• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

হাফেজ আহমাদ উল্লাহ রহ.

লেখক তৈরির এক নিপুণ কারিগরের বিদায়

  • প্রকাশিত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মো. আবু তালহা তারীফ

 

 

হাফেজ আহমাদ উল্লাহ রহ.। সাংবাদিক, ছড়াকার, লেখক। সবচেয়ে বড় পরিচয় লেখালেখির পৃষ্ঠপোষক। তিনি ছিলেন ইসলামী ভাবধারার সাংবাদিক ও লেখক তৈরির নিপুণ কারিগর। কত নবীন লেখক যে তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে; এর কোনো হিসাব নেই। দৈনিক যুগান্তরের ইসলাম ও জীবন পাতাটি সম্পাদনা করেছেন প্রায় ২২ বছর। দৈনিক পত্রিকায় ধর্মও একটি কাটতি আইটেম, সেটা বোধহয় তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা পায়। অবশেষে তিনি আমাদের ছেড়ে চলেই গেলেন। গত বুধবার ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা ৫ মিনিটে রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। শেষদিকে তার দুটি কিডনি অকেজো হয়ে যায়। গত কয়েক দিন ধরে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এ গুণী সাংবাদিক। অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। আল্লাহতায়ালা হজরতকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। আমিন।

 

হাফেজ আহমাদ উল্লাহ ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার সদর উপজেলার চম্মতনগর গ্রামে। তিনি ছোটবেলা থেকে মুত্তাকি, আল্লাহভীরু ও কোরআনপ্রেমিক ছিলেন। তাই অল্প বয়সেই লালবাগ মাদরাসা থেকে অভিজ্ঞ শিক্ষকের মাধ্যমে কোরআন মুখস্থ করেন। তিনি ১২ বছর বয়স থেকেই পবিত্র রমজানে খতমে তারাবি নামাজের ইমামতি করার সুযোগ লাভ করেন। সেখানে মুসুল্লিগণ ছোট হাফেজ হিসেবে আহমদ উল্লাহকে খুব ভালোবাসতে শুরু করেন। এরপর তিনি উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজে অধ্যায়ন করেন। কলেজে অধ্যায়নের পাশাপাশি বিভিন্ন গদ্য-পদ্য লিখে পাঠকদের মনে জায়গা করেন। খুব অল্প দিনে শিশু-সাহিত্যিক, ছড়াকার, লেখক হিসেবে সর্বমহলে বেশ সুনাম বয়ে আনেন।

 

কর্মজীবনে তিনি দীর্ঘ ২১ বছর দৈনিক যুগান্তরে ইসলামী জীবন পাতার সিনিয়র সহ-সম্পাদক পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দৈনিক যুগান্তরের শুরু থেকেই পত্রিকাটির সঙ্গে ছিলেন। এর বাইরেও তিনি দীর্ঘদিন ‘ঢাকা আমার ঢাকা’ ও ‘পরবাস’ পাতার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর দায়িত্ব পালনের সময়ে অনেককেই হাতে-কলমে লেখা  শেখাতেন। তিনি সবসময় দেশের বিভন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য লেখনির মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যেতেন। ইসলামের সঠিক বাণী পাঠকদের মাঝে তুলে ধরাই ছিল তার মূলদায়িত্ব। আলিয়া, কাওমি, পীর-মাশায়েখ সবাই তাঁর কাছে ছিল সমান। মসজিদের ইমাম, মাদরাসার শিক্ষক, আলেমদের কর্মসংস্থান নিয়ে সর্বদা কাজ করতেন তিনি। কোরআনের হাফেজদের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ ভালোবাসা।

 

হাফেজ আহমাদ উল্লাহ রহ. একজন সুফি-গবেষক ছিলেন। তিনি দেশে ও বিদেশের অসংখ্য শ্রেষ্ঠ আলেম ও ওলিদের সান্নিধ্য পান। যার ফলে তার লেখায় আত্মার খোরাক পাওয়া যেত। কর্মময় জীবনের ফাঁকে পাঠকদের হাতে অসংখ্য বই রচনা করে তুলে দেন। তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে, বকলম, ইনুনি বিনুনি, কাঁচাগাব পাকাগাব, আলোকিত মানুষের খোঁজে প্রভৃতি। এছাড়া তিনি ১৯৯২ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ সদস্য প্রমাণ্য গ্রন্থটি সম্পাদনা করেন। দীর্ঘদিন কিডনি রোগে অসুস্থ থাকায় অবশেষে দুইটি কিডনি অকেজো হয়ে গেলে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত বুধবার রাতে মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তিনি স্ত্রী, তিন পুত্রসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী ও ছাত্র রেখে যান।

 

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads