• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মোহাম্মদ (সা.)

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মোহাম্মদ (সা.)

  • প্রকাশিত ১১ নভেম্বর ২০২০

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও সর্বশেষ নবী হজরত  মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি হলেন শান্তির বাহক। তিনি শান্তি নিয়ে এসেছেন পৃথিবীতে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মানবজাতির জন্য অনুকরণীয়। আর নবীজির অনুসরণ-অনুকরণেই রয়েছে আল্লাহর ভালোবাসা। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, (হে রাসুল!) আপনি বলে দিন, যদি তোমরা প্রকৃতই আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো, তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল দয়ালু। (সুরা ইমরান-৩১)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণেই রয়েছে মানবজাতির মুক্তি। একমাত্র নবীজির আদশের মাঝেই রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শই সর্বোত্তম আদর্শ। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সুরা আজহাব আয়াত-২১)। শুধু তাই নয়, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই হলেন দুনিয়ার বুকে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা গ্যারান্টি দিয়ে  কোরআনুল কারীমে ঘোষণা করেন, ‘নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্যের ক্ষেত্রে কল্পনাও করা যায় না। তম্মধ্যে বিশেষ ৫টি এমন বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার অধিকারী ছিলেন তিনি, যা পূর্বের কোনো নবী-রাসুলদেরও ছিল না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য এ বৈশিষ্ট্যগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ উপহার। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ইরশাদ করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস দান করা হয়েছে, যা আমার আগে অন্য কোনো নবীদের দেওয়া হয়নি। তা হলো-এক. আমাকে এমন প্রভাব (প্রখর ব্যক্তিত্ব) দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে, যা এক মাসের দূরত্ব পর্যন্ত অনুভূত হয়। দুই. পুরো জমিনকে আমার জন্য নামাজ আদায়ের স্থান এবং পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। সুতরাং আমার উম্মতের যে কেউ যেখানে ইচ্ছা নামাজের সময় হলে, যেন ( সেখানেই) নামাজ পড়ে নেয়। তিন. আমার জন্য (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) গনিমত বৈধ করা হয়েছে, যা এর আগে কারো জন্য হালাল ছিল না। চার. আমাকে (ব্যাপক) সুপারিশের অধিকার দেওয়া হয়েছে। পাঁচ. আমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য (রহমতস্বরূপ) পাঠানো হয়েছে, যেখানে আগের সব নবীকে তাঁদের স্বজাতি ও গোত্রের জন্য পাঠানো হয়েছিল।’ (বুখারি)

তবে আগের নবী-রাসুলগণ ছিলেন নিজ নিজ গোত্র ও জাতির জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। তাদের আদর্শ অনুসরণ ও অনুকরণকারীরাও মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহতায়ালা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাদের পথের অনুসরণ ও অনুকরণের উপদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন। ফলে আপনি তাদের পথের অনুসরণ করুন।’ (সুরা আনআম-৯০)।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশেষ ৫ বৈশিষ্ট্যের একটু বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো-

এক. বিশেষ ক্ষমতা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহপাক এমন শক্তি দান করেছেন, মুমিনরা তার সান্নিধ্যে আসলে প্রশান্তি লাভ করতেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করল। তাদের অন্তরে যা ছিল তিনি তা অবগত ছিলেন। তাদের তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদের পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়।’ (সুরা ফাতাহ-১৮)। এর বিপরীতে তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন একটি বিশেষ সাহায্য লাভ করেছিলেন, যার ফলে ইসলামের শত্রুরা তাঁর মুখোমুখি হওয়াকে চরম ভয় করত। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি অবিশ্বাসীদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করব, যেহেতু তারা আল্লাহর সঙ্গে শরিক করেছে, যার স্বপক্ষে আল্লাহ কোনো সনদ পাঠাননি।’ (সুরা আল-ইমরান-১৫১)

দুই. সব জায়গায় ইবাদত

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানে উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য আল্লাহতায়ালা পুরো পৃথিবীকে ইবাদত করার স্থান বানিয়ে দিয়েছেন। আবার এই পৃথিবীর সব মাটিকে উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম করেছেন। মুসলমানরা পৃথিবীর যেখানে ইচ্ছা নামাজ আদায় করতে পারবেন। পানি না পেলে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করেও নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করতে পারবে তারা। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘তোমরা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করো; তা দিয়ে তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও দুই হাত মাসাহ করো।’ (সুরা মায়েদা-৬)

তিন. গনিমতের মালের বৈধতা

আল্লাহতায়ালা উম্মতে মোহাম্মদীকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ তথা গনিমতের মাল ভোগ করার অধিকার দিয়েছেন। যাতে রয়েছে মানুষের জীবন-জীবিকার প্রশান্তি। এ সম্পদ গ্রহণের কারণে যুদ্ধে অংশগ্রহণের সওয়াব বা প্রতিদানের কোনো কমতি করা হবে না। আর এসব গনিমতের মাল পূর্বের কোনো নবী-রাসুলদের উম্মতের জন্য তা বৈধ ছিল না।

চার. সুপারিশের অধিকার

হাশরের কঠিন ময়দানে যখন কেউ কাউকে চিনবে না। আপনজন দেখলে দৌড়ে পালাবে। তখন কোনো নবী-রাসুলও কারো ব্যাপারে সুপারিশ করতে পারবে না। সেই কঠিন মুহূর্তে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য সুপারিশ লাভের অধিকার পাবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেয়ামতের দিন সব সৃষ্টির জন্য সুপারিশ করবেন এবং একাজের মাধ্যমে তিনি প্রতিশ্রুত ‘মাকামে মাহমুদ’ (সম্মানিত স্থান) অর্জন করবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক নবীর জন্য বিশেষ একটি দোয়ার অধিকার আছে, যা কবুল করা হবে। প্রত্যেক নবীই তাঁর দোয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করেছেন (দুনিয়াতেই তা চেয়েছেন)। আর আমি আমার সে দোয়া কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের শাফায়াতের জন্য মুলতবি রেখেছি। আমার উম্মতের যে ব্যক্তি শিরক না করে মারা যাবে, ইনশাআল্লাহ! সে তা লাভ করবে।’ (বুখারি)

পাঁচ. বিশ্ববাসীর জন্য রহমত

আল্লাহতায়ালা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত বানিয়ে পাঠিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া-১০৭)। তিনি শুধু রহমত হিসেবেই পৃথিবীতে আসেননি; বরং তিনি বিশ্ববাসীর জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীও ছিলেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তা জানে না।’ (সুরা সাবা-২৮)। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এসব মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য পৃথিবীর বুকে অন্য কাউকে দেওয়া হয়নি এবং কিয়ামত পর্যন্তও কাউকে দেওয়া হবে না। আল্লাহপাক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বোচ্চ গুণাবলি দিয়ে প্রেরণ করেছেন। তিনিই হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব।

আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব নবীর সেরা। আকাইদে নসফিতে বলা হয়েছে, নবীদের মধ্যে সেরা হলেন হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে পাকে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা সব নবীর ওপর আমাকে মর্যাদা দিয়েছেন এবং সব উম্মতের ওপর আমার উম্মতকে মর্যাদা দিয়েছেন। (তিরমিযি)। মহানবী হযরত  মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবীদেরও সেরা এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। আর মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতরাও অন্য নবীদের উম্মতের চেয়ে সেরা।  কোরআনুল কারীমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে।’ (সুরা আলে ইমরান-১১০)। সর্বোত্তম উম্মত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছে দিনের ক্ষেত্রে পূর্ণতার কারণে। আর দিনের ক্ষেত্রে পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ণতা তথা শ্রেষ্ঠত্বের কারণে।

লেখক: মুহাম্মদ ইমাম হাসান

ইমাম ও খতিব

টুটালিয়াপাড়া জামে মসজিদ, সাভার, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads