• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

উত্তম চরিত্র ইসলামের অনন্য শোভা

  • প্রকাশিত ১২ জানুয়ারি ২০২১

মেহেদী হাসান সাকিফ

 

 

 

সুন্দর চরিত্র বহুদূরের মানুষকেও খুব সন্নিকটে নিয়ে আসে। কাছের মানুষ পরিণত হয় আরো ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর। সুন্দর চরিত্রই পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী থেকে উচ্চতর মর্যাদার কারণ। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের মূর্ত প্রতীক। মক্কার বর্বর কাফের মুশরিকরাও নবীজির মধুমাখা আচরণে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ স্বয়ং নবীজির চরিত্রের স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়ে বলেন"‘আর নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম, আয়াত-৪) আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা)কে আল্লাহর নবী চরিত্র সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেন,  কোরআনই ছিল তাঁর চরিত্র।’ (মুসলিম, হাদিস নং-১৭৭৩)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, কোন আমলের কারণে মানুষ বেশি জান্নাতে যাবে? তিনি বললেন, আল্লাহভীতি ও সুন্দর আচরণ।’ (জামে তিরমিযি, হাদিস নং-  ২০০৩) সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে সরাসরি উত্তম চরিত্রের শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েছিলেন। নিজেদের চরিত্রে ধারণ করে উম্মতের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং কেয়ামত দিবসে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী তারা হবে, যারা তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হবে। আর সবচেয়ে অপছন্দনীয় ও কেয়ামত দিবসে আমার থেকে দূরবর্তী হবে তারা, যারা তোমাদের মধ্যে সারসার (বাচাল), মুতাশাদ্দিক (দাম্ভিক কণ্ঠি) ও মুতাফাইহিক (অহংকারী)।’ (জামে তিরমিযি, হাদিস  নং-  ২০১৮)

আমরা সব সময় অন্যের কাছে ভালো ব্যবহার প্রত্যাশা করি। কিন্তু নিজেরা অন্যের সাথে ভালো ব্যবহার করার বিষয়টি মোটেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করি না। কেউ মন্দ আচরণ করলে বিপরীতে তার সাথে উত্তম আচরণ করাই ইসলামের শিক্ষা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘সমান নয় ভালো ও মন্দ। জবাবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সঙ্গে যার শত্রুতা রয়েছে, সেও যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ (সুরা হামিম সিজদাহ, আয়াত-৩৪) এ আয়াতের তাফসিরে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘এ আয়াতের নির্দেশ এই যে, যে ব্যক্তি তোমার প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করবে, তার মোকাবিলায় তুমি ধৈর্য ধারণ কর। যে তোমার প্রতি মূর্খতা প্রকাশ করে, তুমি তার প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শন কর এবং যে তোমাকে জ্বালাতন করে, তুমি তাকে ক্ষমা কর!’ (তাফসিরে মাজহারি)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ শুধু উত্তম চরিত্র গঠনের তাগিদ দিয়েই ক্ষান্ত হননি, রূঢ় আচরণের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন-‘দুর্ভোগ প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী পাপীর, যে আল্লাহর আয়াতের তেলাওয়াত শোনে অথচ অহংকারের সাথে অটল থাকে যেন তা সে শোনেনি। তাকে সুসংবাদ দাও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির। যখন আমার কোনো আয়াত সে অবগত হয় তখন সে তা ঠাট্টা-বিদ্রূপচ্ছলে গ্রহণ করে। তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। তাদের পশ্চাতে রয়েছে জাহান্নাম; তাদের কৃতকর্ম তাদের কোনো কাজে আসবে না, তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে অভিভাবক স্থির করেছে তারাও নয়। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।’ (সুরা জাসিয়াহ, আয়াত : ৭-১০)

সুন্দর আচরণ বলতে আমরা বুঝি কারো সাথে সুন্দর করে কথা বলা। দেখা হলে সালাম দেওয়া। কুশলাদি জিজ্ঞেস করা। কর্কশ ভাষায় কথা না বলা, ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত না হওয়া। ধমক বা রাগের স্বরে কথা না বলা। গীবত বা পরনিন্দা না করা। অপমান-অপদস্ত না করা। উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা। গম্ভীর বা কালো মুখে কথা না বলা। সর্বদা হাসিমুখে কথা বলা। অন্যের সুখে সুখী হওয়া এবং অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া। বিপদে দেখা করে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা; এগুলো সুন্দর আচরণের অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীতে এটা পেলাম না, ওটা পেলাম না এই অফসোসে প্রতিনিয়ত নিজে দুঃখ বেদনায় বিদগ্ধ হয় মানুষ। তবে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির বেলায় এমনটা হয় না। সুন্দর চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি সবার কাছে বিশেষ মর্যাদার আসীনে উপনীত হন। ইসলামের এই সুন্দর চরিত্র গঠনের শাশ্বত শিক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুনিয়াতে যেমন একটি সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে সক্ষম, তেমনিভাবে পরকালে লাভ করা সম্ভব চিরসুখের অনাবিল জান্নাত। আল্লাহ আমাদের সবার সহায় হোন। আমিন!

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads