• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত

  • প্রকাশিত ২৫ ডিসেম্বর ২০২০

মুফতি আমিরুল ইসলাম লুকমান

 

 

 

আল্লাহতায়ালা আমাদের একমাত্র প্রভু। আমরা তার মুখাপেক্ষী বান্দা, আদিষ্ট গোলাম। সফল, উন্নত ও শান্তিময় জীবন উপভোগের জন্য তিনি আমাদেরকে ইসলাম ধর্ম দান করেছেন। ইসলাম একটি যুক্তিবান্ধব, বাস্তব ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের প্রতিটি বিষয়ের বিধান ইসলামে অত্যন্ত চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। মানবজাতির জন্য উক্ত বিধান মেনে চলা আবশ্যক। ধর্মীয় অনুশাসন উপেক্ষা করে জীবন অতিবাহিত করলে পদে পদে অশান্তি, অনাচার ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হবে। পরকালে হতে হবে ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন। মানব সভ্যতাকে অভিজাতরূপে টিকিয়ে রাখতে এবং মানবজাতির উৎকর্ষ সাধনে ইসলামি শরিয়তের বিধি-বিধান মেনে চলা ছাড়া গত্যন্তর নেই। বিধি-বিধান মেনে চলার জন্য সেগুলোর জ্ঞানার্জন শর্ত। জ্ঞানার্জন ব্যতীত কোনো বিষয় সঠিকভাবে পালন সম্ভব নয়। এ কারণেই ইসলামের প্রথম বাণী হলো ‘পড়’। জ্ঞানের বিপরীত নাম ‘মূর্খতা’। পৃথিবীর কোনো মানুষই নিজেকে মূর্খ বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ফলে সাধারণ দৃষ্টিকোণে জ্ঞানের যেমন প্রয়োজনীয়তা ফুটে উঠেছে, তেমনি ইসলামী দৃষ্টিকোণে ইলম বা জ্ঞানার্জন ফরজ ও অত্যাবশ্যকীয় বিষয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ’ (ইবনে মাজাহ : ২২৪)। উল্লেখিত হাদিসে প্রত্যেক মুসলমানের উপর যে জ্ঞানার্জন ফরজ করা হয়েছে, তার অর্থ হলো, সমস্ত মুসলমানের জন্য ধর্মীয় জ্ঞানের সে অংশটি আয়ত্ত করা ফরজ, যা ঈমান ও ইসলামের জন্য জরুরি এবং যার অবর্তমানে মানুষ না পারে ফরজসমূহ আদায় করতে, আর না পারে হারাম থেকে বেঁচে থাকতে। যেসব বিষয়ের জ্ঞানার্জন প্রত্যেকের জন্য ফরজ। তার কয়েকটি হলো, ইসলামের বিশুদ্ধ আকিদা, পাক-নাপাকের হুকুম, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত। যেগুলোকে শরিয়ত ফরজ বা ওয়াজিব করে দিয়েছে। অনুরূপভাবে ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসা, হালাল-হারাম, বিবাহ-তালাক ইত্যাদি। এক কথায় শরিয়ত মানুষের ওপর যেসব কাজ ফরজ বা ওয়াজিব করে দিয়েছে, সেগুলোর হুকুম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা সবার জন্য ফরজ।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর সমস্ত মুমিনের অভিযানে বের হওয়া সঙ্গত নয়। তাই তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হলো না, যাতে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং সংবাদ দান করে স্বজাতিকে, যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, যেন তারা বাঁচতে পারে’ (সুরা তওবা : ১২২)। আয়াতে প্রতিটি এলাকায় কমপক্ষে একজন বিজ্ঞ আলেম থাকার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলামের যাবতীয় মাসালা, কোরআন-হাদিস থেকে আহরিত শরিয়তের হুকুম আহকাম ও তার অসংখ্য শাখা-প্রশাখা আয়ত্তে আনা সব মুসলমানের পক্ষে সম্ভবও নয় এবং ফরজে আইনও নয়। তবে গোটা মুসলিম বিশ্বের জন্য তা ফরজে কেফায়া।

তাই প্রত্যেকটি শহরেই যদি শরিয়তের উপরোক্ত ইলম ও আইনকানুনের একজন সুদক্ষ আলেম থাকেন, তাহলে অন্যান্য মুসলমান এ ফরজের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করবে। কিন্তু যদি কোনো শহর বা পল্লীতে একজনও অভিজ্ঞ আলেম না থাকেন, তাহলে উক্ত শহরেরই কাউকে আলেম বানানো বা অন্য স্থান থেকে কোনো আলেমকে এনে সে শহরে রাখার ব্যবস্থা করা স্থানীয় লোকের পক্ষে ফরজ ও আবশ্যক, নতুবা উক্ত এলাকার সবাই গুনাহগার হবেন, যাতে করে যেকোনো প্রয়োজনীয় মাসালা তার কাছ থেকে জেনে সে মতে আমল করতে পারে (মাআরিফুল কোরআন : ৫৬৯)।

ধর্মীয় শিক্ষার ফজিলত : আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি পথ সুগম করে দেন। ফেরেশতারা জ্ঞান অন্বেষীর সন্তুষ্টির জন্য তাদের পাখাসমূহ অবনমিত করেন। জ্ঞান অন্বেষার জন্য আসমান ও জমিনবাসী আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে, এমনকি পানির মাছও। নিশ্চয়ই ইবাদতকারীর ওপর আলিমের মর্যাদা তারকারাজির ওপর চাঁদের মর্যাদার সমতুল্য’ (ইবনে মাজাহ : ২২১)। হজরত মুয়াবিয়া (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে ধর্মীয় জ্ঞান দান করেন’ (সহিহ বুখারি)। অন্যত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইমানদার ব্যক্তির মৃত্যুর পর সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল এমন, মৃত্যুর পরও যার সওয়াব মৃত ব্যক্তি লাভ করেন। একটি হলো, যে জ্ঞান সে অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং তার প্রচার করেছে’ (ইবনে মাজাহ : ২৪০)।

আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘আলেমগণ হলো নবীগণ (আ.)-এর উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ (আ.) দিরহাম দিনারের উত্তরাধিকার রেখে যান না, তারা ইলমের উত্তরাধিকার রেখে যান’ (তিরমিজি : ২৬৮২)

যে কোনো ব্যক্তির জন্য জান্নাতের রাস্তা সুগম হওয়া, অন্যান্য প্রাণিকুল নাজাতের দোয়া করা, মৃত্যুর পরও সওয়াবের ধারাবাহিকতা চালু থাকা অত্যন্ত গৌরব ও কল্যাণের কথা। নবীগণ (আ.)-এর উত্তরাধিকার হওয়ার ঘোষণা তো মহাগৌরব ও সৌভাগ্যের ওয়াদা। এমন কপাল কতজনের জোটে! ফলে দুনিয়া ও আখিরাতে সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হতে হলে আমাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি যত্নবান হতে হবে। নিদেনপক্ষে ফরজ পরিমাণ ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করতে হবে। আল্লাহতায়ালা কবুল করুন।

 

লেখক : খতিব, আল মক্কা জামে মসজিদ, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads