• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

যে আমলে ঈমান বৃদ্ধি পায়

  • প্রকাশিত ২৮ জানুয়ারি ২০২১

মেহেদী হাসান সাকিফ

 

 

ইমান মুমিনের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। একজন মুমিন ঈমানের বদৌলতে দুনিয়ার জীবনে যেমন মহান আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করেন। তেমনিভাবে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনেও চিরসুখের জান্নাত লাভ করবেন। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে, আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক জীবনে আমরা ইসলামের অন্যান্য আমলের বিষয়ে যতটা সচেতন ঈমানের বিষয়ে ততটাই অসচেতন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেও ঈমান শিক্ষার বিষয়টি একেবারেই অবহেলিত। বর্তমানে এই আধুনিক যুগে গোটা জীবনটাই হয়ে গেছে দুনিয়ামুখী। আমরা নামাজ পড়ি, চিন্তা করি সুস্থতা আনবে! রোজা রাখি, আলসার সারবে। যা মোটেও ঠিক নয়। যা মুমিনের সবচেয়ে বড় পরাজয়, সবচেয়ে বড় ক্ষতি। আমরা একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য আমল করব। যা আল্লাহর কাছে আমল কবুলের পূর্বশর্ত। যা আমাদের ঈমান বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। আমাদের ঈমান বৃদ্ধির জন্য সর্বপ্রথম ইসলামের ফরজ বিধান যথাযথভাবে পালন করতে হবে। পাশাপাশি কবিরা গুনাহ পরিত্যাগ করতে হবে। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম বলেছেন : ‘কোনো জিনাকারী যখন জিনা করে তখন তার ঈমান থাকে না।’ (সহিহ বুখারি হাদিস নং ২৪৭৫)

নেককার লোকদের সাহচর্য গ্রহণ করতে হবে, যা আমাদের বেশি বেশি নেক আমলের দিকে ধাবিত করবে ও গুনাহ থেকে বিরত রাখতে সহায়তা করবে। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)। বেশি থেকে বেশি নেক আমলের অভাস গড়ে তুলতে হবে। যিনি যত বেশি নেক আমল করবেন তার ঈমান তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় ঈমান আনার সাথে আমলে সলেহ (অর্থাৎ নেক আমল) করার পরামর্শ দিয়েছেন। আল্লাহর গুণবাচক নাম ও গুণাবলি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আল্লাহর গুণবাচক নাম, গুণাবলি, বড়ত্ব, মহত্ত্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান যত বৃদ্ধি পাবে আমাদের ঈমান তত বাড়বে।

অর্থ বুঝে ধীরস্থিরভাবে কোরআনের তেলাওয়াত করতে হবে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে ওঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের ওপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের ওপরই ভরসা করে। (সুরা আনফাল, আয়াত: ২)। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশুদ্ধ জীবনী ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর জীবনী পাঠ করতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষ যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৩)। এ আয়াতের তাফসিরে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবারা যেভাবে ঈমান এনেছে, তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো।’ (তাফসিরে তাবারি)

দুনিয়ার জীবনের তুচ্ছতার কথা স্মরণ করতে হবে। আখিরাতমুখী জীবন গঠন করতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি দুনিয়ার মূল্য আল্লাহর কাছে মাছির একটি পাখার সমমূল্য হতো, তাহলে তিনি কোনো কাফিরকে এক ঢোকও পানি পান করতে দিতেন না। (আহমাদ, মিশকাত হাদিস: ৫১৭৭)। আল্লাহর জন্য মানুষকে ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করার আমলের প্র্যাকটিস করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য প্রদান করে এবং আল্লাহর জন্য প্রদান থেকে বিরত থাকে, সে ঈমান পরিপূর্ণ করেছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৮১)। মোটকথা আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে ঈমান বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। আল্লাহ যেন আমাদের দুনিয়ার জীবনে ঈমানকে সবচেয়ে প্রিয় করে দেন এবং ঈমান হ্রাস পায় এমন কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দেন। আমিন।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads