• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮

ধর্ম

যেমন হবে জান্নাতের ‘হুর’

  • প্রকাশিত ১৪ ডিসেম্বর ২০২০

মুফতি কাজী সিকান্দার

 

 

আল্লাহতায়ালা বিচারকার্য শেষে কোনো বান্দাকে জান্নাতে দেবেন, কাউকে জাহান্নামে। যে এ ধরাপৃষ্ঠে আল্লাহকে মেনেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করেছে সে জান্নাতি। আর যে উপেক্ষা করেছে, অস্বীকার করেছে সে জাহান্নামি। বান্দাকে তার ভালো কাজের পুরস্কার দেবেন জান্নাত। তাতে আনন্দ উচ্ছ্বাসের যত উপকরণ রয়েছে সবই থাকবে। বান্দা আনন্দ করবে। উপভোগ করবে। শান্তিতে বসবাস করবে চিরকাল। জান্নাতিদের আনন্দের তীব্রতা বাড়িয়ে দেবে জান্নাতের রমণী হুরগণ। তাদের রূপলাবণ্যে বিমোহিত থাকবে জান্নাতি। তবে দুনিয়ার বিবি যদি জান্নাতি হয়, সে বিবি ওই জান্নাতের রমণী থেকেও সুন্দর ও রূপবতী হবে। জান্নাতের রমণী হুরদের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে বিশদভাবে বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা তৃপ্তিসহকারে খাও ও পান কর, তোমরা যে আমল করতে তার বিনিময়ে। সারিবদ্ধ পালঙ্কে তারা হেলান দিয়ে বসবে। আর আমি তাদেরকে বিয়ে দেব ডাগরচোখা হুরের সঙ্গে (তূর : ১৯-২০)।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অগ্রবর্তীরা তো অগ্রবর্তীই। তারাই নৈকট্যশীল। আবদানের উদ্যানসমূহে, তারা একদল পূর্ববর্তীদের মধ্যে থেকে এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্য থেকে। স্বর্ণখচিত সিংহাসনে। তারা তাতে হেলান দিয়ে বসবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে। তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা। পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি সুরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে, যা পান করলে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং বিকারগ্রস্তও হবে না আর তাদের পছন্দমতো ফলমূল নিয়ে এবং রুচিমতো পাখির মাংস নিয়ে। তথায় থাকবে আয়তনয়না হুরগণ, আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়, তারা যা কিছু করত, তার পুরস্কারস্বরূপ। তারা তথায় অবান্তর ও কোনো খারাপ কথা শুনবে না কিন্তু সালাম আর সালাম। যারা ডানদিকে থাকবে তারা কত ভাগ্যবান। তারা থাকবে কাঁটাবিহীন বদরিকা বৃক্ষে এবং কাঁদি কাঁদি কলায়। এবং দীর্ঘ ছায়ায় এবং প্রবাহিত পানিতে ও প্রচুর ফলমূলে যা শেষ হওয়ার নয় এবং নিষিদ্ধও নয়, আর থাকবে সমুন্নত শয্যায়। আমি জান্নাতি রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমার, কামিনী, সমবয়স্কা ডান দিকের লোকদের জন্য। তাদের একদল হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে এবং একদল পরবর্তীদের মধ্য থেকে (আল-ওয়াক্বিয়া ১০-৪০)। হুরগণ হবেন হীরা ও মুক্তার মতো। দুনিয়ার সবচেয়ে দামি হিরা-মুক্তা। ঝকমকে ও চকচকে সুন্দর হিরা-মুক্তা। দুনিয়ার যা সুন্দর তার চেয়ে শতগুণ সুন্দর হবে জান্নাতের হিরা-মুক্তা। আর জান্নাতের হুরগণ হবে হিরা-মুক্তার মতো। কোনো কাল্পনিক কল্পনা করুক তাহলে এ রমণীগণ কেমন সুন্দর হতে পারে? আল্লাহতায়ালা বলেন, তারা যেন হিরা ও প্রবাল। (সুরা রহমান : ৫৮)

 

দুনিয়ার মহব্বত শতভাগে বিভক্ত। একজন নারী তার স্বামীকে বা একজন পুরুষ তার স্ত্রীকে শতভাগ ভালোবাসতে পারে না। কিন্তু জান্নাতের নারী হুরগণ তার স্বামীকে অর্থাৎ যে হুরকে যে জান্নাতির সঙ্গে বিয়ে দেবেন আল্লাহ, সে-ই তার স্বামীকে শতভাগ ভালোবাসবেন। তার স্বামীর দিকে তাকানো ছাড়া অন্য কারো দিকে তাকাবে না। প্রত্যেক নারী-পুরুষ এটিই চায়। প্রিয়াকে শতভাগ পেতে চায়। প্রিয়ার শতভাগ ভালোবাসা ও মনোযোগ চায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, সেখানে থাকবে স্বামীর প্রতি দৃষ্টি সীমিতকারিণী হুরগণ, যাদেরকে ইতঃপূর্বে স্পর্শ করেনি কোনো মানুষ ও জ্বিন (সুরা রহমান : ৫৬)। জান্নাতের হুরকে ইতঃপূর্বে কেউ স্পর্শ করেনি। যে মহিলাকে কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি, তাকে আরবিতে ‘বাকেরা’ আর বাংলায় কুমারী বলা হয়। জান্নাতের হুরগণ হবেন চিরকুমারী। যে হুর যে জান্নাতির হবে, সে ব্যতীত ইতোপূর্বে কোনো মানুষ বা জ্বিন কেউ স্পর্শ করেনি। আর স্পর্শহীন নারীই সবার কাম্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যাদেরকে ইতঃপূর্বে কোনো মানুষ কিংবা কোনো জ্বিন স্পর্শ করেনি’ (সুরা রহমান : ৭৪)।

চারদিকে সুন্দর, মনোরম দৃশ্য। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। হরেকরকমের বাগান, উদ্যান ও উপত্যকা। তলদেশে নদী-ঝরনা। সুস্বাদু খাদ্যে ভরপুর। শরাব, মধু, দুধ, স্বচ্ছ পানির পোয়ারা।  পলকহীন অপরূপা লাবণ্যময়ী রমণী। উপবেশন করে আছে সবুজ গালিচায়। এখন যেন আরো কী প্রয়োজন। হ্যাঁ, এখন মনমাতানো সুর প্রয়োজন। যে সুরে আচ্ছন্ন হবে জান্নাতি। তখনই গেয়ে উঠবেন হুরগণ। তাদের সুরেলা গানে বিমোহিত হবে জান্নাতি। হুরগণ তাদের গানের মাধ্যমে প্রকাশ করবে তাদের পুঞ্জিত ভালোবাসার কথা। তাদের বিশ্বস্ততার কথা। তাদের আনন্দ ও আহলাদের কথা।

হুরগণ জান্নাতের এক জায়গায় সমবেত হয়ে এমন সুন্দর লাহরি গাইবে, যা সৃষ্টিজীবের কেউ কখনো শুনতে পায়নি। হুরগণ বলবেন, আমরা চিরদিন তোমাদের কাছে থাকব, কখনো ধ্বংস হব না, আমরা সর্বদা শান্তিতে আনন্দে থাকব কখনো নাখোশ হব না, অতএব ধন্য সেই ব্যক্তি যে আমাদেরকে পাবে এবং আমরা যাকে পাব (তিরমিজি ২৭৬৩)। এমন উপভোগ্য স্থান আমরা অবশ্যই পেতে চাই। এমন হুরগণ আমরা নিশ্চিত পেতে চাই। এমন ভালোবাসার আবহে নিজেকে ভাসাতে চাই। তবে আমাদেরকে ওই হুরগণের উপযুক্ত হয়ে এ পৃথিবী ত্যাগ করতে হবে। তাদের সামনে দাঁড়াতে হবে তাদের যোগ্য হয়ে। আর তার জন্য আমাদেরকে আল্লাহর হুকুম সর্বক্ষেত্রে পালন করতে হবে। আর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ বা আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। তবেই আমরা পাব এমন হুর যাদের ছোঁয়ায় পুলক জাগে। যাদের সান্নিধ্যে স্বস্তি মেলে।

 

লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads