• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ১৫ ঘণ্টায় কোরআন শেখার মেথড

  • প্রকাশিত ০৪ জানুয়ারি ২০২১

আল ফাতাহ মামুন

 

পবিত্র কোরআনের সুরা কামারে আল্লাহতায়ালা চার চারবার বলেছেন, ‘বোঝার জন্য এ কোরআন আমি সহজ করে দিয়েছি।’ আয়াতটি সদ্য মাওলানা পাশ করা এক যুবকের হূদয়ে এমনই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যে, ‘মাত্র পনের ঘণ্টায় কোরআন শিক্ষার আশ্চর্য এক পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেলেন তিনি। তার ভাষায়, ‘বোঝা যদি সহজ হয়, তাহলে পড়া আরো সহজ হবে।’ যেই ভাবা সেই কাজ। মাত্র দুই জন ছাত্র নিয়ে শুরু করলেন সহজে কোরআন শেখানোর মেহনত। ২০০৪ সালে শুরু হওয়া ইকরা কোরআন শিক্ষা ফাউন্ডেশনের শিক্ষার্থী সংখ্যা আজ পনের হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ইকরা কোরআন শিক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাওলানা এম. আনিসুর রহমান আকন্দ বলেন, সাফল্যের ১৭ বছরে আমাদের অর্জন হলো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও আমাদের সহজ কোরআন শেখার মেথড ছড়িয়ে পড়েছে। এ বছর আমরা ইকরা জামিয়াতুল আরাবিয়্যাহ নামে নতুন আঙ্গিকে পথচলা শুরু করেছি। এখন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবাসিক কোরআন শিক্ষা ও হেফজ সেবা দেব আমরা।

বয়স্কদের কোরআন শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শুরু হলেও এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পরিচালককে বলেন, হুজুর! আপনার এ পদ্ধতি শিশুদের জন্য আরো বেশি উপযোগী। তখন শিশুদেরও কোরআন শেখানো শুরু করেন পরিচালক। তারপর আরজি উঠে নারীদের কোরআন শেখানোর জন্য। এপর্যন্ত ইকরা জামিয়াতুল আরাবিয়্যাহর নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। পরিচালক বলেন, দীর্ঘ সতের বছর কোরআন শেখানোর অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, আমাদের দেশের বড় সংখ্যক মুসলিম ভাই-বোন এখনো সহিহভাবে কোরআন পড়তে পারে না। এর প্রধান কারণ হলো, কোরআন শেখা যে সহজ এটা তারা বিশ্বাসই করে না। আমার সঙ্গে যারাই কথা বলেন, সর্বপ্রথম প্রশ্নই থাকে- ‘আমি পারব তো?’ অভয় দিয়ে বলি, অবশ্যই পারবেন এবং মাদরাসা পড়ুয়াদের মতোই পারবেন। পরিচালক বলেন, কোর্স শেষে শিক্ষার্থীরা যখন সাবলীলভাবে কোরআন পড়তে পারেন তখন অনেকেই বলেন, বহু বছর চেষ্টা করেও আমরা কোরআন শিখতে না পেরে চেষ্টা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আপনি অসাধ্য সাধন করলেন। জবাবে আমি বলি, আসলে আমাদের দেশের কোরআন শিক্ষা বা হেফজ পদ্ধতিতে এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। কোরআন শিক্ষকরা যদি একটু কষ্ট করে ইন্টারনেটে সার্চ করেন তাহলেই দেখতে পাবেন-কতটা আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত টেকনিকে কোরআন শেখানো হয় এবং কতটা হাস্যোজ্জ্বল-আনন্দমুখর পরিবেশে শিশুদের কোরআন হেফজ করানো হয়। আমাদের দেশে আজো কোরআন শিক্ষালয়ে লাঠির ব্যবহার করতে হয়। এ ট্রেডিশন বন্ধ হওয়া দরকার। দরদি মালী মাওলানা আবু তাহের মেসবাহও এক আলোচনায় বলেছেন, প্রচলিত হেফজ পদ্ধতির পুরোটাই আধুনিক মডেলে ঢেলে সাজানো সময়ের দাবি।

সহিহ তেলাওয়াত শেখানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কোরআনের অর্থ জানাতে শুরু থেকেই ইকরা জামিয়াতুল আরাবিয়্যাহ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। পরিচালক বলেন, কোরআন নাজিল হয়েছে বুঝে আমল করার জন্য। শিক্ষার্থীদের সবসময় বলি, আমরা কোরআন পড়া শেখব বোঝা ও আমলের নিয়তে। তাহলেই কোরআন নাজিলের উদ্দেশ্য সফল হবে। কোরআনের ৩০তম পারাসহ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলোর অনুবাদ তিনি নিজেই পড়িয়ে দেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের মাঝে কোরআন বোঝার জজবা তৈরি হয়ে যায়। ইকরা জাতিয়াতুল আরাবিয়্যাহর শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচিব, ব্যাংকার, চিকিৎসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যাই বেশি। তাদের সন্তানরাও এ প্রতিষ্ঠান থেকে সহজে কোরআন এবং ইসলামের মৌলিক বিধানগুলো শিখতে পারছে।

প্রতিষ্ঠানটির নতুন আকর্ষণ হলো প্রতিদিন মাত্র দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় করে যে কেউ অল্প সময়ে কোরআন হেফজ সম্পন্ন করতে পারবে। এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্ঠান থেকে হেফজ সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে আবাসিক-অনাবাসিক কোরআন শিক্ষা ও হেফজ কার্যক্রম চলছে। পরিচালক মাওলানা এম. আনিসুর জানিয়েছেন, এখনো এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোনো সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না। তবে প্রক্রিয়া চলছে, অচিরেই সার্টিফিকেট দেওয়া শুরু করব। পরিচালক আরো বলেন, বাস্তবতা হলো আমাদের দেশের অভিভাকরা অসম্ভব রকম ধর্মদরদি। পনেরো দিন শেষে সন্তান যখন থ্রোলি কোরআন পড়তে পারে, নামাজ শিক্ষা ও অল্পবিস্তর মাসলা-মাসায়েল বলতে পারে, তখন অভিভাকদের মুখে প্রশান্তির হাসি দেখতে পাই। অভিভাকদের মানসিকতা বদলানোর পাশাপাশি কোরআন শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও সেবার মানও বাড়াতে হবে।

ইকরা জামিয়াতুল আরাবিয়্যাহর একাধিক বয়স্ক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, এত সহজে অল্প সময়ে কোরআন শেখার এমন সুবর্ণ সুযোগ আর কোথাও আছে কি না আমাদের জানা নেই। শিশু শিক্ষার্থীরা বলে, আমরা আনন্দের সঙ্গে কোরআন শিখছি। কোনো কারণে ক্লাস বন্ধ থাকলে আমাদের ভালো লাগে না। করোনার সময় আমরা অনলাইনে কোরআন পড়া চালু রেখেছি। অনেক শিক্ষার্থীই বলেছেন, সাবলীলভাবে কোরআন পড়া শেখা শেষ হলে হেফজ কোর্স চালু করব। বন্ধুদের থেকে শুনেছি, কোরআন হেফজ করা খুবই সহজ।

এখন পর্যন্ত ইকরা জামিয়াতুল আরাবয়্যািহ প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালকের লিখিত দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। সহজ আধুনিক কোরআন শিক্ষা ও নামাজ শিক্ষা এবং অর্থসহ আমপারা। পরিচালক বলেন, আমাদের এ প্রতিষ্ঠান থেকে মুয়াল্লিম ট্রেনিং নিয়ে সারা দেশে অনেকেই ১৫ ঘণ্টায় কোরআন শিক্ষা কোর্স পরিচলানা করছে। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় বিশুদ্ধ কোরআন পাঠ ও কোরআনের অর্থ বোঝার আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়াই আমাদের স্বপ্ন। মানুষ যখন কোরআন বুঝবে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে তখনই দেশ থেকে অন্যায়-অনাচার-দুর্নীতি কদাচার দূর হবে এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।

 

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads