• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

দীনি দাওয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত

  • প্রকাশিত ২৬ ডিসেম্বর ২০২০

কাজী সিকান্দার

 

 

ইসলামে দাওয়াতের গুরুত্ব বেশি। কারণ দাওয়াতের মাধ্যমেই মানুষ সৎপথে ফিরে আসে। দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামের আদর্শ প্রসারিত হয়। দাওয়াতের মাধ্যমে সত্য প্রচার ও প্রতিষ্ঠা হয় আর মিথ্যা দূরীভূত হয়। তাই আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন আল্লাহর হুকুম আহকামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য। মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করার জন্য। শেষ নবী হজরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছেন সেই একই কাজ আল্লাহর দিকে মানুষকে দাওয়াতের জন্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রাসুলগণের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টভাবে প্রচার করা।’ (সুরা নাহল, আয়াত-৩৫)

আল্লাহতায়ালা  কোরআনুল কারীমে বিভিন্নভাবে এ দাওয়াতের কথা বলেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উম্মি নবীর, যাঁর উল্লেখ তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইনজীলে লিপিবদ্ধ পায়, যিনি তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেন এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করেন। (সুরা আরাফ, আয়াত-১৫৭) আল্লাহতায়ালা এখানে নবীর দাওয়াতকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ প্রচার করার কথা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অন্যত্র আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন না, অথচ রাসুল তোমাদেরকে আহ্বান করেছেন যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আন। (সুরা হাদীদ, আয়াত-৮) এখানে আল্লাহতায়ালা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার প্রতি আহ্বান করেছেন রাসুলের মাধ্যমে।

আল্লাহতায়ালা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশই দিয়েছেন তাবলীগ করার জন্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি আপনার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান করুন হিকমত ও প্রজ্ঞা দ্বারা এবং সুন্দর ওয়াজ-উপদেশ দ্বারা। আর তাদের সাথে উৎকৃষ্টতর পদ্ধতিতে আলোচনা-বিতর্ক করুন।’ (সুরা নাহল, আয়াত-১২৫) এখানে দাওয়াতের নির্দেশের সাথে সাথে কীভাবে দাওয়াত  দেবে তাও উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেছেন, হিকমত ও প্রজ্ঞা দ্বারা, সুন্দর ওয়াজ-উপদেশ দ্বারা, উৎকৃষ্ট পদ্ধতিতে আলোচনা-বিতর্ক করার কথা বলেছেন। এতে আমরা দাওয়াতের মূলপদ্ধতি পাই। দাওয়াতের কাজ না করলে তার ওপর ধমকও এসেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রাসুল! আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা আপনি প্রচার করুন। যদি আপনি তা না করেন তাহলে আপনি আল্লাহর বার্তা প্রচারই করলেন না।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত-৬৭) এ আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, দাওয়াতের গুরুত্ব কত বেশি!

দাওয়াতের ফজিলত : আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত, ‘যাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য পাঠানো হয়েছে। তোমরা নেক কাজের আদেশ করো এবং মন্দকাজ হতে নিবৃত্ত রাখ এবং আল্লাহতায়ালার প্রতি ঈমান রাখ।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত-১১০) আল্লাহ যেমন বড় আল্লাহর রাস্তাও তেমন বড়। আল্লাহর রাস্তায় সময় লাগানোও তেমনি বড়। আল্লাহর কথা যেমন দামি ও মূল্যবান আল্লাহর কথার দিকে আহ্বান করাও তেমন দামি ও মূল্যবান। আল্লাহতায়ালা নিজেই বলেন, ‘ওই ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা বা কে উত্তম যে, আল্লাহর দিকে আহ্বান করে এবং সৎ আমল করে এবং বলে আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা হামীম সাজদাহ, আয়াত- ৩৩) আল্লাহর দিকে আহ্বান করেছেন নবী ও রাসুলগণ। যারা নির্বাচিত, আল্লাহর মনোনীত সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন। এমন একটি কাজ, এমন কথা যার মুখ থেকে বের হবে তার কত মর্যাদা থাকতে পারে। তাইতো আল্লাহ বলেছেন, ‘তার কথার চেয়ে উত্তম আর কোনো কথাই হতে পারে না। যে আহ্বানের সাথে সাথে সৎ আমল করে এবং স্বীকার করে যে, আজ্ঞাবহ তবে সেই ব্যক্তিই উত্তম।’

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কত বড় সাওয়াবের ঘোষণা দিয়েছেন। একজন ব্যক্তি দুনিয়াতে যত নেক আমল করবে তবে তাকে যে দীনের পথে আহ্বান করেছে সে ওই ব্যক্তির আমলের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। কবুল হওয়ার সাওয়াব পাবে। যে ব্যক্তি আমল করেছে তার আমল কবুল হোক বা না হোক। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তি হেদায়েতের পথে ডাকলে সে তার অনুসারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে, তবে অনুসারীর সাওয়াব থেকে মোটেও কমানো হবে না। আর যে ব্যক্তি ভ্রান্ত পথে ডাকে সে তার অনুসারীদের পাপের সমপরিমাণ পাপের ভাগি হবে, তবে তাদের পাপ থেকে মোটেও কমানো হবে না। (সহিহ মুসলিম) কত বড় পাওয়া হয়ে গেলো আখেরাতের। আসলে মুমিন সব কাজই করবে আখেরাতের উদ্দেশে। আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশে। জান্নাতের জন্য। জাহান্নাম থেকে বাঁচার উদ্দেশে। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, হজরত সাহল ইবনুস সা’দ হতে বর্ণিত, একদা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! যদি তোমার দ্বারা মহান আল্লাহ একজন লোককেও হিদায়াত দান করেন, তবে তোমার জন্য সেটা একটি লাল উটের চেয়েও উত্তম।’ (বুখারি, মুসলিম) লাল উট কত দামি ওই সময়ের মানুষ বুঝতো। আজ সমুদ্রের বিশাল জাহাজ বা উড়োজাহাজ কত দামি এখনকার মানুষ বুঝে।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই ব্যক্তির জন্য দোয়া করেছেন। যে দাওয়াত দেয়। হক আদায় করে দাওয়াত দেয়। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাকবুল দোয়া আহ্বানকারীর জন্য। কত সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি! হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ সেই ব্যক্তির মুখ আনন্দ-উজ্জ্বল করুন, যে ব্যক্তি আমার কোনো কথা শুনেছে এবং যেভাবে শুনেছে ঠিক সেভাবেই অপরের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। এমন অনেক লোক আছে, যারা নিজেদের তুলনায় উচ্চতর জ্ঞানের অধিকারীর নিকট জ্ঞান পৌঁছে দিতে পারে।’ (তিরমিযি, আবু দাউদ)

দাওয়াতের আহ্বানে সাড়া  দেওয়ার ফজিলত : কোরআনুল কারীমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘(জ্বিনেরা বলল) হে আমার সমপ্রদায়! তোমরা আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর প্রতি সাড়া দাও এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো। আল্লাহ তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করবেন এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করবেন। (সুরা আহক্বাফ, আয়াত-৩১) অন্যত্র আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যে, যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দিকে আহ্বান করা হয় তখন তারা বলে শুনলাম এবং আদেশ মেনে নিলাম। আর এরাই সফলকাম।’ (সুরা আন নূর, আয়াত-৫১) সুতরাং আমরা অন্যকে দীনের প্রতি আহ্বান করবো এবং যদি কেউ দীনের প্রতি আহ্বান করে তার ডাকে সাড়া দিবো। এ আহ্বানকে তাচ্ছিল্য করা কঠিন শাস্তির কারণ হবে। তবে যদি কেউ ভ্রান্ত পথের দিকে আহ্বান করে তার ডাকে সাড়া দেওয়া যাবে না।

 

লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ আশরাফবাদ, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads