• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

সন্তান বাধ্যগত করার কলা-কৌশল

  • প্রকাশিত ১৮ ডিসেম্বর ২০২০

মাওলানা শামসুল আরেফীন

 

সন্তান মানুষের অনেক বড় একটা সম্পদ। সন্তানের জন্যই মানুষ সবকিছু করে। আর এই সন্তান যদি হয় অবাধ্য তাহলে মা-বাবার জীবনটাই ব্যর্থ। বাধ্যগত সন্তানের আশা সবাই করে। কিন্তু বাধ্যগত সন্তান কীভাবে গড়ে উঠবে তা অনেকেরই অজানা। সন্তানকে কীভাবে গড়ে তুলবে, কোন শিক্ষায় শিক্ষিত করবে তা গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করেন না অনেকেই। ফলে একটু বড় হলেই সন্তান চলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মা-বাবার কর্তব্য হলো, সন্তানকে প্রথমেই নৈতিক শিক্ষা দেওয়া। শৈশবকালেই সন্তানকে উত্তম  আদর্শের শিক্ষা-দীক্ষা প্রদান করা। তবেই আশা করা যায় সন্তান মা-বাবার বাধ্যগত হবে। সফলকাম হবে ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে। পবিত্র কোরআনুল কারীমে মা-বাবা ও সন্তানের সম্পর্কের কিছু দৃষ্টান্ত আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। চিন্তাশীলরা যেন কোরআন থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

 

হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর শিশু সন্তান ইসমাইল (আ.) কে কুরবানি করার কথা জানালেন। ছোট্ট ছেলে দ্বিধাহীনচিত্তে রাজি হয়ে নিজেকে সপে দিলেন তরবারির নিচে। পরবর্তীতে এই ছেলেকে নিয়েই ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর কাবাঘর নির্মাণ করেন। হজরত ইউসুফ (আ.) পরম নির্ভরতায় স্বপ্নের কথা জানাতে প্রথমেই চলে গেলেন বাবা ইয়াকুব (আ.) এর নিকটে। এই কিশোর খুঁজে নাই কোনো বন্ধুকে। কারণ, পিতাই যে তার অন্তরঙ্গ বন্ধু। বাবার পাশে বসে পর্যবেক্ষণকারী সন্তান সোলাইমান (আ.) পরামর্শ দিচ্ছেন বাবা দাউদ (আ.) কে। ছোট বলে তার পরামর্শকে অবহেলা বা উপেক্ষা করেননি বাবা। ছেলে মুসা (আ.) কে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে মা ভরসা করেছেন মেয়ের প্রতি। উপদেশ দিচ্ছেন বিজ্ঞ লোকমান (আ.)। আর বাধ্যগত ছেলে তা একাগ্রতার সাথে শুনছে।  কোরআনে বর্ণিত এই সম্পর্কগুলো কীভাবে আমরা আমাদের সন্তানদের সাথে তৈরি করতে পারি? এগুলো পর্যালোচনা করলেই আমাদের সামনে কিছু বিরল নমুনা প্রস্ফূটিত হবে।

 

উল্লিখিত সম্পর্কগুলোর মধ্যে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একে অপরকে বুঝতে পারা। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস। শ্রদ্ধা, আনুগত্য, সহানুভূতিশীল হওয়া। লক্ষ এক হওয়া। এক দীনকে বুঝা। এক আল্লাহর কিতাব পড়া, জানা, বুঝা। সর্বোপরি এক আল্লাহর দাস হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলা এবং সেভাবে নিজেকে নিবেদিত করা। ছোট শিশু যখন খুব আগ্রহ নিয়ে তার বিরাট পৃথিবীর কাহিনী বর্ণনা করে তা মনোযোগ দিয়ে উৎফুল্ল হয়ে শুনুন। সে নির্দ্ধিধায় আপনাকে অকপটে সব সময় সবকিছু জানাতে ছুটে আসবে। যেমনটি করেছিলেন হজরত ইউসুফ (আ.) স্বপ্ন দেখে। শিশুর নির্ভরতার জায়গাটা আমাদেরই তৈরি করতে হবে খুব ছোট বেলা থেকেই। শিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। সব কাজ ফেলে তার কথা শুনুন।

 

সন্তান কথা শুনছে না বলে হাল ছেড়ে দিয়ে তাকে উপদেশ দেওয়া, গাইড করা বন্ধ করা যাবে না । লোকমান (আ.) যেমন করে প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা আর ভালোবাসার সাথে সন্তানের সাথে কথা বলেছেন। মনে হতে পারে সন্তান আপনার কোনো উপদেশ শুনছে না। এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিচ্ছে। কিন্তু এক কান থেকে অন্য কান দিয়ে বের হওয়ার আগে ব্রেন অনেক কিছুই ধারণ করে রাখছে। তাই অযথা সময় অপচয় না ভেবে আপনার বলাটা চালু রাখুন। যার প্রভাব এক সময় অবশ্যই আপনি দেখতে পাবেন। ক্রমাগত বলার মাধ্যমে আপনার বিশ্বাস, মূল্যবোধ প্রথিত করুন সন্তানের ভেতর।

 

সন্তানের প্রতি বিশ্বাস, নির্ভরতা এবং ‘তুমি পারো, তুমি পারবে’ এই কথাগুলো সন্তানের জীবন প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করবে। যেমন মুসা (আ) এর মা, মুসা (আ) কে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে মেয়ের প্রতি ভরসা রেখেছিলেন যে, সে খেয়াল রাখতে পারবে। আপনার বিশ্বাস সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। সন্তানের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন। তার চিন্তাশক্তিকে মূল্যায়ন করুন। পরিবারের কোনো একটা বিষয়ে সন্তানের মতামত জানতে চান। তাকে বুঝতে দিন আপনি তাকে মূল্যায়ন করছেন। তার সঠিক, সুন্দর মতামতের প্রশংসা করুন। পরামর্শটি সঠিক না হলে তাকে ব্যাখ্যা করুন। এ ক্ষেত্রে হজরত দাউদ (আ.) এবং সোলাইমান (আ.)-এর সম্পর্কের বন্ধন আমরা অনুসরণ করতে পারি।

 

‘সন্তান অবাধ্য কথা শুনে না।’ এর জন্য দায়ী আমরাই। আমরা আল্লাহর অনুগত বান্দা নয়। আমরা হলাম আল্লাহর অব্যাধ দাস। আমরা নিজেরা যদি আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অবাধ্য হয়ে চলি আর আশা করি আমাদের সন্তান আমাদের কথা শুনবে, বাধ্য হয়ে চলবে, এটা আমাদের বড় একটি ভুল । আল্লাহর সাথে আমাদের সুম্পর্ক যতটুকু মজবুত হবে ঠিক অনুরূপ সুসম্পর্ক হবে আমাদের সন্তানের সাথে। যেটা ছিল ইব্রাহিম (আ) এবং তাঁর ছেলে ইসমাইল (আ) এর মধ্যে।

 

আমাদের কর্তব্য বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা। নিজে কোরআন বোঝার চেষ্টা করা। কোরআন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। জীবনের সব সমস্যার সমাধান আল্লাহতায়ালা কোরআনে দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে কোরআন পড়া ও বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক : আলেম, ছড়াকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads