• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
ঢাকার শতবর্ষী চিনির টুকরা মসজিদ

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

ঢাকার শতবর্ষী চিনির টুকরা মসজিদ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৬ নভেম্বর ২০২০

ঢাকার শতবর্ষী ‘চিনির টুকরা মসজিদ’। পুরান ঢাকার কসাই টুলির কে পি ঘোষ রোড। পাশে দৃষ্টিনন্দন ও বিভাময় কারুকার্যসমৃদ্ধ একটি মসজিদ সমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। তিন দিক দিয়ে আসা তিনটি রোডের সংযোগ। এ সংযোগস্থলের এক কোণায় মসজিদটি অবস্থিত। শতবর্ষ পার করেছে মসজিদটি। স্থাপত্যশৈলী ও নকশাকৃত দৃশ্যে দেদীপ্যমান। ৩০ বছর ধরে বিটিভির আজানের সময় এ মসজিদের দৃশ্য দেখানো হতো। স্থানীয়ভাবে এটি ‘চিনির টুকরা মসজিদ’ নামে পরিচিত। মূলত, মসজিদের গায়ে চিনামাটির সাদা টুকরাগুলো দেখতে চিনির দানার মতো হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা মসজিদটিকে এই নামে ডাকেন। তবে এটি ‘কাস্বাবটুলি জামে মসজিদ’ নামেও পরিচিত। জনাব আবদুল বারি নামের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ধর্মভীরু মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা। এশিয়াটিক সোসাইটির ‘ঢাকা কোষ’ গ্রন্থের তথ্যানুযায়ী ১৯০৭ সালে তিনি এটি নির্মাণ করেন তিনি।

মসজিদটির মূল অংশ এবং বারান্দাসহ প্রায় দুই কাঠা জায়গার ওপর অবস্থিত। মূল মসজিদের অবকাঠামোয় আলাদা সমতল ছাদ নেই। ভেতর দিয়ে ছাদের বেশিরভাগ অংশে সরাসরি তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন আকারের কয়েকটি গম্বুজ। মসজিদ ভবনের মধ্যে বড়, দুই পাশে মাঝারি ধরনের ও চারকোণায় একই ডিজাইনের চারটি গম্বুজ রয়েছে। এছাড়াও ছয়টি ছোট ও দুইটি জোড়া পিলারের দুইটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজগুলোর উচ্চতা ৫-১২ ফুট।

ছাদবিহীন মসজিদের প্রতিটি পিলারের মাথায় রয়েছে গম্বুজ বা মিনার। মসজিদের মূল ভবনের ভেতরে ও বাইরের দেয়ালসহ সম্পূর্ণ জায়গা সিরামিক দিয়ে ফুল, ফুলের গাছ ও আঙুর ফলের ছবির মাধ্যমে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে পুরান ঢাকায় ছিল না এত ঘনবসতি। ফলে ছোট হলেও তখন পূরণ হতো মুসল্লিদের চাহিদা। ধীরে ধীরে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে মসজিদের ধারণক্ষমতা কমে যায়। এ কারণে ১৯৭৯ সালে কারুকার্যে কোনো পরিবর্তন না করে মসজিদ সংস্কার করা হয়। ফলে মূল ভবনের ভেতরটা আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এলাকাবাসীর সহায়তায় কয়েক বছর আগে মূল মসজিদের পূর্ব ও উত্তরে সমপ্রসারণ করা হয়। মূল মসজিদটি একতলা হলেও বর্ধিত অংশটি হয় তিনতলা। বর্তমানে এটি প্রায় পাঁচকাঠা জায়গায় অবস্থিত। নতুন অংশের পুরোটাই উন্নতমানের টাইলস দ্বারা ঢেকে রাখা হয়েছে। চাকচিক্য এ চিনির টুকরো মসজিদের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে রয়েছে অজু করার একটি হাউজ। হাউজে সিমেন্টের একটি পদ্মফুলও তৈরি করে রাখা হয়েছে। আশির দশকের শেষের দিক থেকে এ পর্যন্ত মসজিদের বিভিন্ন অংশের সংস্কার করা হলেও মূল শৈল্পিকতা, কারুকাজ ও নকশায় কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। সংস্কারের সময় মসজিদটির আয়তনে প্রশস্ততা আনা হয়। মূল স্থাপনার লাগোয়া অংশে তৈরি করা হয়, বহুতল বিশিষ্ট নতুন ভবন। মসজিদটিতে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন প্রায় ১৫ শ মুসল্লি।

মসজিদের মূল সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য চিনিটিকরির কারুকাজ ও নির্মাণশিল্পীদের নিখুঁত কর্মযজ্ঞ। দেয়াল ও ফলকগুলো মোগলীয় নির্মাণশৈলী ও রীতি সাজানো এবং সৌন্দর্যকরণ করা হয়েছে। মূল স্থাপনার ছাদে রয়েছে সুবিশাল তিনটি গম্বুজ। রঙবেরঙের চীনামাটির টুকরোর পাশাপাশি ব্যাপকহারে চীনা মোজাইকেরও ব্যবহার করা হয়েছে। সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের স্মারক মসজিদটিকে ‘চিনির টুকরার মসজিদ’ বলে থাকেন। কিন্তু প্রাচীনতার কারণে ও কিছুটা অযত্নে মসজিদের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যগুলো দিনদিন নষ্ট হতে চলেছে। কিছু পাথর ও উজ্জ্বল টালিগুলো খসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শতবর্ষী এই মসজিদের দেয়ালের কিছু অংশে মোজাইক উঠে গিয়ে ভেতরের লাল ইট উঁকি দিচ্ছে। কোথাও কোথাও ফিকে হয়ে গেছে কাচের নীল-সবুজ রং। তবে পুরোনো আমলের কাঠের দরজায় ও বারান্দার ছাদের কাঠের চেহারা সহজেই মনে করিয়ে দেয় পুরোনো স্মৃতি। এক সময় পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ‘চিনির টুকরো’ মসজিদের আশপাশে তেমন বাড়িঘর ও দোকানপাট ছিল না। শুরু থেকে আশির দশকের শেষ দিকেও অনেক বিদেশি পর্যটক আসতেন এই মসজিদ দেখতে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads