• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

ইসলামে তারুণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম

  • প্রকাশিত ০২ মার্চ ২০২১

মুফতি মো. এহসানুল হক

 

 

 

তারুণ্য মানবজীবনের অমূল্য এক সম্পদ। এটা জীবন মহীরুহের বিকশিত চারাগাছ। তারুণ্য কাঁচা বয়সের একটি উদ্দীপনার নাম। তারুণ্য অর্থ হচ্ছে বাধা না মানা। তীব্র স্রোতে উজান সাঁতারে পাড়ি দেওয়াই তারুণ্যের ধর্ম। চেতানাদৃপ্ত তরুণরা যখন জেগে উঠে তখন সব প্রতিবন্ধকতার চড়াই-উৎরাই মাড়িয়ে তারা বিজয় ছিনিয়ে আনে। বিজয়ের পুষ্পমালা তাদের পদচুম্বন করে। ইতিবাচক অর্জনসহ সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে তাদের অবদান। তারুণ্য তথা যৌবনকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ইহকালে কল্যাণ ও পরকালীন জীবনে মুক্তির বিশাল বাগিচায় উপনীত হওয়া যাবে।

জীবন মানুষের মহামূল্যবান এক সম্পদ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে তারুণ্য তথা যৌবন। ইসলামে যৌবনের গুরুত্ব অপরিসীম। তিরমিযি শরিফের এক বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যৌবন বয়সের ইবাদতকে ইসলামে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ বেশি খুশি হন যেসব তরুণ যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে’। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যেদিন (কেয়ামত দিবসে) আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন তিনি সাত শ্রেণির লোককে তাঁর ছায়ায় স্থান দেবেন, তাদের মাঝে একশ্রেণির হলেন এমন যুবক যারা যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছেন’। (বুখারি, হাদিস নং-৫০৪) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, ‘হাশরের ময়দানে মানুষকে পাঁচটি বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে, তন্মধ্যে একটি প্রশ্ন করা হবে যৌবনকাল কীভাবে কাটিয়েছ’। (বুখারি, হাদিস নং-২৭৩১) অন্যত্র প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘৫টি জিনিসকে ৫টি জিনিসের পূর্বে গনিমত মনে করো। তন্মধ্যে একটি হলো বার্ধক্য আসার পূর্বে যৌবনকে’। (তিরমিযি, হাদিস নং-১৯৭৪)

যৌবনকাল মানবজীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ, এসময় মানুষ বয়সের তাড়নায় ও শয়তানের প্ররোচণায় পড়ে বিভিন্ন নিন্দিত ও গোনাহর কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তাই হাশরের মাঠে আল্লাহতায়ালা এসময়ের হিসেব নিবেন। আর একারণেই আমলের ক্ষেত্রেও যৌবনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিটি আন্দোলনে বিজয়ের সাফল্যের পেছনে রয়েছে তরুণসমাজের আত্মত্যাগ। এই তরুণদের রক্তের বিনিময়ে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে অসংখ্য সরকার বাহাদুরের রাজ্যসীমা। ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে আছে তরুণদের আত্মত্যাগের স্মৃতি। বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্বমানবতার কল্যাণে তরুণদের নিয়েই ১৯৯৫

খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম সংগঠন ‘হিলফুল ফুযুল যুব সংঘ’ গঠন করেছিলেন। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দীনের দাওয়াত নিয়ে মাঠে নেমেছেন সর্বাগ্রে তরুণরাই এগিয়ে এসেছেন। হজরত আবু বকর (রা.), হজরত উমর (রা.) তরুণ বয়সে ইসলাম কবুল করেন। আসহাবে কাহাফে যারা ছিলেন তারাও ছিলেন তরুণ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র  কোরআনে বলেন, হে নবী! আপনার কাছে আমি তাদের আসহাফে কাহাফের ইতিবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করেছি, তারা ছিল কয়েকজন তরুণ। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছিল এবং আমি তাদেরকে সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছি।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত-১৩)

ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হজরত বেলাল (রা.) ছিলেন তরুণ। হজরত ইবরাহিম (আ.) যখন মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে পাষণ্ড নমরুদের তৈরিকৃত আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন, তখন তিনি ছিলেন তরুণ। হজরত ইউসুফ (আ.) যখন কারাগারে ছিলেন তখন তিনি তরুণ ছিলেন। হজরত ইউনুস (আ.)কে যখন সমুদ্রের মাছ গিলে ফেলে তখন তিনি ছিলেন তরুণ। হজরত দাউদ (আ.) যখন জালিম শাসক জালুতকে হত্যা করেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ।

যুদ্ধের ময়দানেও তরুণরা ছিলেন সক্রিয়। বদরের যুদ্ধে হজরত মাআজ ও মুআজ (রা.) নামক দুজন তরুণ সাহাবি ইসলামের ঘোর দুশমন আবু জাহিলকে হত্যা করেন। খায়বার বিজয়ী বীর সেনানী শেরে খোদা হজরত আলী (রা.) যিনি কামূছ দুর্গের লৌহ কপাট উপড়িয়ে ফেলে এক মুষ্টিতে নিয়ে এটাকে যুদ্ধের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ। মুতার যুদ্ধের সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ তিনিও ছিলেন তরুণ। স্পেন বিজয়ী সেনাপতি তারেক বিন জিয়াদ তিনিও ছিলেন তরুণ। এছাড়া অন্যান্য যুদ্ধের সেনাপতি হজরত আবু বকর (রা.), হজরত আলী (রা.), হজরত উমর (রা.), হজরত উসমান (রা.), হজরত জাফর (রা.), হজরত যায়েদ ইবনে হারিসা (রা.) হজরত তাইয়ার (রা.), হজরত যুবায়ের (রা.), হজরত তালহা (রা.), হজরত অব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.), হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদসহ (রা.) প্রায় সাহবায়ে কেরামগণ ছিলেন তরুণ। ভারত বিজয়ী সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসেম যখন ভারতে ইসলাম প্রচার করেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ। কুতাইবা বিন মুসলিম যিনি এশিয়ার মধ্যে ইসলামের বিস্তার ঘটান তখন তিনিও ছিলেন তরুণ। বাংলাদেশেও অনেক আলেম-উলামা, ওলী-আওলিয়াগণ ইসলামের প্রচার-প্রসার করেন তাদের প্রায়ই ছিলেন তরুণ। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের তরুণদের পদচারণায় আজও মুখরিত।

বিশ্বজুড়ে চলছে আজ তরুণদের জয়-জয়কার। জাতির প্রাণের স্পন্দন তরুণসমাজ। তরুণরা যে উদ্দেশ্যেই জেগেছে সে উদ্দেশ্যই অর্জন করেছে। এমনিভাবে ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা রয়েছে তরুণদের আত্মত্যাগর কথা। যোগ্য নেতৃত্ব ও কর্মতৎপরতার মাধ্যমে উন্নত দেশ গঠন এবং দেশের উন্নতি-অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে তরুণ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে তরুণদেরই জেগে উঠতে হবে, জাগাতে হবে জাতিকে। ইসলাম-মানবতা এবং জাতির কল্যাণে তরুণদের ভূমিকা অপরিসীম।

 

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও অধ্যক্ষ, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভবাজার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads