• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

তাওবার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা

  • প্রকাশিত ০৭ ডিসেম্বর ২০২০

মাওলানা মুহাম্মদ শামসুল আরেফীন

 

 

তাওবার বিনিময়ে মহান রাব্বুুল আলামীন তাঁর বান্দাদের পাপ মোচন করেন। এটি মহান আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। এর মাধ্যমে কৃত গুনাহ থেকে পবিত্র হওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবার মাধ্যমে পাপমুক্ত হওয়ার পথ বাতলে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো, খাঁটি তাওবা। আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। নবী ও তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছে তাদের সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত-৮) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, গুনাহ থেকে তাওবাকারী নিষ্পাপ তুল্য। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৫০) আমাদের সমাজের অনেকেই তাওবা কাকে বলে, তা জানে না। অনেকের ধারণা এটি একটি রেওয়াজ মাত্র। মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তিকে কোনো একজন আলেমের মাধ্যমে তাওবা বাক্য পড়িয়ে দিলেই তাওবা হয়ে যায়। কেউ কেউ মুমূর্ষু রোগীদের কাছে আলেমদের নিয়ে বলেন, তার (রোগীর) কানে কানে তাওবা পড়ে ফুঁক দিতে। এ ধরনের ঘটনা সমাজে প্রতিনিয়তই ঘটে। এর কারণ হলো, তাওবা আসলে কী, তা কীভাবে করতে হয়ে, এ ব্যাপারে সঠিক ধারণা নেই।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘অনুতপ্ত হওয়াই তাওবা।’ আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি নিজে কি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন যে অনুতপ্ত হওয়াই তাওবা? তিনি বলেন, হ্যাঁ। (ইবনে মাজাহ, হাদিস-৪২৫২)

এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, কৃত পাপের ওপর অনুতপ্ত হওয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার নামই তাওবা। মানুষ তখনই কোনো কাজে অনুতপ্ত হয় যখন সে বুঝতে পারে, কাজটি করা তার জন্য ঠিক হয়নি। তখন সে তার পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ইসলামের পরিভাষায়, শরিয়তবহির্ভূত নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে ইসলাম নির্দেশিত কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ফিরে আসা এবং ভবিষ্যতে পাপে লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে আল্লাহর বিধানের ওপর অটল-অবিচল থাকাকে তাওবা বলা হয়। পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষকে তাওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন। কোনো কোনো আয়াতে তাওবাকে আখ্যা দিয়েছেন সফলতার সূত্র হিসেবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমার সবাই আল্লাহর কাছে তাওবা করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা নুর, আয়াত- ৩১)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তান গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তওবাকারীরা উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৪২৫১)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তি গুনাহ করার পর উত্তমরূপে অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস  নং-১৩৯৫) কৃত গুনাহের ওপর আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়ে গুনাহ আর না করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এর জন্য তাওবার নিয়তে (দুই রাকাত নামাজ) পড়াও উত্তম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মুমিনদের প্রশংসা করতে গিয়ে তাদের তাওবার পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা নিজেদের প্রতি জুলুম (গুনাহ) করলে, আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবে? এবং তারা যা করে ফেলে, জেনে-বুঝে তারা তা পুনরায় করতে থাকে না। এরা তারাই, যাদের পুরস্কার হলো তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কতই না উত্তম!’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত-১৩৫, ১৩৬)। আল্লাহতায়ালার কাছে তওবা করলে তিনি শুধু ভুলগুলোই ক্ষমা করেন না, বরং তিনি বান্দার সব দোয়াও কবুল করতে থাকেন এবং পাপগুলো নেকীর দ্বারা পরিবর্তন করে দেন। আর এই তওবা মানুষের শেষ সময়ে কবুল হয় না। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘মৃত্যুর যন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা বান্দার তওবা কবুল করেন।’ (তিরমিযি, হাদিস নং-৩৮৮০)

তাওবার জন্য নির্দিষ্ট কোনো আমল বা বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। পাপ কাজ থেকে ফিরে আসাই হলো তওবা। তবে কিছু বিষয় খেলাল রাখা জরুরি। যেমন : ১. কৃত পাপ কাজের ওপর অনুতপ্ত হওয়া, কাজটিকে প্রচণ্ডভাবে ঘৃণা করা। ২. পাপ কাজ সম্পূর্ণ পরিহার করা। ৩. ভবিষ্যতে পাপ কাজ না করার দৃঢ় সংকল্প করা। ৪. বান্দার হক নষ্ট করে থাকলে তা আদায় করা। অবশ্য অন্যের হক নষ্ট করার ক্ষেত্রে তার হক আদায় করা ছাড়া তাওবা কবুল হবে না। তাই কারো হক নষ্ট করে থাকলে তার হক আদায় করা ও তার কাছে ক্ষমা চাওয়া তাওবার পূর্বশর্ত। ৫. শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাওবা করা; পার্থিব উদ্দেশ্যে নয়। মহান আল্লাহ আমাদের খাঁটিভাবে তাওবা করার তাওফিক দান করুন।

 

লেখক : আলেম, ছড়াকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads