• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

আত্মহত্যার ভয়াবহ পরিণাম

  • প্রকাশিত ২২ ডিসেম্বর ২০২০

মোঃ তামিম সিফাতুল্লাহ

 

 

 

আত্মহত্যা তথা নিজেকে হনন করা এটা এক অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ এবং মহাপাপ। এত বড় মহাপাপ হওয়া সত্ত্বেও এমন অনেক দুর্ভাগ্য লোক আছে যারা জীবনযাপনের কঠিন দুঃখ-দুর্দশা ও ব্যর্থতার গ্লানি থেকে পরিত্রাণের জন্য অথবা জেদের বশবর্তী হয়ে বেছে নেয় আত্মহননের মতো পথ। কিন্তু ধৈর্য ধারণ করে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে চললে এমন ভয়াবহ পথে পা  বাড়াতে হয় না। যদি কেউ বুঝত আত্মহত্যার ভয়াবহতা কত কঠিন, তাহলে কখনোই এই পথে পা দিত না। মহান আল্লাহতায়ালা বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন আত্মহত্যার পথ থেকে বিরত থাকার জন্য। আত্মহত্যার ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু এবং যে কেউ সীমা লঙ্ঘন করে আত্নহত্যা করবে তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করব। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সুরা আন নিসা, আয়াত-২৯,৩০)

পরকালে কঠোর আজাবের ঘোষণা এই আয়াত থেকে বোঝা যায়। যে ব্যক্তি নিজেকে আত্মহনন করবে তাকে জাহান্নামের  আগুনে দগ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহপাক। কতটা ভয়াবহ এই শাস্তি! জাহান্নামের আগুন হবে পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ৭৯ গুণ বেশি। অন্যত্র মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমারা নিজের হাতে নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না।’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত-১৯৫)

আত্মহত্যা একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। বর্তমান সময়ে প্রতিনিয়তই পত্রিকার পাতায় আত্মহত্যা সম্পর্কে সংবাদ পাওয়া যায়। আজকাল আত্মহত্যার ঘটনা সর্বদা সংঘটিত হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মাঝে এমন প্রবণতা বেশি। বখাটেদের উৎপাতের কারণে কেউ এ পথ বেছে নিচ্ছে। আবার কেউ পিতা-মাতার ওপর অভিমান করে। পারিবারিক বিপর্যয়, মানসিক অশান্তি, প্রেমে বিচ্ছেদ, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি বিষয়ের সাথে জড়িত আত্মহত্যার মতো এমন জঘন্য কাজ। এসব আত্মহত্যার পেছনে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে মানসিক চাপ। ফলে ভারসাম্য হারিয়ে সহ্য করতে না পেরেই এমন ভয়াবহ কাজে জড়িয়ে পড়ে। প্রচণ্ড মানসিক চাপে পড়ে শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতিনিয়তই এমন ভয়াবহ কাজ করছে অসংখ্য মানুষ। তবে যদি একবার বুঝত এটা কতটা ভয়াবহ তবে কখনোই এমন কাজ কল্পনাও করত না।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের ভেতরে সর্বদা ওইভাবে লাফিয়ে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে| যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের মধ্যে ওইভাবে নিজ হাতে বিষ পান করতে থাকবে। যে ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, তার কাছে জাহান্নামেও সেই ধারালো অস্ত্র থাকবে যা দিয়ে সে নিজের পেট ফুঁড়তে থাকবে। (বুখারি ও মুসলিম) আত্মহত্যাকারী নিশ্চিত জাহান্নামি এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, ইসলামের পক্ষে যুদ্ধের ময়দানে আহত হয়ে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে নিজেকে নিজেই হত্যা করে তবুও তার জন্য জান্নাত হারামের ঘোষণা এসেছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল। সে যুদ্ধের ময়দানে আহত হয়ে ছটফট করতে লাগল এ অবস্থায় সে ছুরি দিয়ে নিজেই নিজের হাত কাটল এবং অনেক রক্তপাতে মারা গেল। আল্লাহতায়ালা এই ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন, আমার এ বান্দা নিজের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করে ফেলেছে এ কারণে আমি তার প্রতি জান্নাত হারাম করে দিয়েছি।’ (নাসাঈ)

জন্ম ও মৃত্যু মহান আল্লাহর হাতে। কেউ চাইলেও আগে বা পরে মরতে পারবে না। সবাইকে মহান আল্লাহর হুকুমেই মরতে হবে| তাই আত্মহত্যার মতো এমন মহাপাপের কথা কখনোই কল্পনাতেও আনা যাবে না। জীবনে বিপদ-আপদ আসবেই। এটাই স্বাভাবিক। যত বড়ই বিপদ বা মানসিক চাপ আসুক না কেন, সর্বদা ধৈর্য ধরে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে| বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বিপদ থেকে উত্তরণের জন্য নামাজের মাধ্যমে বিনীতভাবে আল্লাহর দয়া ও সাহায্য কামনা করতে হবে।

কেউ আত্মহত্যা করলে তার জানাজা পড়া যাবে কিনা, এ ব্যাপারে সমাজে কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে। কিছু কিছু মানুষ মনে করেন, আত্মহত্যাকারীর নামাজে জানাজা পড়া যাবে না কিংবা তার জন্য মাগফিরাতের (ক্ষমা) দোয়া করা যাবে না। ঢালাওভাবে এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। আত্মহত্যা মহাপাপ এবং এর শাস্তিও খুব ভয়াবহ; একথা স্পষ্ট। কিন্তু তার জানাজা পড়া যাবে না বা তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা যাবে না; এ ধারণা ঠিক নয়। 

তার নামাজে জানাজা পড়া যাবে এবং তার জন্য মাগফিরাতের দোয়াও করা যাবে। তবে আত্মহত্যাকারীর জানাজায় শীর্ষস্থানীয় দীনি ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহণ করবে না। সাধারণ লোক দিয়ে তার জানাজার নামাজ পড়িয়ে নেওয়া উত্তম।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, মদীনাতুল উলুম কামিল মাদরাসা, রাজশাহী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads