• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

সঙ্গী নির্বাচনে সতর্কতা

  • প্রকাশিত ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

হাবীব আনওয়ার

 

 

 

আমাদের এক বন্ধু ছিল। হঠাৎই কেমন যেন আনমনা হয়ে গেল। আমাদের সাথে চলাফেরা বন্ধ করে দিল। সারা দিন রুমের এককোণে বসে বসে মোবাইল টিপতো। আমরা ভাবতাম হয়তো গেইম অথবা ফেসবুকে চ্যাটিং করছে। প্রাথমিকভাবে বিষয়টা আমরা স্বাভাবিক মনে করতাম। কিন্তু সপ্তাহখানেক পর বিষয়টা আমাকে ভাবিয়ে তুলল। এতো চঞ্চলমুখর ছেলেটি হঠাৎ এমন ঝিমিয়ে যাওয়াটা আর স্বাভাবিক মনে হলো না। যে ছেলেটা বন্ধুদের আসরে কথার খই ফুটাতো। গল্পের নিত্য নতুন স্ক্রিপ্ট বানাতো। ঘুরাঘুরির চমৎকার প্লান মুহূর্তে তৈরি হতো যার কাছ থেকে সেই এখন ঘরকুনো হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক বিষয় হতে পারে না। তার এমন দৃষ্টিকটু আচরণের হেতু খুঁজতে গিয়ে কেচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসা গল্পের অবতারণ হলো!

 

ছেলেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা মেয়ের খপ্পরে পড়ে। জড়িয়ে যায় প্রেমের সম্পর্কে। তারপর কোনো একভাবে নীল জগতে পা দেয়। এখন সারা দিন এই জগতেই সময় কাটিয়ে নিজের জীবন-যৌবনকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। এর কদিন পরে শুনতে পেলাম তারা এখন কয়েকজন মিলে একসাথে বসে অন্য মুভিগুলোর মতোই স্বাভাবিকভাবে পর্ণ দেখা শুরু করেছে! তার অধঃপতনের এমন করুণ দৃশ্য দেখে খুব কষ্ট পেলাম। মনে পড়ে গেল সেই বিখ্যাত প্রবাদ ‘সৎ সঙ্গে সর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ সৎ সঙ্গের প্রতি হাদিসেপাকেও আল্লাহর নবী বিষয়টাকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ মিসক বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের ন্যায়। আতর বিক্রেতাদের থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসবে না। হয় তুমি আতর খরিদ করবে, না হয় তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের হাপর হয় তোমার ঘর অথবা তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-২১০১)

 

সাথী-সঙ্গী নির্বাচনে খুব সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। অন্যথায় নিজের দুনিয়া-আখেরাত সব হুমকির মুখে পতিত হবে। বর্তমান সমায়ে সস্তা সেলেব্রিটির গণজোয়ারের গড্ডালিকা প্রবাহে গা এলিয়ে দিয়েছি আমরা। সেলেব্রিটিজম আমাদের মন-মননে এমনভাবে গেঁথে বসেছে, যা আমাদের উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। বিশেষ করে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের বড় সমস্যা হলো, কোনো ফেসবুক এক্টিভিটি বা লাইক, কমেন্ট বেশি পড়ে এমন ব্যক্তিবর্গের প্রতি কোনো বাছবিচার ছাড়া আকর্ষণবোধে ছুটে চলার কারণে একসময় নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হোন। খুব কাছ থেকে কয়েকজনকে দেখেছি, ফেসবুক সেলেব্রিটিদের সাথে সাক্ষাৎ বা সময় কাটাতে গিয়ে লাগাতার কয়েকদিন ক্লাস বাদ দিয়েছে। সাথে অর্থের লাগামহীন অপচয় পাশাপাশি অনেকে শিকার হয়েছেন, নির্যাতনের! এর মূল কারণ হচ্ছে, বন্ধু নির্বাচনে আমরা একদমই বাছবিচার করি না। বন্ধুত্বের কঠিন পথকে আমরা খুবই সহজ করে ফেলেছি। কারো কোনো কথা বা কাজ ভালো লাগলেই তাদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। বন্ধুর আসনে স্থান দেই। নিজের অস্তিত্ব তার কাছে জিম্মি রাখি। মানসিক বা পারিবারিক দুর্বল বিষয়গুলো সরল মনে বন্ধুর কছে অবলীলায় বলে দিই। যার ফলে সেই সাথী বা বন্ধু এই সরলতার সুযোগে আমাদেরকে অনেক সময় অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত করে। আমরা যখন তখন বন্ধু পরিবর্তন করি। ভালোভাবে যাচাই-বাছাই না করে কারো সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞাত না হয়েই অনেককে বন্ধুর তালিকায় স্থান দেই। কিন্তু আমরা কী কখনো চিন্তা করেছি যে, এই বন্ধু আমাকে কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। হারাম ও অবৈধ কাজের দিকে ধাবিত করছে না তো? আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত শেষ করে দিচ্ছে না তো! আমরা আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়েই বা কী উত্তর দেব। বদ ও অসৎ বন্ধুদের সাথে থাকার ফল যে, কিয়ামতের দিন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না এটা কী একবারও ভেবেছি? এটাই আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘জালিম ব্যক্তি সেদিন নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে হায়! আমি যদি রাসুলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম! হায় দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর; শায়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।’ (সুরা ফুরকান ২৭-২৯)

 

তবে এইক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে যাচ্ছে, কেমন পরিবেশে বেড়ে উঠছে সব খেয়াল রাখা। শাসনের লাঠি সর্বদা উপরে রাখা। অতি আদরের কারণে যেন সন্তানের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে না পড়ে সেদিকে খুব করে খেয়াল রাখা। বিশেষ করে অপ্রাপ্ত ও অবিবাহিত সন্তানের হাতে স্মার্ট ফোন দেওয়া থেকে বিরত থাকা। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী দেখে বিয়ের ব্যবস্থা করা। পাড়া-মহল্লার বখাটে ছেলেদের খপ্পরে পড়ে যেন সন্তানের দুনিয়া আখিরাত ধ্বংস না হয় সেই দিকে বিশেষ লক্ষ রাখা। অন্যথায় সন্তানের অধঃপতনের জন্য আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসা, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads