• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
শীতার্তদের  সহায়তায় আল্লাহ খুশি হন

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

শীতার্তদের সহায়তায় আল্লাহ খুশি হন

  • প্রকাশিত ১০ ডিসেম্বর ২০২০

দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীতকাল ভীষণ কষ্টের। খাবারের চেয়েও তাদের শীত নিবারণ অতীব প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শৈত্যপ্রবাহের রুক্ষতা থেকে রক্ষা পাওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থাপনাও তাদের থাকে না। ফলে অসহায় ও হতদরিদ্রদের কষ্ট কেবল বেড়েই যায়। শীতজনিত কারণে ছড়িয়ে পড়ে নানা অসুখ-বিসুখ। তীব্র শীতে বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছায়। এ সময় বেড়ে যায় শীতজনিত রোগের প্রকোপ। বৃদ্ধ ও শিশুদের মধ্যে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কোল্ড ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ফুটপাত এবং খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারীদের কষ্টের সীমা থাকে না। গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য না থাকায় চা শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ ভীষণ কষ্টে দিনযাপন করেন। বিভিন্ন স্থানে খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন দরিদ্র মানুষ। শীত নিবারণের পোশাক এবং কম্বল-কাঁথার অভাবে অভাবী মানুষের কষ্টের যেন শেষ নেই।

হাড়কাঁপানো শীত গরিব মানুষের জীবনকে অসহনীয় অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই শীতকাল গরিব-দুস্থ মানুষের জন্য ভীষণ কষ্টের। একবার কি আমরা ভেবে দেখেছি, এই শীতে অসহায় গরিব বস্ত্রহীন কর্ম-অক্ষম মানুষ কীভাবে রাত কাটাচ্ছেন? আমাদের মতো তাদের দামি গরম পোশাক তো দূরে থাক, সামান্য কাপড়টুকুও নেই। ছোট ছোট বাচ্চা এই তীব্র শীতে কত কষ্টে আছে। অনেকে এই শীত সহ্য করতে না পেরে মারাও যাচ্ছেন। শীতের পোশাক ও কম্বল বিতরণের মাধ্যমে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর সময় এখনই। শীতের প্রকোপ আরো বাড়ার আগেই সমাজের গরিব মানুষদের রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। হাড়কাঁপানো শীতের কবল থেকে শীতার্তদের রক্ষা করা এবং সামর্থ্যের ভিত্তিতে সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা প্রত্যেক মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। এটা অন্যতম একটি ইবাদতও। পবিত্র কোরআন করিমে এরশাদ হয়েছে, ‘তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সুরা জারিয়াত : ১৯)। কোরআনে অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, ‘তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে।’ (সুরা দাহর : ৮)। হজরত আবু সাঈদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে বস্ত্রহীনতায় ঢাকতে কাপড় দিলে আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরাবেন।’ (তিরমিজি : ২৮৩৫)। অন্যত্র নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততক্ষণ বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন।’ (মুসলিম : ২১৪৮)। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো এরশাদ করেন, ‘যে মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন, খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ (আবু দাউদ : ১৭৫২)। অন্য এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০টি প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন। আর বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’ (মুসলিম : ২৪১৯)। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজে সেই মানুষেরই একটা অংশ গরিব-দুস্থ। তারা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলো তাদেরও ন্যায্যপ্রাপ্য। তাই গরিব-অসহায়, দুস্থের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা প্রদর্শন ও সহানুভূতিশীল হওয়া মানবিক দায়িত্ব।

লেখক : মুহতামিম, সাইটুলা ইসলামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম মাদরাসা

শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads