• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

বিয়ে : পবিত্র জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ

  • প্রকাশিত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

শরীফুল ইসলাম নাঈম

 

 

 

মহান আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে খুব সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। অন্য সব প্রাণীর উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। পুরুষ ও নারী জাতি হিসেবে বিভক্ত করেছেন। এক জাতিকে অপর জাতির কাছে আকর্ষণীয় ও লোভনীয় করে দিয়েছেন। মানুষ সামাজিক জীব। একাকী সে চলতে পারে না। জীবনের সর্বস্তরে তার সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। শিশু থেকে যৌবন পর্যন্ত তার দরকার হয় মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতা ও সাহচর্য। যৌবনে এসে তার মধ্যে জৈবিক চাহিদা তৈরি হয়। সেই চাহিদা পূরণার্থে বিপরীত লিঙ্গের প্রয়োজন হয়। বিপরীত লিঙ্গের কারো অভাব অনুভূত হয়। তাই নারী পুরুষ উভয়কেই দৃষ্টি অবনত রাখতে বলা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন; (হে নবী) আপনি বলে দিন মুমিন পুরুষরা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। এটা তাদের জন্য অধিক শুদ্ধতার মাধ্যম। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে সম্যক অবগত। আরো বলে দিন মুমিন নারীদের, তারা যেন দৃষ্টি অবনত রাখে ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করে...।’ (সুরা নূর, আয়াত-৩০, ৩১)

নারী পুরুষের মধ্যকার জৈবিক চাহিদা পূরণের বৈধ-অবৈধ সব পদ্ধতিই রয়েছে। তবে পবিত্র ও বৈধ পদ্ধতি হলো, বিয়ে করা। ইসলামী শরীয়তানুযায়ী বিয়ে কখনো ফরজ হয়ে দাঁড়ায়, কখনো সুন্নাত, আবার কখনো হারাম। বিয়ে না করলে যদি জিনায় লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশংকা দেখা দেয় ও মোহর ও খরচ দেওয়ার মতো ন্যূনতম কোনো ব্যবস্থা থাকে, তখন বিয়ে ফরজ। আর যদি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, সাথে সামর্থ্যও থাকে তখন বিয়ে সুন্নাত। আর যখন স্ত্রীর যে কোনো এক ধরনের হক আদায় করতে না পারার প্রবল ধারণা থাকে তখন বিয়ে করা হারাম হয়ে যায়।’ (ফাতাওয়ায়ে শামী, কিতাবুন নিকাহ)

প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ প্রতিটি ছেলে মেয়ে যৌবনে এসে এর প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করে। সমাজ ও পরিবারের সুস্থ ও স্বাভাবিক ধারা বজায় রাখতে বিয়ে প্রথার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। অন্যান্য প্রাণীর যৌন চাহিদা পূরণে কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই। যে যার সাথে যেভাবে পারে চাহিদা পূরণ করে নেয়। কিন্তু মানুষকে সেই চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত মহিলা ছাড়া অন্য মহিলারা তোমাদের জন্য হালাল। শর্ত এই যে, অর্থের বিনিময়ে তোমরা তাদেরকে তলব করবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য। জিনা ব্যভিচারের জন্য নয়। আর তোমরা তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে উপভোগ করবে আগে তার নির্ধারিত মোহর দিয়ে  দেবে। যদি তোমরা মোহর নির্ধারণের পর সেটা কম বেশি করার ক্ষেত্রে উভয়ে একমত হয়ে যাও তো তোমাদের কোনো গোনাহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা মহাজ্ঞানী ও রহস্যবিদ।’ (সুরা নিসা, আয়াত-২৪)

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর পরই অভিভাবকদের উচিত সন্তানাদির বিয়ের ব্যবস্থা করা। ক্যারিয়ার, সংসারের কৃত্রিম অভাব, সমাজের ভয় এসব কারণে বিয়েতে দেরি করা উচিত নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত ও নেককার গোলামদের বিয়ে করিয়ে দাও। যদি তারা দরিদ্র হয় তাহলে (বিয়ের বরকতে) আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের ধনী বানিয়ে দেবেন। আর আল্লাহ প্রশস্তকারী ও সর্বজ্ঞানী।’ (সুরা নূর, আয়াত-৩২) সঠিক সময়ে বিয়ে না করানোর ফলেই সমাজে এতো ফেতনা-ফাসাদ, ধর্ষণ, গণধর্ষণ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যখন তোমাদের কাছে এমন কেউ বিয়ের প্রস্তাব দেয় যার ধর্ম ও চরিত্রের ব্যাপারে তোমরা সন্তুষ্ট তার কাছে বিয়ে দিয়ে দাও। অন্যথায় দুনিয়ায় ফিতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়বে।’ (তিরমিযি, হাদিস নং-১০৮৪)

অনেক ছেলে আবার তীব্র প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগে বিয়ে করতে অনীহা দেখায়। চিন্তা করে, বিয়ে করে সংসার চালাবে কি করে? এটা একটা অমূলক ধারণা। কারণ রিজিকের মালিক সে না। যে মেয়ে তার সংসারে আসবে তার রিজিক সে নিয়েই আসবে। আল্লাহই সেটার জিম্মাদার। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালাই রিজিকদাতা ও মহাশক্তিধর।’ (সুরা যারিয়াত, আয়াত-৫৮) অথচ ওই ছেলেটাই আবার একাধিক মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রেখে দিব্যি চলতে পারে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণই হারাম ও অবৈধ। এর দ্বারা সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে। যারা অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিতে চায় তাদের ব্যাপারে কঠিন ধমকি এসেছে  কোরআনে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়া পছন্দ করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি। আল্লাহতায়ালা জানেন আর তোমরা জানো না।’ (সুরা নূর, আয়াত-১৯)

বিয়ে মানুষের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এতে সমাজ সভ্য হয়, সুন্দর হয়, সমাজের অনৈতিকতাগুলো কাটিয়ে উঠতে অনেক সহায়ক হয়। বিয়ে একজন যুবকের লজ্জাস্থান হেফাজতে দৃষ্টি অবনত রাখতে সর্বাধিক সহায়ক। হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা (ন্যূনতম মোহর ও খরচ দেওয়ার) সামর্থ্য রাখে তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে লজ্জাস্থান হেফাজত ও দৃষ্টি অবনত রাখতে বেশি ভূমিকা পালন করে।’ (নাসায়ী, হাদিস নং-২২৪১) অন্য হাদিসে এসেছে, যে বিয়ে করল তার ঈমানের অর্ধেক পূর্ণ হলো। সে যেন বাকী অর্ধেকের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে।’ (আল মুজামুল আউসাত, হাদিস নং-৭৬৪৭)

 

লেখক : শিক্ষার্থী, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads