• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
আজানের গুরুত্ব ও মুয়াজ্জিনের মর্যাদা

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

আজানের গুরুত্ব ও মুয়াজ্জিনের মর্যাদা

  • প্রকাশিত ২২ মার্চ ২০২১

ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য ও নিদর্শন হলো আজান। আজানের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার একাত্মবাদ, বড়ত্ব ও সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দৈনিক পাঁচবার আজানের সুমধুর তানে মুমিনের হূদয়ে ইমানের জোয়ার আসে। খোদাপ্রেমে সিক্ত হয় মুমিনের অন্তরাত্মা। আজান শোনামাত্র মুসলমানরা সব ভেদাভেদ ভুলে মসজিদে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লাশারিকের স্বীকৃতি দেন। আর সে অপূর্ব দৃশ্য অবলোকন করে যুগে যুগে অগণিত অমুসলিম ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইমানের শরাব পান করে ধন্য হয়েছেন। সঙ্গত কারণেই মুসলিম সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আজানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

আজানের তাৎপর্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, আর যখন তোমরা নামাজের দিকে আহ্বান কর (আজান দাও), তখন তারা (কাফেররা) একে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়া-কৌতুক হিসেবে গ্রহণ করে। এর কারণ হচ্ছে, তারা এমন সম্প্রদায়, যাদের বুদ্ধি-বিবেক নেই। (সুরা মায়েদা, আয়াত-৫৮) মহান আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে আরো ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয় (আজান দেওয়া হয়), তখন তোমরা আল্লাহ্র স্মরণের দিকে (নামাজের দিকে) ধাবিত হও। আর ক্রয়-বিক্রয় বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে। (সুরা জুমা, আয়াত-০৯) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন আজান দেওয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু নির্গমন করতে করতে এত দূরে চলে যায় যে, সেখান থেকে আজান শোনা যায় না। (সহিহ বুখারি) প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, যখন নামাজের সময় হয়, আর তোমরা দুজন ব্যক্তি থাক, তাহলে তোমাদের থেকে একজন আজান ও ইকামাত দেবে এবং দুজনের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে। (সহিহ বুখারি)

যে ব্যক্তি আজান দেয়, শরিয়তের পরিভাষায় তাকে মুয়াজ্জিন বলা হয়। আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আজান দেওয়াকে নিচু কাজ মনে করে। অথচ আজান দেওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত একটি আমল। কেয়ামতের দিবসে মুয়াজ্জিনগণ বিশেষ মর্যাদাবান হবেন। সেদিন চন্দ্র, সূর্য, পাহাড়-পর্বত, নদনদী, গাছপালা, পশু, পাখি এবং প্রত্যেক প্রাণী ও নিষ্প্রাণ দুনিয়ায় যাদের কাছে মুয়াজ্জিনের আজান পৌঁছত, সবাই তার জন্য সাক্ষ্য দেবে। মুয়াজ্জিনের জন্য রয়েছে অফুরন্ত নেয়ামত, সুউচ্চ মর্যাদা ও জান্নাতের সুসংবাদ। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা কার? যে আল্লাহ হর দিকে আহ্বান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলমান। (হা-মীম সেজদা-৩০) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনির শেষ সীমা পর্যন্ত সজীব ও নির্জীব সব বস্তু তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে ও সাক্ষ্য প্রদান করে। ওই আজান শুনে যে ব্যক্তি নামাজে যোগ দেবে, সে ২৫ নামাজের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। মুয়াজ্জিনও ওই মুসল্লির সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে এবং তার দুই আজানের মধ্যবর্তী সব ছোট গুনাহ মাফ করা হবে।’ (নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ইমাম হলেন দায়িত্বশীল আর মুয়াজ্জিন হলেন আমানতদার। হে আল্লাহ! আপনি ইমামদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন আর মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন।’ (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত) হাদিসে পাকে আরো এসেছে, ‘কেয়ামতের দিনে লোকেরা পিপাসার্ত হয়ে পড়বে। আর মানুষ যখন পিপাসা-কাতর হয় তখন তার ঘাড় ভাঁজ ও খাটো হয়ে যায়। কিন্তু মুয়াজ্জিনগণ কেয়ামতের দিন পিপাসা-কাতর হবে না; তাই তাদের ঘাড় ঊর্ধ্বে উন্নত ও দীর্ঘ থাকবে।’ সুতরাং নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আজান দিয়ে নামাজ আদায় করা কর্তব্য। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে আজান দিয়ে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আর মুয়াজ্জিনদের যথাযথ মর্যাদা ও উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমিন।

লেখক : মুফতি আবু ইউসুফ ফারুকী

খতিব, কাজীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads