• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮
আল্লাহর দরবারে যাদের নামাজ কবুল হয় না

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

আল্লাহর দরবারে যাদের নামাজ কবুল হয় না

  • প্রকাশিত ১১ নভেম্বর ২০২০

নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ফরজ ইবাদত। আল্লাহতায়ালা মানুষের ওপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ বা আবশ্যক করেছেন। আর এ নামাজকে যথাসময়ে আদায় করাও আবশ্যক করেছেন। ঈমানের পরই নামাজের স্থান। ইসলামের পাঁচ ভিত্তির দ্বিতীয় ভিত্তি হলো নামাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। এক. আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই এবং নিশ্চয় মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল-এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া। দুই. সালাত কায়েম করা। তিন. যাকাত দেওয়া। চার. হজ্ব করা। পাঁচ. রমযানের রোজা রাখা। (বুখারি, মুসলিম)। নামাজের ব্যাপারে কোরআন-হাদিসে অনেক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অযথা বিনা কারণে নামাজ ছাড়া যাবে না। নামাজ তরককারীর জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। অযথা বিনা কারণে নামাজ ত্যাগ করাকে কুফরির সমতুল্য করা হয়েছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য সালাত পরিত্যাগ করা। (সহিহ মুসলিম হাদিস নং-১৪৯)।

সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা আল্লাহর হুকুম পালনে নামাজ আদায় করেন ঠিকই কিন্তু তাদের নামাজ আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। হাদিসে পাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রকম তিন শ্রেণির ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তিন ব্যক্তির নামাজ তাদের কান অতিক্রম করে না। এক. পলাতক ক্রীতদাস; যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। দুই. এমন স্ত্রী, যার স্বামী তার ওপর রাগ অবস্থায় রাত কাটিয়েছে এবং তিন. ওই ইমাম, যাকে লোকে অপছন্দ করে।’ (তিরমিযি)।

এছাড়া আরো অনেকের নামাজ কবুল না হওয়ার ব্যাপারে হাদিসে ধমকি এসেছে। নিজের জীবনের ভালো-মন্দ জানার আগ্রহ নিয়ে কোনো গণককে হাত দেখালেও ওই ব্যক্তির ৪০ দিনের নামাজ কবুল হয় না। আর যদি গণকের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে তবে ওই ব্যক্তি ঈমানহীন হয়ে যাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো গণকের কাছে গিয়ে কোনো (ভূত কিংবা ভবিষ্যৎ ভালো-মন্দ বা অদৃশ্য) বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তবে ওই ব্যক্তির ৪০ দিনের নামাজ কবুল হয় না।’ (মুসলিম)। অন্য হাদিসে আছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো গণক বা জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে তার দেওয়া তথ্যকে সত্য মনে (বিশ্বাস) করলো, ওই ব্যক্তি মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর অবতীর্ণ  কোরআনের প্রতি কুফরি করলো।’ (মুসনাদে আহমদ)।

কোনো মুসলমান যদি মদ পান করে তবে তারও ৪০ দিনের নামাজ কবুল হয় না বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। বিশ্বনবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি মদ পান করবে, আল্লাহ ওই ব্যক্তির ৪০ দিনের নামাজ কবুল করবেন না।’ (নাসাঈ)। যারা নামাজের হক আদায় করে না। নামাজ পড়ার সময় যারা নামাজের প্রতিটি রোকন তথা রুকু-সেজদা যথাযথ আদায় করে না, তাদের নামাজও কবুল হয় না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে মুসলিমরা! ওই ব্যক্তির নামাজ হয় না; যে ব্যক্তি রুকু ও সেজদায় নিজেদের পিঠ সোজা করে না।’ (মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ ওই বান্দার নামাজের দিকে তাকিয়েও দেখেন না, যে রুকু ও সেজদার সময় নিজেদের পিঠকে (রুকু-সেজদা থেকে ওঠে) সোজা করে না।’ (মুসনাদে আহমদ)। যে ব্যক্তি আজান শোনার পর বিনা ওজরে মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ আদায় করে না, তার নামাজও কবুল হয় না। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শোনার পরও মসজিদে জামায়াতে এসে নামাজ আদায় করে না, কোনো ওজর না থাকলে ওই ব্যক্তির নামাজও কবুল হয় না।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)।

উল্লিখিত ব্যক্তিরা ছাড়া আরো অনেকের নামাজ কবুল হয় না বলে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলো-‘সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে গমনকারী নারী। ওই নারী নাপাকির গোসলের ন্যায় উত্তমভাবে গোসল না করলে তার নামাজও কবুল হয় না।’ (ইবনে মাজাহ)।  মা-বাবার অবাধ্য সন্তানের নামাজও কবুল হয় না। দান করার পর দানের কথা গর্বের সঙ্গে প্রচার করা ব্যক্তির নামাজ কবুল হয় না। যে ব্যক্তি তকদিরকে অস্বীকার করে তার নামাজও কবুল হয় না। পরের বাপকে যে নিজের বাপ বলে দাবি করা ব্যক্তির নামাজও কবুল হয় না।’ (বুখারি-মুসলিম)। কোনো মুসলিমকে হত্যা করে এবং তাতে গর্ববোধ করে আর খুশি হয়, ওই ব্যক্তির নামাজ কবুল হয় না।’ কেসাসের বিধান বাস্তবায়নে অর্থাৎ খুনের বদলে খুনের বদলা নিতে যে ব্যক্তি (শাসন কর্তৃপক্ষ বা বিচারককে) বাধা দেয়। ওই ব্যক্তির নামাজ কবুল হয় না।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ)। যে ব্যক্তি মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তার নামাজ কবুল হয় না।’ (বুখারি-মুসলিম)

লেখক : আবু আব্দুল্লাহ

আলেম ও ইসলামী কলামিস্ট

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads