পড়েনি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য বদদোয়া করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই বদদোয়া আল্লাহতাআলা কবুল করে নেন। নবীজির বদদোয়া হলো—‘হে আল্লাহ! ওর (ওতাইবা) ওপর তোমার কুকুরসমূহের মধ্যে থেকে একটি কুকুর লেলিয়ে দাও।’ বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই বদদোয়ার কারণে ওতাইবার খুব ভয়ঙ্কর পরিণতি হয়। সে চিরতরে ধ্বংস হয়ে যায়।

একবার কুরাইশ বংশের কয়েকজন লোকের সঙ্গে এক সফরে ওতাইবা সিরিয়া যাচ্ছিল। ‘যারকা’ নামক স্থানে তারা রাত যাপনের জন্য তাঁবু স্থাপন করে। সে সময় একটি বাঘ তাদের চারপাশে ঘোরাফেরা করতে থাকে। বাঘের ঘোরাফেরা দেখে ওতাইবা নিজের ধ্বংসের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বদদোয়ার কথা তার স্মরণ হয়ে গেল। ওতাইবা বলল, ‘আল্লাহর শপথ! এই বাঘ আমাকে খাবে। হায়রে, আমার ধ্বংস অনিবার্য। হজরত মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বদদোয়া করেছিল। তখন ওতাইবা আরো বলছিল, দেখ! আমি সিরিয়ায় অবস্থান করছি। অথচ মক্কায় বসেই আমাকে মেরে ফেলছেন।

কুরাইশদের কাফেররাও জানত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বদদোয়া কখনো বিফলে যায় না। তাই তারা সবাই মিলে ওতাইবাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করল। ‘যারকা’ নামক স্থানে অবস্থানকারী তার সব সফরসঙ্গীই তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। সতর্কতা হিসেবে তারা নিজেদের মালামাল ও জিনিসপত্র দিয়ে উঁচু একটি ঢিবি বানিয়ে নেয়। ওতাইবাকে তারা সেই মালামাল ও জিনিসপত্রের ঢিবির ওপর থাকার ব্যবস্থা করে। নিজেরা সেই ঢিবির চারপাশে শুয়ে পড়ে। ওতাইবার সফরসঙ্গীদের সব সতর্কতাই বিফলে যায়। এতসব সতর্কতার পরও রাতে যথাসময়ে বাঘ এসে উপস্থিত হয়। সবাইকে অতিক্রম করে বাঘ মালামাল ও জিনিসপত্রের ঢিবির ওপর অবস্থানকারী ওতাইবার কাছে চলে যায়। তার ঘাড় মটকিয়ে তাকে মেরে ফেলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননা ও অপমানকারী ওতাইবা বদদোয়ার করুণ পরিণতির শিকার হয়ে মারা যায়। (আর রাহিকুল মাখতুম)

ইসলামের নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুশমনি, অপমান ও অবমাননা করে কেউ রক্ষা পায়নি। যতবড় ক্ষমতাধরই হোক না কেন, ক্ষমা পাবে না। যারাই বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অপমান বা অবমাননা করবে, দুনিয়া কিংবা পরকালে এর ভয়ঙ্কর পরিণতি তাকে ভোগ করতেই হবে। ইসলামের বিরোধিতা কিংবা মহানবী হজরত মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে অপমানকর, অবমাননা কিংবা ব্যঙ্গচিত্র ছাপানোর মতো ধৃষ্টতা মহান আল্লাহ সহ্য করবেন না।

যেমনিভাবে যুগে যুগে অবিশ্বাসী ও অত্যাচারীরা এর পরিণতি ভোগ করেছে। আল্লাহতাআলা দুনিয়ার সবাইকে সহিহ বুঝ দান করুন। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপমান, অবমাননা এবং ইসলামের বিরোধিতা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads