• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

লজ্জা চরিত্রের ভূষণ

  • প্রকাশিত ১৩ ডিসেম্বর ২০২০

এম জহিরুল ইসলাম

 

লজ্জা মানব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ অলঙ্কার। আল্লাহ প্রদত্ত এক অনন্য গুণ। এর উৎপত্তি ঈমান থেকে। এটি এমন গুণ যা মানুষকে সব ধরনের কদর্মতা, মলিনতা ও কলুষতা থেকে মুক্ত রাখে এবং ব্যক্তিকে পবিত্রতা, স্বচ্ছতা ও নির্মলতার চরিত্র বিকাশে বিকশিত করে তোলে। লজ্জা অর্থ- মানসিক সংকোচন, নমনীয়তা, চারিত্রিক ভদ্রতা ও লাজুকতা। আল্লামা কিরমানী (রহ.) বলেছেন, ‘লজ্জা এমন একটি মানসিক শক্তি, যা ব্যক্তিকে আল্লাহর নিকট ও মানুষের নিকট ঘৃণিত কাজগুলো থেকে দূরে রাখে।’ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহ.) বলেছেন, ‘মন্দ কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় আত্মা প্রদমিত থাকাকে লজ্জা বলে।’ নিন্দা ও সমালোচনার ভয়ে কোনো দূষণীয় কাজ করতে মানুষের মধ্যে যে জড়ত্ববোধ তৈরি হয়, সেটাই হলো লজ্জা। যদি কেউ দৈহিক ও আত্মিক শক্তিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও যথাযথ স্থানে প্রয়োগ করে এবং পানাহারের চাহিদা ও আত্মিক কামনাসমূহ নিয়ন্ত্রণ এবং যথাস্থানে ব্যবহার করে, তবে তার মধ্যে লজ্জার বিকাশ ঘটতে পারে।

 

লজ্জার উপকারিতা

 

১. ঈমানের পূর্ণতার জন্য লজ্জার প্রয়োজন। কারণ, ঈমান যেসব নেক কাজের দাবি করে, লজ্জা ওইগুলোর সহায়ক। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, লজ্জা ঈমানের একটি শাখা। সুতরাং ঈমান থাকা না থাকার বিষয়টি লজ্জার ওপর নির্ভরশীল। এ ব্যাপারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : ‘যার লজ্জা নেই, তার ঈমান নেই।’

২. লজ্জা ও ঈমান একে অন্যের পরিপূরক। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, লজ্জা ও ঈমান পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যখন দুটির একটি চলে যায়, তখন অন্যটিও চলে যায়। একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক আনসারী সাহাবির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পান, সে তার ভাইকে বেশি লজ্জাশীল না হওয়ার উপদেশ দিচ্ছিলেন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তাকে ছেড়ে দাও, কেননা লজ্জা হলো ঈমানের অংশ।’ (আবু দাউদ)। সুতরাং লজ্জা ও ঈমানের সম্পর্ক গভীরভাবে বিদ্যমান।

৩. লজ্জা চরিত্রের ভূষণ। লজ্জা মানুষকে যাবতীয় অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও নোংরামি থেকে বিরত রাখে। এ গুণ যার ভেতর আছে, সে কখনো অন্যায় ও অপমানসূচক কাজ এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের নাফরমানি করতে পারে না। উম্মাহাতুল মুমেনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আয়েশা, লজ্জা যদি কারো ভূষণ হয়, তবে সে একজন সৎ লোক এবং অশ্লীলতা যদি কারো ভূষণ হয়, তবে সে একজন অসৎ লোক।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির কোনো বিষয়ে যদি অশ্লীলতা থাকে, তবে তা তার সম্মানহানি করে, আর কারো কোনো বিষয়ে যদি লজ্জাশীলতা থাকে, তবে তা তাকে সুশোভিত করে।’

 

৪. লজ্জা শুধু মানবীয় গুণই নয়, আল্লাহপাকও এ গুণে গুণান্বিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া বলেছেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক লজ্জাশীল, পরম দয়ালু। বান্দা যখন তার দরবারে মোনাজাতে হাত উত্তোলন করে, তখন তিনি তা ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’

 

৫. লজ্জা জান্নাত-জাহান্নামের প্রবেশদ্বার। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘লজ্জা ঈমানের একটি শাখা। ঈমান মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করায়। আর অশ্লীল কথাবার্তা দুশ্চরিত্রের একটি শাখা। আর দুশ্চরিত্র মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করায়।’ হাদিসে কুদসিতে আল্লাহপাক বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তিনটি বস্তু ব্যতীত অন্যসব কিছু সরাসরি স্বীয় হস্তে সৃষ্টি করেননি। তিনি যাবতীয় বস্তুকে বলেছেন, ‘হও’, তখন তা হয়ে গেছে। আল্লাহপাক আদম ও ফেরদাউসকে স্বহস্তে সৃষ্টি করলেন এবং তাকে (ফেরদাউসকে) বললেন, ‘আমার ইজ্জত ও মর্যাদার কসম! তোমার মধ্যে কোনো কৃপণ আমার সান্নিধ্যে বাস করতে পারবে না। আর কোনো নির্লজ্জ ব্যক্তি তোমার সুগন্ধ পাবে না।’ (দায়লামী)

 

৬. লজ্জাহীন ব্যক্তির কাজের কোনো বিচার বিশ্লেষণ নেই। নির্লজ্জ ব্যক্তি মান-ইজ্জত, হালাল-হারাম, ভালো-মন্দ, উৎকৃষ্ট-নিকৃষ্ট, অনাচার-দুরাচার ও চক্ষুলজ্জা বলতে কোনো বাছবিচার নেই। লজ্জাহীন ব্যক্তি গর্বের মতো নিকৃষ্ট কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। নির্লজ্জ ব্যক্তি উলঙ্গপনা, অশ্লীলতা, বেপর্দা, বেহায়াপনা, বেয়াদবি ও মানব চরিত্রের যত নিকৃষ্ট ও নোংরামি কাজ আছে সবই করতে পারে। হাদিসে এসেছে, আবু মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছে, ‘পূর্ববর্তী যখন তোমার লজ্জা না থাকে, তখন তুমি যা ইচ্ছে তা করতে পার।’ (আবু দাউদ)। তাই লজ্জাহীনতা ও অশ্লীলতা বর্জনের উদ্দেশ্যে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।’ (সুরা নাহল, আয়াত-৯০)। সুতরাং লজ্জার মতো শ্রেষ্ঠগুণের সমাহারে মানব চরিত্রকে বিকল্পিত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ঈমানকে পরিপূর্ণভাবে সজীব করে তোলা। ঈমানের পূর্ণ সজীবতা এলে লজ্জাহীনতা আস্তে আস্তে দূর হতে থাকবে এবং লজ্জানামীয় শ্রেষ্ঠ গুণটি অন্তরে স্থান পাবে।

 

লেখক : আলেম, সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads