• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

মানবজীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব

  • প্রকাশিত ২০ মার্চ ২০২১

উসমান বিন আ. আলিম

 

 

 

মানবজীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজ গঠনে বা ব্যক্তি গঠনে যার প্রয়োজনীয়তা অতুলনীয়। কোনো জাতিকে সুসভ্য মানুষরূপে গড়ে উঠানোর জন্য শিষ্টাচার অতি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে আমাদের অশান্ত ও উচ্ছৃঙ্খল সমাজে শান্তি আনতে হলে সমাজের মানুষদের শিষ্টাচারসম্পন্ন হতে হবে। কারণ, শিষ্টাচারসম্পন্ন ব্যক্তি কোনো অন্যায়ের সাথে নিজেকে জড়ায় না, কারো সাথে শত্রুতা করে না বা কারো স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করে না। শিষ্টাচার হচ্ছে ভদ্র, মার্জিত ও রুচিসম্মত আচরণ। একজন মানুষ ভালো না মন্দ তা বিবেচিত হয় মূলত সে ব্যক্তির আচরণ দেখেই।

শিষ্টাচার মানুষকে সংযমী ও বিনয়ী করে তোলে। শিষ্টাচারসম্পন্ন ব্যক্তি তার ভদ্র ও সংযত ব্যবহার দিয়ে যে কোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে। শিষ্টাচারসম্পন্ন মানুষকে সবাই শ্রদ্ধা করে। তাদের স্থান সমাজের উঁচু স্তরে। হোক সে ব্যক্তি অসুন্দর কিংবা গরিব। একমাত্র শিষ্টাচারই মানুষকে প্রকৃত মর্যাদায় ভূষিত করে। ইসলামে শিষ্টাচারকে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিষ্টাচারের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্র, ভালো ব্যবহার ও পরিমিত ব্যয় বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা নবুয়তের পঁচিশ ভাগের এক ভাগ।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৭৭৬) হজরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বলেন, ‘তুমি আদব অন্বেষণ করো। কারণ আদব হলো বুদ্ধির পরিপূরক, ব্যক্তিত্বের দলিল, নিঃসঙ্গতায় ঘনিষ্ঠ সহচর, প্রবাসজীবনের সঙ্গী এবং অভাবের সময়ে সম্পদ।’ (ইছবাহানী, মুনতাখাব; সাফারিঈনী, গিযাউল আলবাব : ১/৩৬-৩৭) আহনাফ আল-কায়েস (রহ.) বলেন, ‘আদব বা শিষ্টাচার বিবেকের জ্যোতি যেমন আগুন দৃষ্টিশক্তির জ্যোতি।’ (ফতোয়া আল-মিছরিয়া, ১০/৩৫৯, ‘আদব’ অধ্যায়)

রুওয়াইম ইবনু আহমাদ আল-বাগদাদী (রহ.) তাঁর ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুমি তোমার আমলকে লবণ ভাববে, আর তোমার আদবকে মনে করবে ময়দা।’ (ড. আলী আব্দুল হামীদ, আত-তাহযীলুদ দিরাসী বিল ক্বাইয়েমিল ইসলামিয়াহ, (বৈরূত : ১ম প্রকাশ, ১৪৩০হি./২০১০খ্রি. পৃ. ১৫৪; আল-কুরাফী, আল-ফুরূক্ব, ৩/৯৬) অর্থাৎ তুমি আমলের চেয়ে আদবকে এত অধিক গুরুত্ব দিবে। লবণ ও ময়দার স্বাভাবিক মিশ্রণে উভয়ের অনুপাত যেভাবে কম-বেশি হয়। সুতরাং মানবজীবনে আদব শিষ্টাচার অতি গুরুত্বপূর্ণ।

পৃথিবীতে যারা মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন, তারা কেবল শিষ্টাচার ও নম্র-ভদ্র ব্যবহারের মাধ্যমেই মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। প্রত্যেক ধর্মে শিষ্টাচারের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন, শিষ্টাচারের মূর্তপ্রতীক। উন্নত ব্যবহারের জন্য তিনি ছোট-বড় সবার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। সংযম, বিনয়, ভদ্রতা তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কখনো তিনি কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেননি, ঔদ্ধত্য আচরণ করেননি। এ কারণেই যুগে যুগে মানুষের কাছে তিনি এতো শ্রদ্ধার পাত্র। এক দার্শনিক তাঁর অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আকল (বুদ্ধি) ছাড়া যেমন আদব হয় না; তেমনি আদব ছাড়াও বুদ্ধিমান হয় না।’ অর্থাৎ একটি আরেকটির পূরিপূরক। শিষ্টাচার হঠাৎ করে কারো মধ্যে গড়ে উঠে না। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ প্রস্তুতিপর্ব। শিষ্টাচারের বীজ মূলত বপন হয় শিশুকালেই। আর এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা প্রধান। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। পরিবারের বড়রা যে রকম ব্যবহার করে শিশুরা তাই অনুকরণ করে। বাল্যকালে শিশুদের সংযম, বিনয় ও উন্নত রুচির চর্চা ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে শিষ্টাচার গড়ে তোলে। যে ব্যক্তি শিষ্টাচার অর্জন করতে পারে না, তার মানুষ হয়ে জন্মানোর কোনো সার্থকতা নেই। শিষ্টাচারহীন ঔদ্ধত্য মানুষ কেবল আকৃতির দিক থেকেই মানুষ, তাদের মনুষ্যত্বের কোনো বিকাশ ঘটে না। ফলে তারা সমাজের চোখে হয়ে থাকে ক্ষুদ্র কীট-পতঙ্গ সাদৃশ্য। সমাজ এদের কোনো মর্যাদায় ভূষিত করে না, কুরুচিপূর্ণ এসব মানুষকে ফেলে রাখে আস্তাকুঁড়ে। সমাজে শিষ্টাচারের অভাব নৈতিক অবক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে। সমাজজীবন হয়ে উঠে অশান্তিপূর্ণ। নানা কদর্যতা, অন্যায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ফলে সমাজে বসবাসকারী মানুষরা ভোগে অস্তিত্বের সংকটে। শিষ্টাচারহীনতা একটি দেশ ও জাতির উন্নয়নের অন্তরায়। তাই শিষ্টাচারসম্পন্ন জীবন গড়ি, আলোকিত সমাজ গড়ি। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক : পরিচালক, বাংলাদেশ কওমী তরুণ লেখক ফোরাম

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads