• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

উত্তম চরিত্রের অপরিহার্যতা

  • প্রকাশিত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মুফতি উবায়দুল হক খান

 

 

সহিহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামকে পাঁচটি স্তম্ভসম্পন্ন একটি গৃহের সাথে তুলনা করেছেন। এ পাঁচটি স্তম্ভ হলো, আল্লাহ ও তাঁর নবী  মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমানের সাক্ষ্য, নামাজ, জাকাত, রোজা ও হজ্ব। অন্য একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর হারামকৃত বিষয়সমূহকে এ গৃহের সংরক্ষণ প্রাচীর ‘হুদুদুল্লাহ’ ও ‘হাময়ুল্লাহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে তিরমিজিতে বর্ণিত একটি হাদিসে তিনি জিহাদকে এ গৃহের চূড়া তথা ছাদ যারওয়াতু সানামিল ইসলাম বলে উল্লেখ করেছেন। এখন প্রশ্ন আসে, তাহলে ‘ইসলাম’ নামক গৃহটির সরঞ্জাম ‘যিনাতুল বাইত’ বা ‘আছাছ’ কী? জ্ঞানীরা চিন্তা করলে ‘উত্তম চরিত্র’ ছাড়া আর কিছুকে এ গৃহের সরঞ্জাম হিসেবে খুঁজে পাবেন না বলেই আমার বিশ্বাস। এ সরঞ্জাম না থাকার কারণেই আজ মুসলিম সমাজে এত বিবাদ ও হানাহানি। এ সরঞ্জামের অনুপস্থিতির কারণেই আজ কাফিররা ‘ইসলাম’ নামক গৃহে প্রবেশ করতে উৎসাহিত হচ্ছে না। মুসলিম সমাজে যতদিন এ সরঞ্জাম যথেষ্ট পারিমাণে বিদ্যমান ছিল, ততদিন তাদের মাঝে বিরাজ করেছিল ঐক্য ও শান্তি এবং কাফিররা উৎসাহিত হয়েছিল এ গৃহে প্রবেশ করতে। মুসলমানদের যেখানেই এ সরঞ্জাম তথা ‘উত্তম চরিত্র’ যথেষ্ট পারিমাণে বিদ্যমান থাকবে, সেখানেই শান্তি এবং একতা বিরাজ করবে। উত্তম চরিত্র ‘ইসলাম’ নামক গৃহের কত গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম, তা নিচের কয়েকটি হাদিস থেকে সুস্পষ্ট হয়।

হজরত নাওয়াস ইবনে সামআন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাপ ও পুণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, পুণ্য হচ্ছে উত্তম চরিত্র। আর পাপ হচ্ছে, যা করা নিয়ে তোমার অন্তরে সন্দেহের উদ্রেক হয় এবং তোমার মন চায় না যে, তোমার সে বিষয়টি অন্যরা জানুক। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২৫৫৩) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রকৃতিগতভাবে অশ্লীলভাষা পছন্দকারী ছিলেন না এবং নিজেও অশ্লীলভাষী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম লোক তারাই, যাদের চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।’ (বুখারি, হাদিস নং-৫৬৮৮) অন্যত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সুন্দর চরিত্রের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু মানুষকে দান করা হয়নি।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৪৯) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, কোন বিষয়ের কারণে মানুষ বেশি জান্নাতে প্রবেশ করে? বললেন, আল্লাহর ভয় ও উত্তম চরিত্র। অতঃপর তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, কোন বিষয়ের কারণে মানুষ বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করে? বললেন, মুখ ও যৌনাঙ্গের অপব্যবহার।’ (তিরমিযি, হাদিস নং- ২০০৪)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যাকে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) কোমলতা দান করা হয়েছে, সেই তার কল্যাণের অংশ পেয়েছে। আর যাকে কোমলতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, সেই তার কল্যাণের অংশ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কেয়ামতের দিন মুমিনের মিজানে (আমলনামায়) সবেচয়ে ওজনওয়ালা বস্তু হবে উত্তম চরিত্র। নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা অশ্লীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন। (তিরমিযি হাদিস নং-২০০২) মুসলিম ও কাফির সবার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবেচেয়ে বড় গুণ ছিল ‘উত্তম চরিত্র’। ইসলামের দাওয়াতের ক্ষেত্রে তিনি ‘উত্তম চরিত্র’ দিয়েই সব অঞ্চল ও সব গোত্রের মানুষের মন জয় করেছেন। কোরআন মাজিদের সুরা আল কলমের ৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহতায়ালা তাঁর নবী  মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শ্রেষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী বলে ঘোষণা করেছেন। অতএব, মুসলমান ও সৎ মানুষ বলতে সকলের ‘উত্তম চরিত্র’ এর অধিকারী তথা অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল ও কল্যাণকামী হওয়ার বিকল্প নেই। কোনোক্রমেই ধনী-দরিদ্র কারো প্রতি নির্দয় ও হিংসাপ্রবণ হওয়া যাবে না। নিজের ভাগ্য নিয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতিই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন!

 

লেখক : মুহাদ্দিস ও সহকারী শিক্ষাসচিব, জামিআতুস সুফফাহ আল ইসলামিয়া, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads