• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

কল্যাণকামনাই ‘দীন’

  • প্রকাশিত ২৩ জানুয়ারি ২০২১

মুফতি উবায়দুল হক খান

 

ইসলাম শ্রেষ্ঠ ধর্ম। শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। দুইটি বিষয়ের সমন্বয়ের নামই ইসলাম। তন্মধ্যে একটি হলো আল্লাহর হক এবং আরেকটি বান্দার হক। সহিহ মুসলিমসহ ১৬টি হাদিসগ্রন্থে বর্ণিত একটি হাদিসে ‘আল্লাহর হক’ ও ‘বান্দার হক’ উভয়টিকে কল্যাণকামনা বলে অভিহিত করা হয়েছে। হাদিসটি হলো : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘কল্যাণকামনাই হলো দীন’। সাহাবীগণ বললেন, কার কল্যাণকামনা? তিনি বললেন, ‘আল্লাহ, আল্লাহর কিতাব, আল্লাহর রাসুল, মুসলিমদের নেতা ও সাধারণের।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৫৫) এ হাদিসে যাদের কল্যাণকামনা করার কথা বলা হয়েছে, তন্মধ্যে প্রথম তিনটির কল্যাণকামনা মানে তাঁদের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করা। আর তাঁদের নির্দেশে ‘আল্লাহর হক’ ও বান্দার হক’ উভয়টি পালনের কথা রয়েছে। তবে পরের দুইটির কল্যাণকামনায় শুধু বান্দার হকই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

‘দীন কী’, ‘ইসলাম কী’ এ প্রশ্নের উত্তর  কোরআন ও হাদিসে যেমন একবাক্যে দেওয়া হয়েছে, তেমনি ব্যাখ্যা করেও দেওয়া হয়েছে। একবাক্যে দেওয়ার দুইটি দৃষ্টান্ত হলো আল্লাহর এ কথাগুলো-‘যে আল্লাহর নির্দেশকে আঁকড়ে ধরল, সেই সঠিক পথের দিশাপ্রাপ্ত হলো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত -১০১) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-‘ওই জান্নাতের অধিকারী আমি কেবল আমার মুত্তাকী বান্দাদেরকেই করব।’ (সুরা মারইয়াম, আয়াত-৬৩) এ আয়াতদ্বয়ের প্রথমটি দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, আল্লাহর নির্দেশকে আঁকড়ে ধরার অপর নামই হচ্ছে ‘ইসলাম’ বা ‘দীন পালন’। আর দ্বিতীয়টি দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, তাকওয়ার অপর নামই হচ্ছে ‘ইসলাম’ বা ‘দীন পালন’। আর এই দুইটিরই দৃষ্টান্ত হলো আল্লাহর এ কথাগুলো-‘যারা ঈমান এনেছে ও সঠিক কাজগুলো করেছে, তাদের জন্যই রয়েছে সুসংবাদ ও সুন্দর প্রত্যাবর্তনস্থল।’ (সুরা আর রাদ, আয়াত-২৯) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- ‘সময়ের শপথ! সব মানুষই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে যারা ঈমান এনেছে, সঠিক কাজগুলো করেছে, একে অপরকে সত্যের পথে ডেকেছে এবং একে অপরকে ধৈর্যের উপদেশ করেছে, তারা নয়।’ (সুরা আল আসর, আয়াত : ১-৩)

 

মানুষ দুই প্রকার, যথা- ১. নেতা তথা নিজের থেকে উপরের লোক। ২. সাধারণ লোক তথা নিজের সমান বা নিচের লোক। উপরিউক্ত হাদিসে উভয়প্রকার মানুষের কল্যাণকামনাকে দীন বলা হয়েছে। নেতার কল্যাণকামনা ও সাধারণ লোকের কল্যাণকামনা কীভাবে করতে হবে, চিন্তা করলে তা যে কোনো মানুষের বুঝে আসার কথা। তারপরও এখানে নেতা ও সাধারণ লোকের কল্যাণকামনার কিছু পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো।

 

নেতার কল্যাণকামনা : এক. তার নির্দেশ মেনে চলা। দুই. কেবল আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধে গেলেই সংশ্লিষ্ট ব্যাপারটি সম্পর্কে অবহিতকরণপূর্বক তাকে অমান্য করা। তিন. সাধারণ ভুলে তাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা। চার. মারাত্মক ভুল করলে সে ব্যাপারে তাকে সাথে সাথে অবহিত করা এবং ওই ভুল স্বীকার করে তা থেকে বিরত থাকলে তার প্রতি পূর্বের মতোই সুধারণা বজায় রাখা। পাঁচ. তার যে কোনো বৈধ প্রয়োজন পূরণ করা। ছয়. কেউ তাকে কথা বা কর্ম দ্বারা জুলুম করলে তা থেকে তাকে উদ্ধার করা। সাত. কাউকে তার সম্পর্কে মিথ্যা বলতে দেখলে তাতে বাধা দেওয়া। আট. যে কোনো বিপদে তাকে সহায়তা করা। নয়. প্রয়োজনের সময় তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা।

 

সাধারণ লোকের কল্যাণকামনা : এক. যে কোনো বিপদাপদ, অভাব ও অসুস্থতায় তাদের খোঁজখবর নেওয়া এবং পরামর্শ ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করা। দুই. জরুরি ও বৈধ প্রয়োজন মেটানোর জন্য তাদেরকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা। তিন. কেউ তাদের কাউকে কোনো দিক দিয়ে জুলুম করলে তা থেকে তাকে উদ্ধার করা। চার. কাউকে তাদের কারো সম্পর্কে মিথ্যা বলতে দেখলে বাধা দেওয়া। পাঁচ. সাধারণ ভুলে সবাইকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা। ছয়. তাদের কেউ মারাত্মক ভুল করলে সে ব্যাপারে তাকে সাথে সাথে অবহিত করা এবং ওই ভুল স্বীকার করে তা থেকে বিরত থাকলে তার প্রতি পূর্বের মতোই সুধারণা বজায় রাখা।

 

মানুষের কল্যাণকামনা বিষয়ে বর্ণিত আরো কয়েকটি বিশুদ্ধ হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো-হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ইসলাম গ্রহণের সময় আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নামাজ প্রতিষ্ঠা, জাকাত প্রদান ও প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণকামনার ওপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৫৭) হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তা তার [অপর] ভাইয়ের জন্য পছন্দ করবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-১৩) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে এ অবস্থায় সকাল করল যে, আল্লাহর প্রতি তার কোনো দাসত্ববোধ নেই, তাহলে আল্লাহর কাছে তার কোনো মূল্য থাকবে না। আর যে এ অবস্থায় সকাল করল যে, মুসলমানদের প্রতি তার কোনো দায়িত্ববোধ নেই, তাহলে সে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হবে না।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস নং-৭৯০২)

 

উপরিউক্ত হাদিসগুলো দ্বারা এ বিষয়টা স্পষ্ট হলো যে, কোনো মুসলিম আরেক মুসলিমকে জুলুম ও তার প্রতি হিংসাতো পোষণ করতে পারবেই না; বরং আরেক মুসলিমের সহযোগিতা ও কল্যাণকামনা করাই তার অপরিহার্য দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালন না করে কেউ নিজেকে মুসলিম বা দীনদার মনে করলে তা চরম ভুল হবে। আল্লাহ আমাদের হেদায়াত দান করুন। আমিন!

 

লেখক : মুহাদ্দিস ও সহকারী শিক্ষা সচিব, জামিআতুস সুফফাহ আল ইসলামিয়া গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads