• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

যে আমলে গোনাহ মাফ হয়

  • প্রকাশিত ১৪ নভেম্বর ২০২০

মুহাম্মদ ইমাম হাসান

 

 

আল্লাহ ক্ষমাশীল তিনি ক্ষমা করাকে ভালোবাসেন। বান্দা যতো গোনাহ-ই করুক না কেন আল্লাহ মাফ করে দেবেন।  কোরআনুল কারীমে আল্লাহতায়ালা বান্দাকে উদ্দেশ্য করে ঘোষণা করেছেন—‘বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা যুমার-৫৩)। উক্ত আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তাঁর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার জন্য। যে মুসলমান ইসলামের বিধি-বিধান পালন করা থেকে দূরে সরে গেছে; তাদের জন্য আয়াতটি আশার বাণী। তারা যত অন্যায় ও পাপ করুন না কেন, যদি তারা আল্লাহর নিকট তাওবা করে এবং গোনাহ না করার প্রতিজ্ঞা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তবে এ ঘোষণা অনুযায়ী আল্লাহ তাদের অতীত জীবনের সব গোনাহও ক্ষমা করে  দেবেন।

আল্লাহর রহমতের কাছে কোনো গোনাহই বড় নয়। বান্দা যদি কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলে কোনো বড় গোনাহের কাজ করেই ফেলে তবে কোনো অবস্থাতেই হতাশ হওয়া যাবে না। সঠিকভাবে ফিরে আসতে হবে। গোনাহ যত বড় ও কঠিন হোক না কেন আল্লাহর রহমতের কাছে তা একেবারেই তুচ্ছ। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মারাত্মক গোনাহ করে তবে তার উচিত আল্লাহর হুকুম পালন করা এবং বেশি বেশি তাঁর রহমতের আশা করা। বান্দাহ তার কঠিন বা বড় গোনাহ থেকে মুক্তিলাভে মহান আল্লাহর অন্যতম হুকুম পালনে নিজেকে নিয়োজিত করবে। মানুষ যত বড় গোনাহ করবে, তত বেশি ও বড় ইবাদতে আত্মনিয়োগ করলেই আল্লাহ ওই বান্দার গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।

আল্লাহর হুকুমের মধ্যে নামাজ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ হুকুম। মানুষ যত বড় গোনাহ-ই করুন না কেন, যদি সে একনিষ্ঠ মনে গোনাহ মুক্তির আশায় নামাজে আত্মনিয়োগ করে তবে আল্লাহর অফুরন্ত রহমত ও ক্ষমালাভ ওই বান্দার জন্য একেবারেই সহজ। আল্লাহতায়ালা ওই বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। হাদিসের বর্ণনায় তা প্রমাণিত। হাদিসে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি এক নারীকে চুম্বন করে বসে। পরে সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বিষয়টি (তার কৃতকর্মের কথা) জানায়। তখন আল্লাহতায়ালা আয়াত নাজিল করেন, ‘দিনের দু’প্রান্তে সকাল ও সন্ধ্যায় এবং রাতের প্রথম অংশে নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। নিশ্চয় ভালো কাজ পাপাচারকে মিটিয়ে দেয়।’ (তখন) লোকটি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি কি শুধু আমার বেলায় প্রযোজ্য? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার সব উম্মতের জন্যই।’ (বুখারি)

নামাজসহ সব ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষের গোনাহ দূরীভূত হওয়ার প্রমাণে অন্য হাদিসে এসেছে—হযরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন একদিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমাদেরকে ফেতনা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্য স্মরণ রেখেছ? হযরত হুজাইফা বললেন, ‘তিনি (প্রিয়নবী) যেমন বলেছিলেন, হুবহু তেমনভাবে আমি তা স্মরণ রেখেছি। হযরত ওমর বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী স্মরণ রাখার ব্যাপারে তুমি খুব দৃঢ়তার পরিচয় দিচ্ছ। আমি বললাম—(রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন) মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি, পাড়া-প্রতিবেশীদের ব্যাপারে যে ফেতনায় (গোনাহে) পতিত হয়, নামাজ, রোজা, দান-সাদকা, (ন্যায়ের) আদেশ, (অন্যায়ের) নিষেধ তা (গোনাহ বা ফেতনা) থেকে দূরীভূত করে দেয়।’ (বুখারি)।

সুতরাং যখনই কোনো গোনাহ বা খারাপ কাজ সংঘটিত হয়ে যায়, তখনই নামাজ পড়ার মাধ্যমে তার কাফফারা আদায় করা উত্তম। কেননা রোজা রাখা, দান-সাদকা করাসহ অন্যান্য আদেশ ও নিষেধ থেকে নামাজ পড়া অনেক সহজ। মুমিন মুসলমান যখনই কোনো বড় গোনাহ বা অন্যায় কাজে জড়িয়ে যাবে। আর বোঝার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠভাবে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, মহান আল্লাহ বান্দার সব বড় বড় গোনাহকে ক্ষমা করে দেবেন। পাপাচার থেকে হেফাজত করবেন। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে গোনাহ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ আদায় করে তা থেকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার সব গোনাহ থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। গোনাহমুক্ত জীবন-যাপন করে পরকালের চিরস্থায়ী জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক : ইমাম ও খতিব, টুটালিয়াপাড়া জামে মসজিদ, সাভার, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads