• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতের ফজিলত

  • প্রকাশিত ২৬ ডিসেম্বর ২০২০

মাওলানা মাহাথির মোবারক

 

 

 

সুরা ইয়াসিন অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি সুরা। যা মহান আল্লাহতায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করার এক হাজার বছর পূর্বে এই  সুরা ইয়াসিন ও সুরা ত্বহাকে তেলাওয়াত করেছেন। এটা সুরা পাঠকারীর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ বয়ে আনে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক বস্তুরই একটা হূদয় থাকে আর  কোরআনের হূদয় হলো সুরা ইয়াসিন। যে ব্যক্তি সুরা ইয়াসিন একবার পড়বে, মহান আল্লাহ তাকে দশবার পুরো কোরআন পড়ার সওয়াব দান করবেন।’ (তিরমিযি) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘সুরা ইয়াসিন কোরআনের রূহ বা হূৎপিণ্ড। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের কল্যাণলাভের জন্য সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে তার জন্য রয়েছে মাগফিরাত বা ক্ষমা। তিরমিযি শরিফে উল্লেখ রয়েছে, ‘সুরা ইয়াসিন একবার পাঠ করলে দশবার কোরআন খতম করার নেকী হয় এবং পাঠকের সব গুনাহ মাফ হয়।’ অন্য এক হাদিসে এসেছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে আল্লাহতায়ালা তার সারা দিনের সব প্রয়োজন পূর্ণ করে দেবেন এবং সব বিপদাপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন।’  হাদিসে আরো বলা হয়েছে, ‘রাতে সুরা ইয়াসিন পাঠ করলে নিষ্পাপ অবস্থায় ঘুম থেকে উঠা যায় এবং পূর্বের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।’ তাফসিরে রুহুল বয়ানে একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে তার সব মাকসুদ হাসিল হবে। যে ব্যক্তি সুরা ইয়াসিন বেশি বেশি পড়ে থাকে কেয়ামতের দিন এই সুরাই তার জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে। এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি জুমআর দিন সুরা ইয়াসিন এবং সুরা সাফফাত পড়ে অতঃপর আল্লাহর নিকট দোয়া করে তার দোয়া কবুল হয়।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা থাকবে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি সুরা ইয়াসিন অভাব-অনটনের সময় পাঠ করে তাহলে তার অভাব দূর হয়, সংসারে শান্তি ও রিজিকে বরকত লাভ হয়। (মাজহারি) ইয়াহইয়া ইবনে কাসীর বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-শান্তিতে থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে।’ (মাজহারি) অন্য এক হাদিসে এসেছে, হজরত ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে আল্লাহতায়ালা তার বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (বায়হাকি, আবু দাউদ) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে রাতে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তার ওই রাতের সব গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (দারেমি)

তাফসিরে জালালাইনের হাশিয়ায় এসেছে, ‘যদি কোনো মুসলমানের মৃত্যুর সময় হয়, আর সে সময় তার পাশে কেউ সুরা ইয়াসিন পাঠ করে, তবে বেহেশত থেকে রেদওয়ান ফেরেশতা জান্নাতের সুসংবাদ না দেওয়া পর্যন্ত রূহ কবজকারী ফেরেশতা (মালাকুল মাউত) ওই ব্যক্তির রূহ কবজ করেন না। রূহ কবজের সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তি অবস্থান হয় রাইয়্যান নামক জান্নাতে।’ হাদিসে পাকে এসেছে, হজরত আবু জার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যুশয্যা ব্যক্তির কাছে সুরা ইয়াসিন পাঠ করলে তার মৃত্যুযন্ত্রণা সহজ হয়ে যায়। (মাজহারি) হজরত ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এটা (সুরা ইয়াসিন) তোমাদের মুমূর্ষু (মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে) ব্যক্তিদের কাছে পাঠ করো।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)

হজরত আলী (রা.) হইতে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সুরা ইয়াসিনের বিশেষ কতকগুলো নেয়ামত হলো-এই সুরা পাঠ করলে ক্ষুধা দূরীভূত হয়। এই সুরা পাঠ করলে পিপাসা দূর হয়। যার পরিধেয় বস্ত্র নেই, তার বস্ত্রের ব্যবস্থা হয়। বিবাহ হতে যার বিলম্ব হয়, তার বিবাহের ব্যবস্থা হয়। ভয় এবং বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি পাঠ করলে ভয় এবং বিপদ হতে রক্ষা পাবে। কোনো ব্যক্তি কারাগারে আটকা পড়লে অতি শিগগিরই মুক্তি পাবে। মুসাফির ব্যক্তি পাঠ করলে সফরে বন্ধু মিলে যায়। কোনো কিছু হারিয়ে গেলে ওই জিনিস ফিরে পাওয়া যায়। মুমূর্ষু লোকের পাশে পাঠ করলে উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুকষ্ট লাঘব হয়। রোগাক্রান্ত ব্যক্তি পাঠ করলে তার আরোগ্য লাভ হয়। কোনো ব্যক্তি পথ হারানোর পর পাঠ করলে পথের সন্ধান পাবে। কোনো জানোয়ার হারানোর পর পাঠ করলে জানোয়ার পেয়ে যাবে। কোনো মহিলার প্রসব বেদনার সময় পড়লে সন্তান সহজে প্রসব হয়।’ এছাড়াও সুরা ইয়াসিন পাঠ করার অসংখ্য ফজিলত রয়েছে যা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাকেই বেশি বেশি করে সুরা ইয়াসিন পাঠ করার তাওফিক দান করুক।

 

লেখক : খতিব  মসজিদে বায়তুন নূর, মাওনা, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads