• রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

একুশে ফেব্রুয়ারি ও কিছু কথা

  • প্রকাশিত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আবদুল কাদির ফারূক

 

 

 

সালটা ১৯৫২ সাল। একুশে ফেব্রুয়ারি। ৮ ফাল্গুন। এদিনটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য অবিস্মরণীয়। কারণ ’৫২ সালের এদিনে মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য বাংলার কিছু দামাল যুবক রাজপথে নেমেছিল, গুলির আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে নিজের জীবনকে বিসর্জন দিয়েছিল। তাদের মধ্যে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তারা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য নিজের প্রাণ দিয়েছেন, তাই আমাদের উচিত ও কর্তব্য ছিল এদিনকে বাংলা তারিখ অনুযায়ী হিসাব করা। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটা ছিল ফাল্গুনের ৮ তারিখ। এখানেও মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব্ব কাজ করছে। এদিকে আমরা এই দিবসকে বাংলা ভাষার দিবস হিসেবে পালন করি; কিন্তু কার্যক্রমে একুশে ফেব্রুয়ারি। ফেব্রুয়ারি মাস বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভাষার মাস। দেশের মানুষ অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে আমাদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করেছে।

এখন প্রয়োজন এই ভাষার যথাযথ মূল্যায়ন। এর মূল্যায়ন একটু হলেও হবে যদি আমরা এই ভাষায় সাহিত্য রচনা করি। আর নিজের ভাষায় সাহিত্য রচনা করা একজন বাংলাভাষী মানুষের জন্য কর্তব্য। মাতৃভাষাকে ত্যাগ না করে এতে পাণ্ডিত্য অর্জন করা উচিত, যাতে কোটি কোটি মানুষের এই ভাষা জাতির অনুপম প্রভাবে প্রভাবিত এবং সমৃদ্ধ হয়। আমাদের ভাষা সমৃদ্ধ হলে এই দেশের মানুষ সমৃদ্ধ হতে পারবে। আমরা যদি অন্যান্য ভাষার প্রতি দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখতে পাব, আমাদের মনীষীগণ নিজ নিজ ভাষাকে কতটা সমৃদ্ধ করেছেন এবং সাহিত্যের রস দিয়ে পরিপূর্ণ করেছেন।

যেমন ফারসি ভাষা ইসলামী সাহিত্যের দ্বিতীয় সমৃদ্ধ ভাষা। এই ভাষায় শেখ সাদী রাহিমাহুমুল্লাহ গুলিস্তাঁ লিখেছেন। কারিমা লিখেছেন। ফরিদ উদ্দিন আত্তার (রহ.) একজন বুজুর্গ ছিলেন। তিনি ফারসি ভাষায় পান্দেনামা লিখেছেন। হজরত রুমি (রহ.) মসনবি লিখেছেন। এমনিভাবে উর্দুভাষায় দার্শনিক কবি ইকবাল উর্দুতে সাহিত্যের জোয়ার সৃষ্টি করেছেন। একইভাবে বাঙালিরা বাংলা চর্চা করলে ইসলামী সংস্কৃতির প্রভাব এই ভাষায় সৃষ্টি করতে পারবে। অনেক মুসলিম কবি-সাহিত্যিক যুগ যুগ ধরে বাংলা ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম, একইভাবে ইসলামী রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদসহ আরো অনেক কবি ও সাহিত্যিক বাংলায় ইসলামী ভাবধারা প্রচার করেছেন। বাংলা ভাষা চর্চা করা বাঙালি মুসলমানদের জন্য আবশ্যক। বাংলায় ইসলামী ভাবধারা প্রচার-প্রসার করা এবং এ দেশের জনগণকে ইসলামী সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত করা আমাদের কর্তব্য।

পরিশেষে মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে দু-একটি আয়াত-হাদিস উল্লেখ করে আলোচনা এখানেই শেষ করব। মাতৃভাষা মহান আল্লাহর অপার দান। এ ভাষা দিয়ে মানুষ নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে। তাই ইসলাম মায়ের প্রতি যেমন অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা দিয়েছে, তেমনি মাতৃভাষার প্রতিও অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে ভাব (ভাষা) প্রকাশ করতে শিখেয়েছেন।’ (আর-রাহমান : ৩-৪)। অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ২২)। পবিত্র কোরআনুল কারিমে মহান রব বলেন, ‘আমি প্রেরণ করিনি কোনো রাসুলকে তবে তাঁর কাউমের ‘ভাষাজ্ঞান’ দিয়ে, যাতে তিনি বয়ান করতে পারেন তাদের উদ্দেশ্যে। অনন্তর তিনি গোমরাহ করেন যাকে ইচ্ছা এবং হেদায়েত দান করেন যাকে ইচ্ছা, আর তিনিই মহাপ্রতাপশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়।’ (সুরা ইবরাহিম-৪)। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে দান করা হয়েছে সর্বমর্মী বচন।’ (মুসলিম)। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত-নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী; কোরায়েশগোত্র আমার পয়দায়েশ।’

 

 লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads