• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

সালাতুল ইস্তেখারা : গুরুত্ব ও পদ্ধতি

  • প্রকাশিত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মো. আবু তালহা তারীফ

 

 

সালাতুল ইস্তেখারা হলো বিশেষ পদ্ধতিতে নফল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কল্যাণকর বিষয় প্রার্থনা করা। আমরা প্রায় সময়ে বিভিন্ন দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই। দুটি বা একাধিক বিষয়ের মধ্যে কোনটি গ্রহণ করব বা কোনটির পক্ষে সিদ্ধান্ত দেব তা নিয়ে ভাবতে হয়। এই ভাবনাচিন্তা ও সিদ্ধান্তহীনতা দূর করতেই রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইস্তেখারা বা কল্যাণ প্রার্থনার নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন, যা মনের সিদ্ধান্তকে এমন জিনিসের ওপর স্থির করে, যার মধ্যে বান্দার উপকার রয়েছে। এই মূল্যবান আমল করার জন্য শরিয়তে নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। নামাজের মাকরুহ এবং নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত যে-কোনো সময় তা করা যায়। তবে কল্যাণকর সময়ে আমল করা খুবই উত্তম। এজন্য গভীর রাতে একাকিত্ব হয়ে মহান আল্লাহর প্রশংসা করে শুরু করা ভালো।

সালাতুল ইস্তেখারা আদায়ের জন্য স্বাভাবিকভাবে পবিত্রতা অর্জন জরুরি। এরপর পরিশুদ্ধ নিয়ত করে স্বাভাবিক নিয়মে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হবে। সালাম ফিরিয়ে ইস্তেগফার, তাসবিহ-তাহলিল, আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ পাঠ করতে হবে। নবীজি বলছেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো কাজ করার ইচ্ছা করে। আর সে উহার পরিণতি সম্পর্কে চিন্তিত হয়, তখন তাহার এইভাবে ইস্তেখারা করা উচিত। প্রথমে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে, এরপর এই দোয়া পাঠ করবে।’ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসতাখিরুকা বিইলমিকা ওয়া আসতাকদিরুকা বি-কুদরাতিকা ওয়াআসআলুকা মিন ফাদলিকাল আজিম, ফাইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু ওয়া আনতা আল্লামুল গুয়ুব। আল্লাহুম্মা ইন কুনতা তা’লামু আননা হাজাল আমরা খাইরুন লি ফি-দিনি ওয়া মায়াশি ওয়া আ’কিবাতি আমরি, ফাকদিরহু লি, ওয়া-ইয়াসসিরহু লি, ছুম্মা বা-রিকলি ফিহি, ওয়া ইন কুনতা তা’লামু আন্না হাজাল আমরা শাররুন লি ফি-দিনি ওয়া মায়াশি ওয়া আ’কিবাতি আমরি ফাসরিফহু আন্নি ওয়াসরিফনি আনহু ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা ছুম্মা আরদিনি বিহি।’ অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার জ্ঞানের সাহায্যে আপনার কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আমি আপনার শক্তির সাহায্যে শক্তি ও আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কেননা আপনিই ক্ষমতা রাখেন; আমি ক্ষমতা রাখি না। আপনি জ্ঞান রাখেন, আমার জ্ঞান নেই এবং আপনি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত। হে আল্লাহ, আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ (নিজের প্রয়োজনের নাম উল্লেখ করবে) আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য কিংবা বলবে আমার দিনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে কল্যাণকর হলে আপনি তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন। সেটা আমার জন্য সহজ করে দিন এবং তাতে বরকত দিন। হে আল্লাহ্‌! আর যদি আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার দিনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে কিংবা বলবে, আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য অকল্যাণকর হয়, তবে আপনি আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে দিন এবং সেটাকেও আমার থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আমার জন্য সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ নির্ধারণ করে রাখুন এবং আমাকে সেটার প্রতি সন্তুষ্ট করে দিন।’ (সহিহ বুখারি)।

উপরোক্ত দোয়াটিকে ইস্তেখারার দোয়া বলা হয়। ইবনে আবু জামরা বলেন, ইস্তিখারার দোয়ার আগে নামায আদায়ের কারণ হলো, ইস্তিখারার উদ্দেশ্য হচ্ছে একসাথে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভ করা। আর এটি পেতে হলে আল্লাহর প্রশংসা তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তাঁর কুদরতি পায়ে সিজদাসহ তাকে খুশি করা প্রয়োজন। তার সামনে দাঁড়াতে হলে, নামাজের গুরুত্ব বেশি। এজন্য নামাজ আদায়ের পর ইস্তেখারার দোয়াটি পাঠ করতে হয়। দোয়ার ব্যাপারে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘এই দোয়ার যেখানে ‘হাজাল আমরা’ শব্দটি আসবে, সেখানে যে কাজটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাওয়া হচ্ছে সেটি মনে মনে উল্লেখ করে পুনরায় সে বিষয়টি ভেবে নেওয়া। দোয়া শেষ করে কারো সঙ্গে কথা না বলে কেবলামুখী হয়ে ঘুমিয়ে পড়া। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর মন যেদিকে তথা যে বিষয়ে সায় দেবে বা যেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটিই ফলাফল মনে করা এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া।’ (তুহফাতুল আলমায়ি।)

আমরা স্পষ্ট ধারণা করি, ইস্তেখারার নামাজের পর তাকে স্বপ্ন দেখানোই হবে এবং সে সঠিকপথ নির্দেশিত হবে। এমনটি মনে করা একদম উচিত নয়। আপনি যে সিদ্ধান্ত নিতে চান তা প্রথমত সেই বিষয়ে অভিজ্ঞ, সৎ নিষ্ঠাবান ও বিশ্বস্ত ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ করার পাশাপাশি সালাতুল ইস্তিখারাও আদায় করুন। সকল ধরনের অন্যায় বা হারাম কাজ বা অন্যের ক্ষতি করার জন্য সালাতুল ইস্তেখারা আদায় করা যাবেনা। সালাতুল ইস্তিখারা আদায়ের পরও সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত না হতে পারলে একধিকবার পড়া যেতে পারে। এজন্য আল্লাহর ইবাদতে নিজকে নিয়োজিত রাখতে হবে। হালালভাবে উপার্জন করতে হবে। নিজের অন্তরের তাকওয়া মজবুত করতে হবে। সম্পূর্ণভবে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে দৃঢ়ভাবে কাজে এগিয়ে যেতে হবে। মনে বিশ্বাস রাখা জরুরি সকল সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। ভরসা একমাত্র তারই ওপর। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমলচিত্ত। যদি আপনি রূঢ় ও কঠোর হূদয় হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে যেত। তাই আপনি তাদের ক্ষমা করুন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কাজেকর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন, কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে আল্লাহর ওপর নির্ভর করুন। যারা আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তাদের তিনি ভালবাসেন।’ (সুরা আল ইমরান-১৫৯)।

 

লেখক: প্রাবন্ধিক, গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads