• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জৈষ্ঠ ১৪২৯
চিন্তা-পেরেশানি থেকে মুক্তির উপায়

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

চিন্তা-পেরেশানি থেকে মুক্তির উপায়

  • প্রকাশিত ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মহান আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে সৃষ্টি করে তার মাঝে ভালো কাজ ও মন্দ কাজ উভয়টি করার শক্তি ও স্বাধীনতা দিয়েছেন। যে ব্যক্তি ভালো কাজ করবে সে দুনিয়াতে আনন্দ ও প্রশান্তিময় জীবন লাভ করবে। আর পরকালে তার জন্য রয়েছে অফুরন্ত নেয়ামত ও অনাবিল সুখ-শান্তির স্থান জান্নাত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মন্দ কাজ করবে তার দুনিয়ার জীবন হয়ে যাবে বিষাদময়, দুঃখ ও দুর্দশাগ্রস্ত। মোটকথা দুনিয়া তার জন্য জাহান্নাম হয়ে যাবে। আর পরকালে রয়েছে তার জন্য ভয়ঙ্কর শাস্তি ও আজাব।

সব প্রকার দুঃখ-দুর্দশা, চিন্তা পেরেশানি থেকে পরিত্রাণ ও মুক্তি পাওয়া, আনন্দ ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন লাভ করার একমাত্র উপায় হলো-সব পাপ ও মন্দ কাজ থেকে ফিরে এসে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে খালেস দিলে তওবা ও ইস্তেগফার করা। আল্লাহতায়ালার দয়া ও অনুগ্রহের প্রতি মনোনিবেশ করা। একদা বিশ্ব বরেণ্য তাবেয়ী হাসান বসরী (রহ.) এর কাছে এক ব্যক্তি জানালো ‘আমার ফসলে খরা লেগেছে। আমাকে কিছু আমল বলে দিন’। হাসান বসরী (রহ.) তাকে বললেন ‘বেশি বেশি ইস্তেগফার করো’। কিছুক্ষণ পর অপর এক ব্যক্তি এসে শেকায়েত (অভিযোগ) করল ‘আমি গরিব। আমাকে রিযিক বৃদ্ধির আমল বলে দিন’। হাসান বসরী (রহ.) তাকেও বলেলন বেশি বেশি ইস্তেগফার করো। এমনিভাবে অপর এক ব্যক্তি এসে সন্তান লাভের আমল জানতে চাইলে তিনি বললেন, বেশি বেশি ইস্তেগফার করো। উপস্থিত তাঁর ছাত্ররা জিজ্ঞেস করল : হুজুর! ‘আপনি সকলকে একই পরামর্শ দিলেন!’ তাবেয়ী হাসান বসরী (রহ.) বললেন। ‘আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলিনি। বরং আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এমনটিই শিখিয়েছেন। অতঃপর তিনি সুরা নূহ-এর নিম্নোক্ত আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করলেন।’ (তাফসিরে কুরতুবী ১৮/৩০৩)

মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কালামে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল। (ক্ষমাপ্রার্থনা করলে) তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তোমাদেরকে তিনি ধনসম্পদ ও সন্তানাদি দিয়ে সমৃদ্ধ করবেন। তোমাদের জন্যে তিনি বিভিন্ন রকমের বাগান ও অনেক নদ-নদী সৃষ্টি করে দেবেন।’ (সুরা নূহ, আয়াত : ১০-১২) অপর এক আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা করো। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ করো। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশি করে দেবেন আর যদি তোমরা বিমুখ হতে থাক, তবে আমি তোমাদের ওপর এক মহা দিবসের আজাবের আশঙ্কা করছি।’ (সুরা হুদ, আয়াত-৩) উল্লিখিত আয়াতসমূহে মহান আল্লাহতায়ালা পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব প্রকার অস্থিরতা ও প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ হিসেবে ইস্তেগফারকে উল্লেখ করেছেন।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও হাদিসেপাকে দুঃখ-দুর্দশা, চিন্তা-পেরেশানি, অভাব-অনটন দূর করার পথ ও পন্থা ইস্তেগফারকে উল্লেখ করেছেন। নিজেও উম্মাতকে আমলের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি তাঁর কাছে দৈনিক সত্তর বারের অধিক তওবা-ইস্তেগফার করি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬৩০৭) হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইস্তেগফারকে নিজের ওপর আবশ্যক করে নেয়, আল্লাহতায়ালা আপন দয়া ও অনুগ্রহে তাকে সব সংকটময় অবস্থা থেকে উদ্ধার করবেন। তার সব চিন্তা পেরেশানি দূর করে দেবেন এবং তাকে অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং- ১৫১৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৩৮১৯)

আল্লামা ইবনুল কাইয়িম জাউযি (রহ.) তার কালজয়ী গ্রন্থ ‘আলওবেলুচ চাইয়িব’-এর ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেন। ইস্তেগফার জিকিরের অন্তর্ভুক্ত, তার ওসিলায় রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। চিন্তা পেরেশানি ও দুঃখ-দুর্দশা দূর করা হয়। হাদিস শরিফে ইস্তেগফার বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে। তবে ইস্তেগফারের সবচেয়ে ছোট এবং মুখে পড়তে সহজ শব্দ হলো আস্তাগফিরুল্লাহ। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। তাই আসুন! আমরা সর্বদা স্বীয় কৃতকর্মের ওপর তাওবা ও ইস্তেগফার করি। রাব্বে কারীমের দয়া ও অনুগ্রহের প্রতি মনোনিবেশ করি। চিন্তা পেরেশানিমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ জীবন লাভ করি। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন!

সাইফুল্লাহ বিন কাসিম

লেখক : মুহাদ্দিস, আল মাদরাসাতুল আজিজিয়া দারুল উলুম আল ইসলামিয়া, দৌলতখান, ভোলা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads