• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

মা-বাবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা মহাপাপ

  • প্রকাশিত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মিশকাত বিন আমির হোসেন

 

 

 

বাবা-মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করা সন্তানের কর্তব্য। বৃদ্ধ বয়সে তাদের সেবা-যত্ন করা, তাদের জন্য অর্থ ব্যয় করা সন্তানের দায়িত্ব। তাদের মনে কোনোরূপে কষ্ট না দেওয়া, তাদের সাথে সম্পর্কোচ্ছেদ না করাও ইসলামের নির্দেশ। আজকাল অনেক ছেলেই বড় হয়ে জীবিকার্জনের ব্যবস্থা করে বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অথবা বিয়েশাদী করে বাবা-মার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এ সম্পর্কে     কোরআন মাজীদে যে মূলনীতি উল্লিখিত হয়েছে তা হলো- ‘ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং রেহেম (রক্ত-সম্পর্ক) ছিন্ন করবে। আল্লাহ এদেরকেই করেন অভিশপ্ত আর করেন বধির ও দৃষ্টি শক্তিহিন।’ (সুরা মোহাম্মদ, আয়াত-২২, ২৩)  রেহেম বা রক্ত-সম্পর্ক ছিন্নকারীদেরকে আল্লাহ অভিশপ্ত ঘোষণা দিয়েছেন। তাদেরকে ‘বধির ও দৃষ্টি শক্তিহীন’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। মুফাসসিরগণ বলেন, এখানে ‘বধির’ অর্থ সত্যের আওয়াজ কর্ণে প্রবেশ না করা এবং ‘দৃষ্টি শক্তিহীন’ অর্থ সত্য-দর্শনে অক্ষম। রক্ত-সম্পর্ক বলতে মা-বাবা নিঃসন্দেহে প্রথম। এছাড়াও ভাই-বোন, দাদা-দাদি, নানা-নানি, মামা, খালা, চাচা-ফুফু ইত্যাদি নিকটাত্মীয় বোঝায়। তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করা, সব ব্যাপারে তাদের সাথে সহযোগিতা-সহমর্মিতা প্রকাশ করা এবং সম্পর্ক ছিন্ন না করার ব্যাপারে আল্লাহতায়ালার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় তার জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের জন্য আছে লানত এবং মন্দ আবাস।’ (সুরা আর রা’দ, আয়াত-২৫)

বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রেহেমের সম্পর্ক কর্তনকারী কখনই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ অন্য হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত মুগীরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মায়ের নাফরমানি করা এবং কন্যাসন্তানের জীবিত করব দেওয়া, হকদারের হক না দেওয়া আল্লাহপাক তোমাদের উপর হারাম করে দিয়েছেন। আর আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য গল্প-গুজবে লিপ্ত হওয়া, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা এবং সম্পদ নষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।’ (সহিহ বুখারি) হজরত আবু বকর (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় তিনটি গুনাহ সম্পর্কে জানাব না? আমরা বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা। মাতা-পিতার নাফরমানি করা। এ সময় তিনি হেলান দেওয়া বসা অবস্থায় ছিলেন, তারপর উঠে বসলেন এবং বললেন শোন! মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, এভাবে তিনি একাধারে বলে যাচ্ছিলেন যতক্ষণ না আমরা বললাম যে, যদি তিনি চুপ হতেন।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি)

অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কবীরা গুনাহগুলো হচ্ছে আল্লাহর সাথে শিরক করা, মাতা-পিতার নাফরমানি করা, (অন্যায়ভাবে) কোনো লোক হত্যা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’ (সহিহ বুখারি) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমর বিন হামযের মারফত ইয়ামেনবাসীদের কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তাতে লেখা ছিল, কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো-আল্লাহর সাথে শিরক করা, অন্যায়ভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করা, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা থেকে পালানো, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, সতী নারীকে অপবাদ দেওয়া, জাদুবিদ্যা শিক্ষা, সুদ খাওয়া, এতিমের সম্পদ গ্রাস করা।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান) হজরত ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন প্রকার লোকের দিকে আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন, রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। ১. মাতা-পিতার অবাধ্য। ২. মদখোর। ৩. দান করে তার খোটাদানকারী। আর তিন প্রকারের লোক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। ১. মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তি। ২. দাউয়ূস (যে তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যদেরকে পর্দায় রাখে না)। ৩. পুরুষের বেশধারী মহিলা।’

 

লেখক: শিক্ষার্থী, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads