• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯
যে মসজিদের গম্বুজ রুপা দিয়ে তৈরি

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

যে মসজিদের গম্বুজ রুপা দিয়ে তৈরি

  • প্রকাশিত ১১ নভেম্বর ২০২০

মসজিদের বড় গম্বুজটি তৈরি করা হয়েছে ১৩ মণ রুপা আর পিতল দিয়ে। গম্বুজটি নির্মিত হয়েছে মুঘল স্থাপত্যশৈলীতে। গম্বুজের চারপাশে লেখা রয়েছে রাসুল (সা.)সহ আহলে বায়াত ও দুনিয়ায় জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া ১০ সাহাবির নাম। ইসলামের প্রবেশদ্বারখ্যাত চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার ওয়ার্ডের সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কের চন্দনপুরার হামিদিয়া তাজ মসজিদের চিত্র এটি। এর আরো অনেক নাম আছে। এর মধ্যে মসজিদই সিরাজ-উদ-দৌলা, চন্দনপুরা বড় মসজিদ, তারা মসজিদ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এটি শতবর্ষী মসজিদ। চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ মসজিদ। চট্টগ্রামের পর্যটন সম্পর্কিত প্রকাশনাগুলোতে এ মসজিদের ছবি থাকায় বিদেশ থেকে প্রচুর পর্যটকও আসেন এখানে। তারা বিস্মিত হন নির্মাণশৈলী দেখে। মসজিদের সুউচ্চ মিনার, দেয়াল, দরজা-জানালা থেকে শুরু করে সব কিছুতে দৃষ্টিনন্দন সূক্ষ্ম কারুকাজ। প্রাকৃতিক আলোর খেলায় বর্ণিল রঙে রঙিন এসব কারুকাজ মুগ্ধ করে সবাইকে। অনেকের কাছে এ মসজিদ চন্দনপুরা বড় মসজিদ বা তাজ মসজিদ নামেও পরিচিত। এখন মসজিদটির বয়স ১৫০ বছর। চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্পের পরিচয় তুলে ধরতে মসজিদটির ছবি ব্যবহার করা হয় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রকাশনায়।

মসজিদের চারদিকে যেন রঙের মেলা। হরেক রঙ ব্যবহার করা হয়েছে স্থাপনার প্রতিটি অংশে। লতা-পাতার নকশা আর নানান কারুকাজে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সুনিপুণ হাতে। অনেক দূর থেকে দেখা যায় মসজিদটির বাহ্যিক সৌন্দর্য।

সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কের পশ্চিম পাশে মুঘল স্থাপনা শিল্পের আদলে ১৮৭০ সালে মাটি ও চুন সুরকির দেয়াল আর টিনের ছাদের মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন আবদুল হামিদ মাস্টার। তখনও মাটির দেয়ালে কারুকাজে ভরপুর ছিল। তার বংশধর ব্রিটিশ সরকারের ঠিকাদার আবু সৈয়দ দোভাষ ১৯৪৬ সালে এই মসজিদের সংস্কার কাজে হাত দেন। মসজিদের কারিগর ও নির্মাণসামগ্রী ভারত থেকে আনা হয়। এতে সেই সময়ে প্রায় পাঁচ লাখ টাকারও অধিক খরচ হয়। চারপাশের দেয়ালগুলো ভেন্টিলেশন সিস্টেমের। দেয়ালের ফাঁক গলে ঢুকছে আলো। আলোর ঝরনাধারায় ভেতরটা করছে ঝলমল, আছে বাতাসের কোমল পরশ। আবু সৈয়দ দোভাষ সেই সময়ে কলকাতা থেকে কারিগর ও দিল্লীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে উপকরণ এনে প্রায় ১৩ শতক জায়গার ওপর দোতলা মসজিদটি গড়ে তুলেন। মসজিদে রয়েছে ছোট-বড় ১৫টি গম্বুজ। প্রতিটি গম্বুজে যাওয়ার জন্য আছে সিঁড়ি। গম্বুজ ও সিঁড়িতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুঘল স্থাপত্য নিদর্শনের প্রতিচ্ছবি। যখন মাইকের ব্যবহার ছিল না, তখন ৪ তলা সমান উঁচু মিনারে উঠে আজান দেওয়া হতো। এরকম ২টি মিনার এখনো আছে।

এ মসজিদে রুপা-পিতলের প্রাচীন অনেক কারুকাজ ছিল। বৈরী আবহাওয়ায় এসব জিনিস যেমন নষ্ট হয়েছে তেমনি সংস্কারের সময়ও অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। মসজিদের মুতাওয়াল্লির মাধ্যমে জানা যায়, তাদের পূর্বপুরুষ আবদুল হামিদ মাস্টার যখন এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন তখন এটি ছিল মাটির ঘরের ওপর টিনের ছাউনির। তখনো এটি নকশা ও স্থাপত্যশৈলীতে অনন্য ছিল।

প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ এ মসজিদ দেখতে আসেন। অনেকে নামাজ পড়ার নিয়ত করে আসেন। অবাক বিস্ময়ে চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখেন। খুব ভালো লাগে। যখন মাইকের ব্যবহার ছিল না তখন চার তলা সমান উঁচু মিনারে উঠে আজান দেওয়া হতো। এ রকম দুইটি মিনার এখনো আছে। এ মসজিদটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে দেশি-বিদেশি মানুষ আসেন। আপনিও যেতে পারেন দেখতে। মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন-খাদেম নিযুক্ত রয়েছেন। আশপাশে অনেক নতুন মসজিদ রয়েছে। এরপরও এ মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণত দিনে গড়ে ৮ থেকে ৯শ’ লোক নামাজ পড়েন এ মসজিদে। শুক্রবারে হাজার তিনেক ছাড়িয়ে যায়। তখন মসজিদে জায়গা সংকুলন না হলে রাস্তা বন্ধ করে সেখানেই নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।

ইসলামী খবর ডেস্ক

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads