• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

ক্ষমার বিরল দৃষ্টান্ত

  • প্রকাশিত ২৫ জানুয়ারি ২০২১

আবদুল্লাহ শাকের

 

 

 

সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী বাইতুল মাকদিসের পথ ধরে হাঁটছেন। এমন সময় খ্রিষ্টানধর্মের একজন বয়ষ্ক লোক এসে জিজ্ঞেস করল, ‘হে প্রিয় মহান নেতা! আপনার তো শক্তি-সামর্থ্য আছে শত্রুদের থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার। তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার। তবু কেন তাদেরকে শাস্তি দিচ্ছেন না! কেন তাদের থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছেন না! আপনি কেন তাদের সাথে সেরকম আচরণ করছেন না যেরকম আচরণ তারা আপনাদের সাথে করেছে। আর আপনি জানেনও তারা কত রকম অন্যায়-অপরাধে লিপ্ত ছিল। তারা সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন করেছে। আপনাদের পুরুষদেরকে তারা গণহারে কতল করেছে। যখন বাইতুল মাকদিস বিজয় করেছিল তারা।’

আগত লোকটির সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন সুলতান। তার বক্তব্য শুনে বললেন, ‘জনাব! আমি একজন মুসলমান। ইসলাম আমার ধর্ম। ইসলাম আমাকে শান্তি ও সম্প্রীতির বাঁধুনি অটুট রাখতে শেখায়। আমার ধর্ম আমাকে বাধা দেয় অকারণে কোনো মানুষকে শাস্তি দিতে। কারো থেকে প্রতিশোধ নিতে। তারা যা করেছে তা না বুঝার দরুন করেছে। আর আমার ধর্মের শিক্ষা হলো প্রতিটি প্রাণীকেও আরাম পৌঁছাতে হবে। কাজেই তাদের মতো আচরণ আমি কখনো করতে পারি না। আমি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’ বৃদ্ধ লোকটি বলল, আপনাদের ধর্ম কী এমন সম্প্রদায়ের থেকেও প্রতিশোধ নিতে বাধা দেয় যাদের শুরুটাই হয়েছিল আপনাদের সাথে শত্রুতামি করে। আর মানুষকে পৌঁছিয়েছে নানারকম শাস্তি, কষ্ট ও নিপীড়ন! সুলতান জবাব দিলেন, হ্যাঁ। আমাদের ধর্ম আমাদেরকে বাধা দেয় শত্রুতাবশত কারো থেকে প্রতিশোধ নিতে। আমাদের ধর্মের শিক্ষা হলো মন্দ আচরণকারীকে ক্ষমা করে দেওয়া। অপরাধীকে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও মার্জনা করে দেওয়া। বৃদ্ধ লোকটি বলল, বাহ! এধর্ম কত উত্তম ধর্ম! আমি আল্লাহর তারিফ করছি যিনি জীবনের এই শেষ লেন আমাকে হেদায়াত দান করেছেন। লোকটি বলল, কী করতে হবে এই ধর্মে প্রবেশ করতে হলে। সুলতান বললেন, একথা বিশ্বাস করতে হবে যে আল্লাহতায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহতায়ালার রাসুল। আল্লাহর আদেশ মেনে চলতে হবে। নিষেধসমূহ থেকে দূরে থাকতে হবে। বৃদ্ধ লোকটি সুলতানের হাত ধরে ইসলাম গ্রহণ করলেন। তার সাথে তার সম্প্রদায়ের আরো অনেকেই ইসলাম কবুল করলেন। আহ! কত সুন্দর তার ও তার সম্প্রদায়ের ইসলাম কবুল।

অন্য একদিনের ঘটনা। সুলতান তাঁবুর ভেতরে বসা ছিলেন। এদিকে তাঁবুর বাইর দিয়ে যাচ্ছিল একজন খ্রিষ্টান মহিলা। মহিলাটি জোরে জোরে চিৎকার করছিল। একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। ফলে সুলতানের প্রহরীরা মহিলাটিকে তাঁবু থেকে দূরে এক জায়গায় রেখে এল। কিন্তু সুলতান মহিলার আওয়াজ শুনে সাথে সাথে অর্ডার করলেন তাকে তাঁবুতে নিয়ে আসতে। তাঁবুতে নিয়ে আসা হলে মহিলাকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে নারী তুমি কাঁদছ কেন! পরক্ষণেই মহিলা জবাব দিল, ডাকাতরা আমার আদরের দুলাল শিশু-সন্তানটিকে নিয়ে গেছে। যুদ্ধে আমার স্বামীকে তারা আটক করেছে। তিনিই আমার যাবতীয় খরচাদি বহন করতেন। এখন আমি তাদের অনুপস্থিতিতে সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছি।

মহিলার কথা শুনে সুলতান যারপরনাই ব্যথিত হলেন। ভীষণ চিন্তিত হলেন। সাথে সাথে তিনি আদেশ দিলেন বন্দিদের মাঝ থেকে তার স্বামীকে ফিরিয়ে আনার জন্য। ছিনিয়ে নেওয়া শিশুটিকে তলবের জন্য। উভয়কে তলব করে হাজির করা হলো। মহিলা প্রাণের স্বামী আর কলিজার শিশু-সন্তানকে কাছে পেয়ে আনন্দে উৎফুল্ল হলো। সুলতানের জন্য দোয়া করতে লাগল হে আল্লাহ! তার বয়সে তুমি বরকত দান করো। সুলতান তখন বললেন, এটা আমি বেশি কিছু করিনি। করেছি আমার ধর্মের খাতিরে। কারণ আমার ধর্ম আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে। মহিলা জানতে চাইল, আপনাদের ধর্ম কী শত্রুদেরকেও দয়া ও অনুকম্পা করতে আদেশ দেয়? দুর্বলদেরকে সহযোগিতা করতে তাগিদ দেয়? সুলতান জবাব দিলেন, হ্যাঁ। এই পৃথিবীতে ইসলামই হলো একমাত্র আল্লাহর কাছে মনোনীত ধর্ম। ইসলামই তামাম মানুষের জন্য রহমতস্বরূপ। প্রত্যেক গোষ্ঠী-জ্ঞাতির জন্য শান্তিদায়ক। মহিলা বলল, আমি এই ধর্মের ছায়াতলে আসতে চাই। কীভাবে আসবো তাহলে? সুলতান বললেন, এটা তো খুবই সহজ ব্যাপার। তুমি সাক্ষ্য দাও ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’। অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল। মহিলা সুলতানের মুখে শুনে শুনে শাহাদাতদ্বয় পাঠ করে মুসলমান হলেন। আর তার সাথে মুসলমান হলেন তার স্বামী এই মহান নেতার কোমল বিমল আচরণে মুগ্ধ হয়ে।

 

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার

emailamshaker98@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads