• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

ইসলামে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব

  • প্রকাশিত ১৯ মার্চ ২০২১

মো. হুসাইন আহমদ

 

 
গাছ আল্লাহতায়ালার অনেক বড় নিয়ামত। এই পৃথিবীতে বসবাসের জন্য আল্লাহতায়ালা মানুষকে যত নিয়ামত দান করেছেন তার অন্যতম হলো গাছ। গাছ আমাদের ফল-ফসল দেয়, ফুল দেয়, ছায়া দেয়, কাঠ দেয়, তা আমরা বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখি। আর বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা জানতে পেরেছি গাছ আমাদের আরো অনেক উপকার করে। গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। আমরা গাছ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করি। আর আমাদের শরীর থেকে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হয়, তা শুষে নেয়। এভাবে গাছ আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে, পরিবেশে ভারসাম্য আনে। একটি গাছ বাতাস থেকে ৬০ পাউন্ডেরও বেশি ক্ষতিকারক গ্যাস শোষণ করে এবং ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সমপরিমাণ তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। আর যেখানে গাছ বেশি থাকে সেখানে বৃষ্টিও বেশি হয়। এ কথা তো সবারই জানা। গাছ থেকে আমরা কাঠ পাই, যা দ্বারা আসবাব-পত্র তৈরি করি। ঔষধি গাছ থেকে আমরা ঔষধ বানাই। ফুল গাছ আমাদের আঙিনা সুন্দর করে। রং-বে রঙের ফুল আমাদের হূদয়কে রাঙিয়ে দেয়। বিভিন্ন মৌসুমে নানান রকম ফলের স্বাদে-ঘ্রাণে আমরা বিমোহিত হই। এছাড়াও আমরা আরো কত শত উপকার লাভ করি গাছ থেকে। মোটকথা পৃথিবী বসবাস উপযোগী থাকা ও মানুষের জীবনধারণের সাথে ওতপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে গাছ বা বৃক্ষ।
ফলে বৃক্ষরোপণের প্রতি অনেক বেশি উৎসাহিত করেছে ইসলাম। এমন কী একে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য করেছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ শস্যবীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী। তিনি প্রাণহীন বস্তু হতে প্রাণবান বস্তু নির্গত করেন এবং তিনিই প্রাণবান বস্তু হতে নিষ্প্রাণ বস্তুর নির্গতকারী। হে মানুষ! তিনিই আল্লাহ। সুতরাং তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করে কোন অজ্ঞাত দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?...আর তিনিই ওই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তারপর আমি তা দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদের চারা উদগত করেছি, তারপর তা থেকে সবুজ গাছপালা জন্মিয়েছি, যা থেকে আমি থরে থরে বিন্যাস্ত শস্যদানা উৎপন্ন করি এবং খেজুর গাছের চুমি থেকে (ফল-ভারে) ঝুলন্ত কাঁদি নির্গত করি এবং আমি আঙ্গুর বাগান উদগত করেছি এবং যায়তুন ও আনারও। তার একটি অন্যটির সদৃশ ও বিসদৃশও। যখন সে বৃক্ষ ফল দেয়, তখন তার ফলের প্রতি ও তার পাকার অবস্থার প্রতি গভীরভাবে লক্ষ কর। এসবের মধ্যে সেই সকল লোকের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা ঈমান আনে।’ (সুরা আনআম, আয়াত নং-৯৫, ৯৯)
অপরদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন"যখন কোনো মুসলমান গাছ লাগায়, অথবা কোনো ফসল বোনে, আর মানুষ, পাখি বা পশু তা থেকে খায়, এটা রোপণকারীর জন্য সদাকা হিসেবে গণ্য হয়। (সহীহ বুখারি, হাদীস ন!-২৩২০;) আরেক বর্ণনায় করেন ‘কিয়ামত পর্যন্ত (অর্থাৎ যতদিন গাছটি বেঁচে থাকবে বা তা থেকে উপকার গ্রহণ করা হবে) সে গাছ তার জন্য সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য হবে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস-১৫৫২) এমন কি কেউ যদি কারো লাগানো গাছ থেকে কোনো কিছু চুরি করে খায়, সেটাও বিফলে যাবে না। সে তার সওয়াব পাবে। হাদিস এসে"েমুসলিম যখন কোনো গাছ রোপণ করে, তো এর যে ফল খাওয়া হবে এটা তার জন্য সদাকা হিসেবে গণ্য হবে।"অতঃপর আমাদের লাগানো গাছ থেকে যে কেউ উপকার গ্রহণ করুক তা আমার জন্য সদাকার সওয়াব হিসেবে গণ্য হবে।
গাছ লাগানোর গুরুত্ব সম্পর্কে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তুমি যদি নিশ্চিতভাবে জানতে পারো যে কিয়ামত এসে গেছে আর তোমার হাতে একটি গাছের চারা আছে তার পরও তা লাগিয়ে দাও।’ (মিশকাত শরীফ) অতএব এ পৃথিবী আমাদের। এখানে আমরা বসবাস করছি। আমাদের প্রজন্ম এখানেই বেড়ে উঠছে। আমাদের উচিত; আমরা যে পৃথিবীকে পেয়েছি, আমাদের প্রজন্মকে এর চেয়ে সুন্দর ও চমৎকার পৃথিবী উপহার দেওয়া। তবেই আমরা যোগ্য পূর্বসূরি হতে পারবো। আর পৃথিবীকে সুন্দর করতে হলে, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দায়মুক্ত হতে চাইলে, আমাদেরকে অবশ্যই প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গাছের মত শ্রেষ্ঠ সম্পদকে আরো বাড়াতে হবে, গাছ বেশি বেশি রোপণ করতে হবে ও রক্ষা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমদের তাওফিক দান করুন। আমিন।    
 
লেখক: শিক্ষার্থী, তাকমিল, দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাংগাইল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads