• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

ইসলামে জবান হেফাজতের গুরুত্ব

  • প্রকাশিত ৩০ নভেম্বর ২০২০

মুহাম্মদ শামসুল আরেফীন

 

 

আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের মধ্যে জবান হলো একটি অফুরন্ত নিয়ামত। যা মানুষকে আল্লাহতায়ালা বিশেষভাবে দান করেছেন। কোরআনুল কারীমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘দয়াময় আল্লাহ! তিনি কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। তিনিই মানুষ সৃষ্টি করেছেন।  তিনিই মানুষকে মনের ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন।’ (সুরা আর-রাহমান, আয়াত-১, ৪)। জবান হলো মনের ভাব প্রকাশ করার মাধ্যম। মানুষ পরিপূর্ণরূপে মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখে। এটা মানুষের প্রতি আল্লাহতায়ালার এক বিশেষ নেয়ামত। মানুষ ব্যতীত পৃথিবীর হাজারও প্রাণীর কাউকে আল্লাহপাক এই ক্ষমতা দেননি। একমাত্র মানুষকেই মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য জবান দান করেছেন আল্লাহপাক। তাই এর শুকরিয়া আদায় করা আমাদের কর্তব্য। আর এই জবান সঠিকস্থানে ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের কার্যক্রমসমূহ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেবেন (সুরা আহযাব, আয়াত-৭০,৭১)।

কিন্তু অনেকেই শুকরিয়া আদায় না করে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে কথা বলার দুঃসাহস দেখায়। আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে কথা বলে বেড়ায়। জবানকে সংযত রাখে না। অপর মুসলমান ভাইকে কষ্ট দেয় জবানের মাধ্যমে। জবানের আঘাত অনেক বড়। কথিত আছে, শরীরের কোনো স্থানে চাকু দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করলেও তা এক সময় শুকিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, কিন্তু কোনো মানুষকে জবানের দ্বারা যদি আঘাত করা হয় তাহলে তা সহজে অন্তর থেকে দূর হয় না; বরং তা অন্তরে স্মৃতিপটে স্মৃতিচারণ হয়ে থাকে। তাই জবানের ব্যাপারে সব মুসলমানকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি, যার জবান এবং হাত-পা থেকে অপর মুসলমান নিরাপদে থাকে।’ অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার লজ্জাস্থান ও জবানের দায়িত্ব নেবে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতে তার জামিন হবেন।’

 

হজরত বিলাল বিন হারিস (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির এমনও কথা বলে, যার কল্যাণের কথা সে ধারণাই করতে পারেনা। অথচ তার দরুন কিয়ামত অবধি তার সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে দেন। আবার মানুষ আল্লাহর অসুন্তুষ্টির এমনও কথা বলে, যার অকল্যাণের কথা সে ধারণাই করতে পারেনা। অথচ তার দরুন কিয়ামত অবধি তার অসন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে দেন।’ (তিরমিযি, মুয়াত্তা মালেক) হজরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (বুখারি ও মুসলিম) অন্য হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, কোনো বান্দা ভালো-মন্দ বিচার না করে এমন কোনো কথা বলে ফেলে, যার কারণে সে পদস্খলিত হয়ে জাহান্নামের এতদূর গভীরে চলে যায় , যা পূর্ব ও পশ্চিমপ্রান্তের দূরত্বের সমান (বুখারি) ।

‘মিষ্টভাষী’ মানুষের বিশেষ এক গুণ। এর দ্বারা অনেক কিছুই অর্জন করা সম্ভব। আর আল্লাহর কাছেও রয়েছে বিশেষ পুরস্কার। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় জান্নাতে বালাখানা থাকবে, যার ভেতরের সবকিছু বাহির থেকে দেখা যাবে। একজন বেদুঈন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলো, ওই বালাখানা কাদের জন্য হবে? রাসুলুল্লাাহ (সা.) বললেন, ‘যারা মিষ্টভাষী হবে, অভাবীদের আহার করাবে, রাতের গভীরে নামাজ পড়ে (তিরমিযি) হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! নাজাত পাওয়ার উপায় কী? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব দিলেন: তোমার কথাবার্তা সংযত রাখো, তোমার ঘরকে প্রশস্ত করো (মেহমানদারির জন্য) এবং তোমার কৃত অপরাধের জন্য আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি করো।’ (তিরমিযি)

 

মানুষ ভুলে গেছে ইসলামের হুকুম-আহকাম। জবানকে ছেড়ে দিয়েছে বেপরোয়াভাবে। সমাজে লেগে আছে একে অপরের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ। নিজের কথাকেই সবাই সঠিক ও যথেষ্ট মনে করে। মুসলিম জাতি ভুলে গেছে সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উত্তম আদর্শ। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে একেবারে  মৃদু সুরে কথা বলতেন। শত্রু-মিত্র তার নিকট ছিল একই রকম। তাঁর কোনো শত্রুও বলতে পারবে না,  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সাথে কোনো দুর্বব্যবহার করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনি ছিলেন এক মহান ব্যক্তিত্ব। যার কথা, কাজ, কর্মে রয়েছে বিশ্ববাসীর হেদায়েত। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পরিপূর্ণভাবে তাঁর অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক : ছড়াকার, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads