• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের বিকল্প নেই

  • প্রকাশিত ১৫ ডিসেম্বর ২০২০

আবু তালহা রায়হান

 

ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। ইসলাম সবসময় ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। মানুষে মানুষে প্রীতির সঞ্চার ঘটায়। পৃথিবীর বুকে ইসলামই হলো একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যন্ত সব সমস্যার সমাধানে ইসলামের রয়েছে সুবিশাল আয়োজন। আর তাই ইসলাম ধর্ম প্রবর্তনের মধ্যদিয়ে বিশৃঙ্খল, অশান্ত ও ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ মরূময় আরবের জাহালত থেকে সমাজে সৌহার্দ্যময় পরিবেশ, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা ফিরে আসে। ঐশী নির্দেশনার আলোকে জগতে এক নবসভ্যতার আবির্ভাব ঘটে। মানুষ মানুষকে মানবতা, পরমতসহিষ্ণুতা ও ঔদার্যের দৃষ্টিকোণ থেকে চিনতে শেখে। পরস্পর পরস্পরকে সম্মান করতে শেখে এবং অজ্ঞতা-মূর্খতা ও পাষণ্ডতার শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসে। ইসলামের কল্যাণে বর্বর আরবসমাজ থেকে সব নিষ্ঠুরতা বিদায় নিয়ে মানবতা পূর্ণতা পায়। ওহির জ্ঞানে তারা আলোকিত হয়। রাজা-প্রজার পার্থক্য, ধনী-গরিবের ভেদাভেদ আর সাদা-কালোর বৈষম্য দূরীভূত হয়। মানুষের কর্ম ও কৃতিত্বের মাধ্যমে তার মর্যাদা ও অবস্থান নিশ্চিত হয় এবং মানবসমাজের সব পঙ্কিলতা দূরীকরণে আদম সন্তানরা নিরন্তর প্রয়াস চালায়। কিছু সংখ্যক আল্লাহর বান্দা ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্ট-যাতনা আর ইসলামের জীবনপদ্ধতি বাস্তবে রূপায়ণ করতে রাত-দিন ক্লান্তিহীন শ্রম দেন। তাদের বিরামহীন সাধনা আর অবর্ণনীয় পরিশ্রমে ইসলাম অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে দুনিয়ার সর্ববৃহৎ জীবনাদর্শে পরিণত হয়। পৃথিবীর বুকে নিগৃহীত, বঞ্চিত ও উপেক্ষিত জনমানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটে। কেননা, ইসলাম সবার যৌক্তিক, মানবিক ও কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পরিপূরণে এক স্বপ্নসারথির ভূমিকা পালন করে।

মানবতার বড়ই দুর্দিনে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যাঁর মাধ্যমে ইসলামের প্রবর্তন হলো, তিনি হলেন মানবতার পরমবন্ধু বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যাঁর শুভাগমনের মধ্যদিয়েই জগতে মানবতা ও মানবিকতা পূর্ণতা লাভ করে। মহান আল্লাহ তাঁকে জগতের মানবমণ্ডলীর অনুসরণের জন্য সর্বোত্তম নমুনা তথা আদর্শের মূর্তপ্রতীক হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাঁকে প্রস্ফুটিত করেছেন উন্নত ও মহত্তম চারিত্রিক মাধুর্যে। মানুষ ও মানবতার জন্য তাঁর রেখে যাওয়া নীতি-আদর্শকে অবধারিত করে দিয়েছেন। তাঁর সব আদেশকে অত্যাবশ্যক আর সব নিষেধকে হারাম ঘোষণা করেছেন। আর পরম শ্রষ্টার পক্ষ থেকে এসবই করা হয়েছে একটি শান্তিময় মানবসমাজ গড়ে তোলার জন্য। যে সমাজে মানবতার সবগুণ ও বৈশিষ্ট্য বিকশিত হবে।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সংস্পর্শে গড়ে উঠা ত্যাগী ও নির্যাতিত এবং সময়ের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সাহাবায়ে কিরাম (রা.) পরম শ্রষ্টার প্রিয়পাত্রদের তালিকাভুক্ত হয়ে আছেন। পার্থিব লোভ-লালসা কখনো তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। মানুষ, সমাজ ও সভ্যতার জন্য ক্ষতিকারক কোনো উপকরণ কখনোই তাদের জীবনমানে কালিমা লেপন করতে পারেনি। তাদের একেকজন মানবহিতৈষী ও মানবতার জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাদের সুচিন্তা, সুকথা ও সুনীতি সবার জন্যই সুফল বয়ে আনে। পৃথিবীর মুসলিম মিল্লাতের জন্য এর চেয়ে বড় নেয়ামত আর কিছুই হতে পারে না। কেননা, তাদের যে কাউকে অনুসরণ করলে মানবজীবন ধন্য ও সার্থক হয়ে ওঠে। কিন্তু আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে আমরা কী দেখছি? শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামের অনুপম জীবনাদর্শ আমাদের সমাজজীবনে কতটুকু আশীর্বাদ নিয়ে আসতে পারছে? শান্তির ধর্ম ইসলামের মোড়কে যেন আজ সমাজ থেকে শান্তি বিতাড়নের মহড়া চলছে। ইসলামি উদারতা, মহানুভবতা আর হূদয়ের বিশালতা ভুলে আজ আমরা মানসিক দৈন্যদশার পরিচয় দিচ্ছি; সংকীর্ণ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছি।

মানবতার পরম সুহূদ রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘রাহমাতুল লিল আলামিন’ তথা বিশ্ববাসীর জন্য করুণার মূর্তপ্রতীক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। তাঁকে কখনো ‘রাহমাতুল লিল মুসলেমিন’ তথা কেবল মুসলমানদের জন্যই রহমত বলা হয়নি। তাঁর জীবন, কর্ম, পয়গাম ও আদর্শে কখনো এ রকমের কোনো আচরণ প্রতিফলিত হয়নি; বরং তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সমপ্রদায় নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘হে রাসুল (সা.)! আপনি বলুন, ওহে মানবকুল, আমি তোমাদের সবার জন্য রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ (৭:১৫৮) তাই রাসুল (সা.) সবার কাছে প্রিয়পাত্র ছিলেন। অমানিশার ঘোর তমসাচ্ছন্নতার ভেতরে জাহালতের যুগে বর্বর লোকেরা তাঁকে আলোকের উৎস হিসেবে পেয়েছে। অবিশ্বাস, দ্বন্দ্ব আর সংঘাতে বিপর্যস্ত সমাজে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ‘আলামিন’ তথা সততা ও বিশ্বস্ততার প্রতীক। ধর্মীয় মতপার্থক্য ও ভেদাভেদ থাকলেও সামাজিক সমস্যাদি নিরসনে আশৈশব তিনি ছিলেন ঐক্য, সমঝোতা ও সংহতির কেন্দ্রবিন্দু। সারাটি জীবন মানুষকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মর্যাদা দিয়ে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে শান্তিময় সমাজ গঠন করার প্রয়াস করে গেছেন। কৈশোরে হিলফুল ফুজুল বা শান্তিসংঘ, মদিনায় মানবেতিহাসের প্রথম লিখিত সংবিধান ‘মদিনার সনদ’, আপাতদৃষ্টিতে অসম ও অমর্যাদার মনে হলেও হুদায়বিয়ার সন্ধি এবং সর্বোপরি বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণ এসব বিশ্লেষণ করলে রাসুল (সা.) এর দূরদৃষ্টি, নেতৃত্বের গতিশীলতা, মানসিক দৃঢ়তা, সার্বজনীন চিন্তা ও অসামপ্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ প্রত্যক্ষ করা যায়।  এছাড়া তাঁর ৬৩ বছরের বর্ণাঢ্য, বৈচিত্র্য ও কীর্তিময় জীবনের প্রতিটি কর্মে, বাণী ও পয়গামে এবং রেখে যাওয়া তাঁর জীবনাদর্শে মানুষ ও মানবতা, সমাজ ও সভ্যতার জন্য অতুলনীয় সব নিয়ামক শক্তি রয়েছে। আর সে জন্যই শান্তি ও মানবতার ধর্ম  ইসলামকে আজ সামপ্রদায়িক কূপমণ্ডূকতার আবর্তে ঘূর্ণায়মান রাখা চলবে না। এর সার্বজনীন উদার ও মানবিক রূপটিই মানবসমাজে প্রস্ফুটিত করতে হবে।

 

লেখক : সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads