• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

ইসলামে নিয়তের গুরুত্ব

  • প্রকাশিত ০৩ জানুয়ারি ২০২১

মু. সায়েম আহমাদ

 

 

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু করি না কেন সকল কিছুই নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। হোক সেটা ছোট কিংবা বড় কোনো কাজ। প্রত্যেক কাজে নিয়ত বিশুদ্ধ হতে হবে। নিয়ত আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা, স্পৃহা, মনের দৃঢ়সংকল্প। শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোনো কাজ বা আমলের দিকে মনোনিবেশ করাকে নিয়ত বলে। মূলত আমাদের প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা কি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিয়ত করি? একটা প্রশ্ন থেকে যায়। আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজে বিশুদ্ধ নিয়ত থাকা জরুরি। নামাজ, রোজা থেকে শুরু করে সকল কিছুতেই নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া জরুরি। যদি নিয়ত বিশুদ্ধ না থাকে তাহলে কাজটি যতই সুন্দর হোক না কেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব নয়। আল্লাহর কাছে সেই কাজ গ্রহণযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয় না। নিয়ত সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘বলে দাও যেন প্রত্যেকেই নিজ নিজ নিয়ত অনুযায়ী কাজ করে।’ (বন িইসরাইল-৮৪)।

আমরা সাধারণত দুনিয়া লাভের আশায় নিয়ত করে থাকি; কিন্তু পরকালে শান্তি লাভের আশায় নিয়ত করি না। এ ব্যাপারে পবিত্র আল কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, যে কেউ পরকালীন ফসল চায়, তার ফসল বৃদ্ধি করি। আর যে লোক দুনিয়ার ফসল চায় তাকে দুনিয়ায় হতে দান করি। কিন্তু পরকালের তার কিছুই প্রাপ্য হবে না। (সুরা আশ শুরা-২০)। অন্যত্র মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ার নিয়ত রাখবে, আমি তাকে ইহজগতে যতটুকু ইচ্ছা প্রদান করব। অতঃপর তার জন্য দোজখ নির্ধারণ করব। সে এতে দুর্দশাগ্রস্ত বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আখেরাতের নিয়ত রাখবে এবং তার জন্য যেমন চেষ্টার প্রয়োজন তেমন চেষ্টাও করবে। যদি সে প্রকৃত মুমিন হয় এরূপ লোকদের চেষ্টা কবুল হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ১৮-১৯)

পবিত্র আল কোরআন ছাড়াও হাদিস শরিফে নিয়তের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের সৌন্দর্য ও সম্পদের দিকে দেখেন না; বরং তোমাদের অন্তঃকরণ ও কাজের দিকে লক্ষ করেন।’ (সহিহ মুসলিম)। অন্য আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- হজরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত- ‘তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের বলেন, আমার বান্দা কোনো গুনাহের কাজ করার নিয়ত করলে তা না করা পর্যন্ত তার জন্য কোনো গুনাহ লিপিবদ্ধ করো না। তবে সে যদি গুনাহের কাজটি করে ফেলে, তাহলে কাজটির অনুপাতে তার গুনাহ লিখ। আর যদি আমার কারণে তা পরিত্যাগ করে তাহলে তার জন্য একটি নেকি লিপিবদ্ধ করো। সে যদি কোনো নেকির কাজ করার জন্য ইচ্ছা বা নিয়ত করে কিন্তু এখনো তা করেনি তাহলে তার জন্য একটি নেকি লিপিবদ্ধ করো। আর যদি কাজটি সে করে তাহলে তার জন্য দশগুণ থেকে (আন্তরিকতা অনুপাতে) সাতশ গুণ পর্যন্ত নেকি লিপিবদ্ধ করো।’ (সহিহ বুখারি)।

উল্লিখিত কোরআন ও হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, নিয়তের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। নিয়ত ছাড়া কোনো আমল গ্রহণযোগ্যতা পাবে না মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে। আমরা প্রতিটি কাজ নিয়তের ওপর অবিচল থাকব এবং নিয়ত অনুসারে প্রত্যেকটি কাজ সম্পাদনা করব। আর এ জন্যই জীবনের প্রতিটি কাজে নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়াটা জরুরি।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ শাখা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads