• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

আল্লামা শামছুল ইসলাম রহ. এক নক্ষত্রের বিদায়

  • প্রকাশিত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মাহমুদুল হাসান

 

 

হজরত মাওলানা শামছুল ইসলাম রহ.। আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জের প্রবীণ মুহাদ্দিস। ঐতিহাসিক শহীদি মসজিদের অন্যতম খতিব। হাজারো আলেমের শিক্ষক। হবিগঞ্জের বাহুবলে বাড়ি হলেও জীবনের প্রায় ৪০ বছর কেটেছে কিশোরগঞ্জে। এই শহরের মাটি ও মানুষকে আপন করে নিয়েছিলেন তিনি। কিশোরগঞ্জসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহে তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। তাঁর মতো তুখোড় আলেমের অভাব এই অঞ্চলের মানুষেরা অনুভব করবে বহুকাল। আল্লামা শামছুল ইসলাম রহ. পরিচিত ছিলেন ‘মুফাসসির সাহেব হুজুর’ হিসেবে। শহীদি মসজিদে সপ্তাহে একদিন তাফসির করতেন। শহরের অনেক মুসল্লি মুখিয়ে থাকনে তাঁর তাফসির শোনার জন্য। কিছুদিন পূর্বে তিনি প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন। তাঁর বিদায়ে বাঙালি জাতি হারালো আরেকটি নক্ষত্র।

মাওলানা শামছুল ইসলাম রহ. হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানাধীন স্বস্তিপুর গ্রামে ১৯৫৩ সালের ১ লা মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব মুর্তজা আলী। হবিগঞ্জের পুটিজুরি ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তিনি। অতঃপর মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য চলে যান নবীগঞ্জ থানাধীন দিনারপুর ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদরাসায়। মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর উচ্চ শিক্ষালাভের উদ্দেশে তিনি চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরসায় গমন করেন। সেখানে কয়েক বছর অবস্থান করে সেখানকার মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরগণদের থেকে হাদিস ও তাফসির বিষয়ে বিশেষ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। প্রখর মেধা ও ধী শক্তির কারণে তিনি অতি অল্প সময়ে উস্তাদদের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন এবং তাঁদের সুদৃষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হন। তিনি ১৯৮৯ সালে ভারতে এক শিক্ষা সফরে গিয়ে বিশ্ব বিখ্যাত দ্বীনী প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ-এর উস্তায আল্লামা আঞ্জার শাহ কাশমিরী এবং সাঈদ আহমদ পালনপুরী দা: বা: প্রমুখ বিজ্ঞ আলেমদের থেকে হাদিসের সনদ লাভ করেন।

আল্লামা শামছুল ইসলাম রহ.-এর কর্মজীবন শুরু হয় হবিগঞ্জ থানাধীন বাহুবল কাসেমুল উলুম মাদরাসার মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে। অতঃপর ১৯৮৩ সালের ১ আগষ্ট কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদরাসায় সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে প্রায় ৪০ বছর যাবৎ অতন্ত দক্ষতার সাথে হাদিস, তাফসির, ফিকহ ইত্যাদি বিষয়ে অধ্যাপনার কাজ চালিয়ে আসছেন। মৃত্যুর সময় তিনি জামিয়া ইমদাদিয়া ও সিলেটের জামিয়া মাহমুদিয়া মাদরাসার শাইখুল হাদিস ছিলেন।

আল্লামা শামছুল ইসলাম রহ.-এর উল্লেখযোগ্য উস্তায হলেন হাটহাজারীর শাইখ আব্দুল কাইয়ম, শাইখ আব্দুল আযিয, শাইখ আবুল হাসান প্রমুখ। তিনি প্রভুর অশেষ কৃপায় হজ্বে বাইতুল্লাহ তিনবার আদায় করেছেন। আল কোরানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেশ নিবিড়। ইলমে তাফসিরে রয়েছে বেশ দখল। তাই তিনি অধ্যাপনার ফাঁকে ফাঁকে ঐতিহাসিক শহীদি মসজিদে ১৯৯৩ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নিয়মিত তাফসির করেছেন। সুরা ফাতিহা থেকে শুরু করে সুরা ইকরা পর্যন্ত শেষ করেন। তার তাফসিরে হাজারো মহিলা দীনের পথে ফিরে এসেছেন। এ জন্য কিশোরগঞ্জের মানুষের মধ্যমনি হিসেবে সবাই তাঁকে সমীহ করেন।

বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় আল্লামা শামছুল ইসলামের শারীরিক অবনতি হলে গত ১৮ জানুয়ারি ’২১ কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে দুদিন চিকিৎসা সেবা দানের পর ২১ জানুয়ারি তাঁকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। ঢাকায় আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করলে আজগর আলী হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখেন। শারীরিক কোনো উন্নতি না হওয়ায় ডাক্তারের পরামর্শক্রমে তাঁকে নেওয়া হয় ঢাকার পিজি হাসপাতালে। সেখানেও বেশ কিছুদিন চিকিৎসা গ্রহণ করেন। প্রায় ১৯ দিন আইসিইউতে থাকার পর ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুর দুইটা ৫ মিনিটে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পূর্বে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন তিনি। নিজ স্ত্রীকে ডেকে সবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর অছিয়তনামা পেশ করেন। পরে কালিমা শাহাদাত পড়া শেষ করেই রফিকে আলার ডাকে সাড়া দেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য ছাত্র, ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। আল্লাহতায়ালা তাঁকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন।

 

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষার্থী, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads