• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

ভাষা আল্লাহর বিশেষ উপহার

  • প্রকাশিত ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

রাশেদ নাইব

 

 

 

মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য যে মাধ্যম ব্যাবহার করে কথা বলে সেটাই হলো ভাষা। কখনো কখনো ভাষা হয়ে উঠে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। যে নবজাতক নিজ হাতে কিছু খাওয়ার শক্তি রাখে না। এমনকী শক্ত খাবার গ্রহণ করার সেই সক্ষমতাও রাখে না। আধো আধো বুলি দিয়ে সে শিশুই খুব দ্রুত ভাষাকে রপ্ত করে ফেলে। তার মধুমাখা ভাঙা ভাঙা শব্দে জয় করে কঠিন যোদ্ধার মন। মহান আল্লাহ তাঁর এই আমূল নিয়ামতের কথা পবিত্র কোরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘পরম করুণাময়, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে শিখিয়েছেন ভাষা।’ (সুরা আর-রহমান, আয়াত : ১-৪)

মানবজীবনে ভাষা আল্লাহর বিশেষ উপহার। পৃথিবীতে প্রায় সাত হাজারের বেশি ভাষা রয়েছে। এশিয়ায় প্রচলন আছে দুই হাজারেরও উপরে। এর মধ্যে শুধু ভারতবর্ষে ব্যবহার হয় ১৫০ এর চেয়েও বেশি ভাষা। বিশ্বে এমনো কিছু মানুষ আছে, যারা পাখির ভাষায় কথা বলে! কথ্য বা লেখ্য ভাষার সাংকেতিক সংস্করণ হিসেবে শিস দিয়ে যোগাযোগ করে। এই শিস ভাষা আবার শুধু বিচ্ছিন্ন কিছু আওয়াজ নয়, বরং বেশ কাঠামোবদ্ধ ও ব্যাকরণসম্মত।

পৃথিবীতে প্রায় ৭০টি স্বীকৃত শিস ভাষা নথিভুক্ত আছে, যাদের বেশিরভাগই প্রায় বিলুপ্তির পথে। কম্পাঙ্কের তীক্ষ্নতার দরুন শিসের আওয়াজ সহজেই আমাদের শ্রবণেন্দ্রীয় ধরতে পারে। এমনকী চার কিলোমিটার অবধি পৌঁছাতে পারে এই আওয়াজ। তাই বিস্তীর্ণ ক্ষেতসমৃদ্ধ কৃষিজীবী জনপদের আন্তঃযোগাযোগে এ ভাষা বেশি প্রচলিত। মরক্কোর অ্যাটলাস বা হিমালয়ের পার্বত্য জনপদ, লাওসের মালভূমি, ব্রাজিলের আমাজন, এমনকী খরাবিদীর্ণ ইথিওপিয়ায়ও মানুষ শিসের সাহায্যে যোগাযোগ করত। গ্রিক পারিব্রাজক হেরোডটাস স্বয়ং ইথিওপিয়ান শিস ভাষার সাক্ষী। তাঁর কাছে এ ভাষা ছিল ‘বাদুড়ের কিচিরমিচির’-এর মতো। তুরস্ক, স্পেন, গ্রিসের প্রত্যন্ত কিছু অঞ্চলে আজও কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে পাখির ভাষা। ভাষার বৈচিত্র্য মহান আল্লাহর বিস্ময়কর নিদর্শন ও বিশেষ নিয়ামত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য।’ (সুরা রুম, আয়াত-২২)

প্রথমত মানুষ নিজ মা থেকেই ভাষা শিখে থাকে। তাই মাতৃভাষার প্রতি মানুষের টান স্বভাবগত। মাতৃভাষার সম্মান রক্ষা করার জন্য মানুষ জীবন পর্যন্ত দিতে পারে। যার প্রমাণ আমরা বাংলা ভাষাভাষী মানুষ দেখতে পেয়েছি ১৯৫২ সালের ৮ ই ফাল্গুনেই। সেখানে আমাদের বাংলার ছেলেরা মাতৃভাষা বাংলা চেয়ে রাজপথে তাজা রক্তের বন্যা প্রবাহিত করেছে। তবুও মাতৃভাষাকে অর্জন করেছে। তাইতো কবি তার কবিতার ভাষায় বলে থাকেন- ‘একুশ মানে ভাষার জন্য বিসর্জন করা প্রাণ, একুশ মানে বয়ে যাওয়া তাজা রক্তের ঘ্রাণ।’

প্রত্যেক নবী নিজ নিজ ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি আরবের সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভাষাভাষী।’ নিঃসন্দেহে হাদিসে মুসলিম জাতিকে মাতৃভাষার প্রতি যত্নবান এবং তার আন্তরিক চর্চার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। বরং নির্দেশ প্রদান করে। আমাদের সবার উচিত বিশুদ্ধ মাতৃভাষা চর্চায় আত্মনিয়োগ করা। দীনি দাওয়াতের কাজেও নিজ মাতৃভাষার অতীব প্রয়োজন। সাবলীল ভাষায় মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করা, সন্তানদের এমন পরিবেশ উপহার দেওয়া, যেখানে তাদের শব্দভাণ্ডারে কোনো অশ্লীল, কুফরি ও অকৃতজ্ঞতার শব্দ স্থান পাবে না। জ্ঞান অর্জন ও দাওয়াতি কার্যক্রমের জন্য বিদেশি ভাষা শিখতেও আপত্তি নেই। এ বিষয়টিকে ইসলাম নিরুৎসাহ করেনি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.)-কে ইহুদিদের ‘ইবরানি’ ভাষা শিখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি মাত্র ১৫ দিনে তা আত্মস্থ ও কণ্ঠস্থ করে ফেলেন। তবে বিদেশি শব্দের অতিপ্রয়োগ যেন নিজের মায়ের ভাষাকে বিকৃত করে না দেয়। ভাষা বিকৃতি ও মিশ্রকরণের কুপ্রভাব সমাজের সব স্তরেই দিন দিন বাড়ছে। পরিবারে, পথেঘাটে, অফিসে, বাজারে সবখানেই যেন দিন দিন এর জয়জয়কার চলছে। অতি বিদেশপ্রেম ও স্মার্টনেস যেন আমাদের অস্তিত্বই বিলীন করে না দেয়। পাশাপাশি কেউ যেন কারো আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে কাউকে ছোট না করে। কারণ সব ভাষাই আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহর সৃষ্টিকে তাচ্ছিল্য করার অধিকার কারো নেই। সর্বোপরি ভাষা মহান আল্লাহর অশেষ নেয়ামত। আল্লাহতায়ালা সেই নেয়ামতের যথার্থ ব্যাবহার করার তাওফিক দান করুন।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, দারুল ইসলাম ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা সাভার, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads