• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

সকাল-সন্ধ্যার ফজিলতপূর্ণ ১০ আমল

  • প্রকাশিত ৩০ জানুয়ারি ২০২১

উসমান বিন আবদুল আলিম

 

 

উভয় জাহানের প্রশান্তি পেতে কে না চায়! কে না চায় দুনিয়ার সব ধরনের বিপদাপদ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে, জান্নাত লাভ করতে! অল্প আমলে অনেক পুরস্কার পেতে! মুসলিম মাত্রই আমাদের এতটুকু চাওয়া-পাওয়া। আমি আপনাদের সামনে এরকমই সকাল-সন্ধ্যার ছোট-ছোট ফজিলতপূর্ণ কিছু বিশেষ আমল হাদিসের আলোকে বর্ণনা করবো। যেসব আমল আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী ও ফজিলতপূর্ণ।

এক. সব ধরনের আসমানি এবং জমিনের বিপদাপদ থেকে হেফাজত থাকার দোয়া। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা তিনবার করে এই দোয়াটি পাঠ করবে, তাকে কোনো জিনিসের ক্ষতি পৌঁছাতে পারবে না। দোয়াটি হলো-উচ্চারণ : ‘বিস্‌মিল্লা-হিল্লাজি লা ইয়াদ্বুররু মাআ ইস্‌মিহী শাইউন ফিল্ আরদ্বি ওয়ালা ফিসসামা-ই, ওহুয়াস সামীউল-আলীম’। অর্থ : ‘আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি, যাঁর নামের সাথে আসমান ও জমিনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী’। (তিরমিজি, হাদিস নং-৩৪১০) অর্থাৎ সেই বান্দা সব ধরনের বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত থাকবেন। তাকে কোনো জিনিসে ক্ষতি করতে পারবে না।

দুই. কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টলাভের দোয়া। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক সকাল-সন্ধ্যা তিনবার এই দোয়া পড়বে, আল্লাহতায়ালা নিজের ওপর আবশ্যকীয় করে নেন কেয়ামতের দিন সেই বান্দাকে খুশি করানো। দোয়ার উচ্চারণ : ‘রাযীতু বিল্লাহি রব্বাওঁ ওয়াবিল ইসলামী দ্বীনাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা’। অর্থ : আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দীন হিসেবে ও মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং-৩০১১) অর্থাৎ, কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তাকে অগণিত সাওয়াব দিয়ে সন্তুষ্ট করে  দেবেন। সে তখন এই সাওয়াবের পাল্লা ভারী হওয়ার কারণে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

তিন. আল্লাহর রাত-দিনের শুকরিয়া আদায় করার দোয়া। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে (এই দোয়া) বলবে, সে দিনের শোকর আদায় করল। দোয়াটি হলো- উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা মা আসবাহা বী মিন নিমাতিন আও বি-আহাদিন মিন খলকিকা ফা-মিনকা ওহদাকা লা-শারীকালাক। লাকালহামদু ওলাকা-শশুকরু’। অর্থ : ‘ইয়া আল্লাহ! এই সকালে আমার মাঝে বা আপনার যে কোনো সৃষ্টির মাঝে যা কিছু নেয়ামত, সব আপনারই তরফ থেকে। আপনি একক, আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং আপনারই হামদ, আপনারই শোকর। আর যে সন্ধ্যায় (নিম্নোক্ত দোয়া) পড়লো সে ওই রাতের শোকর আদায় করল। উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা মা আমসী বী মিন নিমাতিন আও বি-আহাদিন মিন খালকিকা ফা-মিনকা ওহদাকা লা-শারীকালাক, লাকালহামদু ওলাকা-শশুকরু’। অর্থ : ইয়া আল্লাহ! এই সন্ধ্যায় আমার মাঝে বা আপনার যে কোনো সৃষ্টির মাঝে যা কিছু নেয়ামত, সব আপনারই তরফ থেকে। আপনি একক, আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং আপনারই হামদ, আপনারই শোকর।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৫০৭৩)

চার. জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির দোয়া। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে কানে কানে বললেন, যখন মাগরিবের নামাজের সালাম ফেরাবে, তখন কারো সঙ্গে কথা বলার আগে এই দোয়াটি সাত বার পড়বে। উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান নার’। অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন। যদি তুমি পড় আর ওই রাতেই তুমি মারা যাও তাহলে তোমার জাহান্নাম থেকে মুক্তির ফায়সালা লিখে দেওয়া হবে। ফজরের নামাজের পরও এ (উপরিউক্ত) দোয়াটি একই নিয়মে সাতবার পড়বে। অতঃপর যদি তুমি পড়ে থাক আর ওই দিনেই তুমি মারা যাও তাহলে তোমার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির ফায়সালা লিখে দেওয়া হবে। (আবু দাউদ, হাদিস নং-৫০৮১)

পাঁচ. দুনিয়া ও আখেরাতে প্রশান্তিলাভের দোয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সন্ধ্যা ও সকালে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেন-উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাতি। আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আ-ফিয়াতা ফী দ্বীনী ওফী দ্দুনইয়াইয়া, ওয়া আহ্‌লী ওয়া মা’লী, আল্লাহুম্মাসতুর আওরাতী ওয়া আমিন রাওআতি। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া আন ইয়ামীনী ওয়া শিমালী ওয়ামিন ফাওকী। ওয়া আঊযু বি’আযামাতিকা আন উগতালা মিন তাহ্‌তী’। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা চাচ্ছি আমার দীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাজত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পেছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আশ্রয় চাই আমার নিচ থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে’। (আবু দাউদ, হাদিস নং-৫০৭৪)

ছয়. দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তিলাভের দোয়া। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি উক্ত দোয়াটি সকাল-সন্ধ্যা পাঠ করবে, আল্লাহতায়ালা তার সব ঋণ ও দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন। দোয়াটি হলো-উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল হাম্মী, ওয়াল হুযনি, ওয়া-আউযুবিকা মিনাল আজযি, ওয়াল কাছালি, ওয়া-আউযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়াল জুবনি, ওয়া-আউযুবিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি, ওয়া-ক্বাহরির রিজাল’। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে, আরো আশ্রয় নিচ্ছি অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, আরো আশ্রয় নিচ্ছি কৃপণতা ও কাপুরুষতা থেকে, আরো আশ্রয় নিচ্ছি ঋণের প্রবলতা ও মানুষের চাপপ্রয়োগ থেকে’। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ১৫৫৫)

সাত. সব অনিষ্ট থেকে হেফাজত থাকার দোয়া। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক বর্ষণমুখর অন্ধকার রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুঁজতে বের হলাম, যেন তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ পড়েন। তাঁর সাথে যখন সাক্ষাৎ হলো তিনি বললেন, ‘ক্বুল’ অর্থাৎ, বল। আমি নিশ্চুপ রইলাম। তিনি আবার বললেন, ‘ক্বুল’ অর্থাৎ, বল। আমি নিশ্চুপ রইলাম। তিনি আবার বললেন, ‘ক্বুল’ অর্থাৎ বল। আমি আরজ করলাম, আল্লাহর রাসুল! কী বলব? তিনি বললেন; ‘ক্বুল হুয়াল্লাহু আহাদ ও মুয়াওয়াযাতাইন’ (অর্থাৎ সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস)। সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার এ (সুরাগুলো) পড়বে, সব কিছু থেকে তোমার হেফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৫০৮২)

আট. বিষধর প্রাণীর ক্ষতি থেকে নিরাপত্তার দোয়া। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি বিকাল বেলা এই দোয়াটি ৩ বার পড়বে, সেই রাতে কোনো বিষধর প্রাণী তার ক্ষতি করতে পারবে না। উচ্চারণ : ‘আঊযু বি কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক্ব’। অর্থ : আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই’। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং-৩৬৬৫)

নয়. দশটি দাস মুক্তির সাওয়াব এবং শয়তান থেকে নিরাপদ থাকার দোয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছে : ‘যে ব্যক্তি সকালে এই দোয়া (নিম্নোক্ত) পড়বে এটা তার জন্য ইসমাঈল (আ.) বংশীয় একটি গোলাম আজাদ করার সমান হবে। তার জন্য দশটি পুণ্য হবে ও দশটি পাপ মোচন করা হবে এবং তার দশটি মর্যাদা বুলন্দ করা হবে এবং শয়তান থেকে নিরাপদ থাকবে যতক্ষণ না সন্ধ্যা হয়। আর যদি সন্ধ্যায় তা বাড়ে, তাহলে ভোর পর্যন্ত অনুরূপ ফজিলত পাবে। দোয়াটি হলো-উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া ’আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর’। অর্থ : একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সব প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান’। (আবু দাউদ, হাদিস নং- ৫০৭৭; বুখারি, হাদিস নং-৩২৯৩)

দশ. জান্নাত পাওয়ার দোয়া। হজরত  মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের শুরুতে সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার পাঠ করবে, সে ওই দিন ইন্তিকাল করলে জান্নাতি হবে। আর যদি সন্ধ্যায় পাঠ করে এবং এ রাতেই তার ইন্তিকাল হয়, তাহলে সে জান্নাতি হবে। দোয়াটি হলো-উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আন্তা খালাক্বতানী ওয়া আনা আব্দুকা ওয়া আনা আলা-আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাতাতু আঊযুবিকা মিন শাররী মা সানাতু আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিযান্বি ফািফরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগ্ফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আন্তা’। অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনার গোলাম। আমি আপনার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির ওপর আছি যথাসম্ভব। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আমার উপর আপনার অনুগ্রহ স্বীকার করছি। আবার আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ, আপনি ব্যতীত আর কেউ গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬৩০৬)

 

লেখক : মুহাদ্দিস, দারুল উলুম মোহাম্মদপুর কওমি মাদরাসা, চাটমোহর, পাবনা

osmangoninomani@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads