• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

ঈমান মানুষকে সঠিক পথ দেখায়

  • প্রকাশিত ০৯ নভেম্বর ২০২০

মুহাম্মদ ইমাম হাসান

 

 

 

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। এক. আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয় মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল- এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া। দুই. সালাত কায়েম করা। তিন. জাকাত দেওয়া। চার হজ করা। পাঁচ. রমজানের রোজা রাখা। (বুখারি, মুসলিম)। ইসলামের সর্বপ্রথম ভিত্তি হলো ঈমান। ঈমান মুমিনের নুর। ঈমান মুসলমানের শক্তি। এ নুর বা শক্তিই মানুষকে দুনিয়ার সব অনুকূল কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সঠিক পথে চলতে সহায়তা করে। ঈমানের নুরেই আলোকিত হয় মুমিন। ঈমান হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে বিলিয়ে দেয়। কোরআন-সুন্নায় ঈমান ও মুমিন সম্পর্কে রয়েছে অনেক চমৎকার ও উৎসাহ-উদ্দীপনামূলক আলোচনা, যে আলোচনায় মুমিন খুঁজে পায় জীবনের সঠিক ও কাঙ্ক্ষিত ঠিকানা। যে আল্লাহ আসমান এবং জমিনের একচ্ছত্র অধিপতি, মহান আরশের মালিক, পরম দয়ালু অসীম করুণাময়; সেই রাব্বুল আলামিন আল্লাহকে প্রভু বলে বিশ্বাস ও স্বীকার করাই ঈমান। একমাত্র রব হিসেবে শুধু আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা প্রতিটি মানুষের জন্য ফরজ তথা আবশ্যক। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর প্রতি ঈমানের নুরে আলোকিত হয়ে পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করবে ওই ব্যক্তিই মুমিন হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।

বিশ্বনবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তুমি (যদি মুমিন হতে চাও, তবে) আল্লাহতায়ালা, তাঁর ফেরেশতাগণ, আসমানি কিতাবসমূহ, রাসুলগণ, শেষ দিবসের প্রতি (আখিরাত) এবং ভাগ্যের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে।’ (মুসলিম)। এ হাদিসের আলোকে ঈমানের সংজ্ঞা দাঁড়ায়, উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের কথা- মুখে ঘোষণা দেওয়া, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং বাস্তবে অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাধ্যমে সম্পাদন করা। আর এ কথা মনে রাখা যে, আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্যের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং আল্লাহর বিধানের অবাধ্যতায় ঈমান হ্রাস পায়। যারাই ঈমান আনে তারা হয় মুমিন। কোরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন (তাদের সামনে) আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কোরআন; তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় প্রভুর প্রতি ভরসা পোষণ করে। (তারা) সে সব লোক; যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদের যে রুজি দেওয়া হয়েছে তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ২-৩)।

মুমিনের ঈমানের পাওয়ার এত বেশি যে, কোনো মুমিন যখন পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী হয় তখন কোনো গোনহের কাজে সে লিপ্ত হয় না। হাদিসের ঘোষণায় এটি প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ব্যভিচারী : পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে না। চোর : পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় চুরি করতে পারে না। মদ পানকারী : পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় মদপান করতে পারে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)। যে সত্যিকারের মুমিন সে কোনো গোনাহের কাজে জড়িত হতে পারে না। যখন মানুষের ঈমানের দুর্বলতা প্রকাশ পায় বা ঈমান দুর্বল হয়ে যায় তখনই মানুষ এ গোনাহের কাজগুলোতে লিপ্ত হতে পারে। মুমিন মুসলমানের উচিত, পরিপূর্ণ ঈমানের আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে কোরআন-সুন্নায় ঘোষিত বিষয়- আল্লাহ, ফেরেশতা, কিতাব, রাসুল, শেষ দিবস, ভাগ্যে ভালো-মন্দের ওপর যথাযথ ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহকে ভয় করা। কোরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়নের মাধ্যমে ঈমানকে বাড়িয়ে তোলা। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘হে লোকেরা, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদাত কর, যিনি তোমাদের এবং তোমাদের আগের লোকদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা পরহেজগার বা আল্লাহভীরু হতে পার। সেই পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা, আকাশকে ছাদস্বরূপ স্থাপন করেছেন। আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণের মাধ্যমে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসেবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২১-২২)। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (প্রত্যেকেই) নিজ নিজ ঈমানকে তাজা করতে থাক। সাহাবাদের কেউ কেউ আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা কীভাবে নিজ নিজ ঈমান তাজা করব? তিনি বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর জিকির বেশি বেশি করতে থাক।’ (মুসনাদে আহমদ)।

ঈমান তাজা রাখতে এবং সর্বোপরি ঈমানি মৃত্যু লাভে মহান আল্লাহর কাছে এভাবে বেশি প্রার্থনা করা, ‘রাব্বানা ইন্নানা সামিনা মুনাদিআই ইউনাদি লিল ঈমানি আন আমিনু বিরাব্বিকুম ফাআমান্না; রাব্বানা ফাগ্ফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সাইয়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফ্ ফানা মাআল আবরার।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৩)। অর্থ : হে আমাদের প্রভু, আমরা ঈমান আনার জন্য একজন আহ্বানকারীকে আহ্বান করতে শুনে ঈমান গ্রহণ করেছি। হে আমাদের পালনকর্তা, তুমি আমাদের সব গোনাহ মাফ করে দাও। আমাদের সব দোষ-ত্রুটি দূর করে দাও। আর নেককার লোকদের সাথে আমাদের মৃত্যু দাও।’

 

লেখক : ইমাম ও খতিব, টুটালিয়াপাড়া জামে মসজিদ, সাভার, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads