• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
অহংকার পতনের মূল

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

অহংকার পতনের মূল

  • প্রকাশিত ২৩ মার্চ ২০২১

অহংকার তথা আত্মগৌরব একটি মারাত্মক ব্যাধি যা অন্তরের জন্য ক্যানসার সমতুল্য। এই মারাত্মক ব্যাধি থেকে মুমিনকে সর্বদা দূরে থাকতে হবে এবং তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। নচেৎ চিকিৎসাহীন রোগাক্রান্ত দেহের ন্যায় আত্মারও অপমৃত্যু ঘটতে পারে। তাই দেহের সুস্থতার জন্য যেমন চিকিৎসা নেওয়া জরুরি, ঠিক আত্মার সুস্থতার জন্যও চিকিৎসা নেওয়া তার থেকেও বেশি জরুরি। সুতরাং ওই ব্যক্তি সফল, যে নিজের দেহের সংশোধনের পাশাপাশি অন্তরকেও অহংকার নামক ভয়ংকর রোগ থেকে সংশোধন করে নিয়েছে। পক্ষান্তরে যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার থাকবে, আখেরাতে তাদের পরিণতি নিতান্তই শোচনীয় হবে। নিম্নে কোরআন ও হাদিসের আলোকে সংক্ষিপ্তভাবে অহংকারের পরিণতি তুলে ধরা হলো।

অহংকারী ব্যক্তিকে সবাই অপছন্দ করে। কেননা অহংকার একটি নিন্দনীয় স্বভাব। অহংকারী ব্যক্তির সাক্ষাতে সবাই সৌজন্য মূলক গাল বাঁকা করে হাঁসি দিলেও, অন্তরে থাকে তার ব্যাপারে প্রচণ্ড ঘৃণা। তাই মহান আল্লাহতায়ালা দুনিয়াতে দাম্ভিকতার সাথে চলাফেরা করতে নিষেধ করে বলেছেন, ‘আর জমিনে দম্ভভরে বিচরণ করো না; কেননা তুমি তো কখনই পদভরে চলাফেরা করে ভূপৃষ্ঠকে বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পরবত সমান হতে পারবে না।’ (সুরা বানী ইসরাইল, আয়াত নং-৩৭) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তুমি মানুষের প্রতি অবজ্ঞাভরে তোমার গাল বাঁকা করো না এবং জমিনে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না ; নিশ্চয় আল্লাহ্ কোনো উদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা লুকমান, আয়াত নং- ১৮)

অহংকারী ব্যক্তি দুনিয়াতে ধন-সম্পদ আর ক্ষমতার দাপটে মানুষের কাছে মর্যাদাবান হতে পারে কিন্তু আখেরাতে তাদের পরিণতি হবে অত্যন্ত শোচনীয়। যারা আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে দুনিয়াতে দাম্ভিকতার সাথে চলাফেরা করে তাদের আখেরাতে শোচনীয় পরিণতি সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘নিশ্চয় যারা অহংকারবশে আমার ‘ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে।’ (সুরা মুমিন, আয়াত নং-৬০)

অহংকার, দাম্ভিকতা বান্দার জন্য শোভা পায় না। কেননা অহংকারের একচ্ছত্র মালিক হলো মহান আল্লাহতায়ালা। সুতরাং আল্লাহতায়ালার এই মহান সিফাত নিয়ে যারাই টানাটানি করেছে, তাদেরকেই আল্লাহতায়ালা দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। যেমন, অধিক দাম্ভিকতার কারণে নমরূদ, কারূন, ফেরাউন আর সাদ্দাদের মতো বড় বড় নামধারী ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। সুতরাং যারাই নমরূদ,কারূন আর ফেরাউনের মতো অহংকার দাম্ভিকতা নিজেদের স্বভাব বানিয়ে নিবে, তাদেরকেই আল্লাহতায়ালা ধ্বংস করে দেবেন এবং পরকালীন শাস্তি তাদের জন্য নিশ্চিত করবেন। আল্লাহতায়ালা হাদিসে কুদসিতে অহংকারীদের ব্যাপারে কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘(শুনে রাখ) অহংকার হলো আমার চাদর এবং মহত্ব হলো আমার লুঙ্গি। সুতরাং যে কেউ এর কোনো একটি নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪০৯০)

দাম্ভিক ব্যক্তি সর্বদা নিজেকে বড় মনে করে অথচ বাহ্যিক দৃষ্টিতে সবাই তাকে সম্মান করলেও আড়ালে সবাই তাকে ঘৃণা করে। অর্থাৎ দাম্ভিক ব্যক্তির উদাহরণ হলো ওই ব্যক্তির ন্যায়, যে পাহাড়ের সর্বশেষ চূড়ায় উঠে নিজেকে সবার থেকে বড় মনে করে অথচ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে তাকে অনেক ছোট দেখা যায়। পক্ষান্তরে, নম্র-ভদ্র স্বভাবের মানুষের উদাহরণ হলো ওই ফলন্ত বৃক্ষের ন্যায়, যে বৃক্ষে অধিক পরিমাণে ফল ধরা সত্ত্বেও উপরের দিকে না উঠে বরং মানুষের কল্যাণে নিচের দিকে হেলে যায়। যার কারণে মানুষের অন্তরে তার আকর্ষণ আরো বৃদ্ধি পায়। যারা ওই ফল বৃক্ষের ন্যায় অন্যের কল্যাণে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় নিজেকে ছোট করে দেয়, আল্লাহ তার মর্যাদা ও ভালোবাসা মানুষের অন্তরে আরো বৃদ্ধি করে দেয়। এ ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা আরো সমুন্নত করে দেন।’ (মুসলিম, হাদিস নং- ৬৪৮৬)

অপর এক হাদিসে একে অপরের সঙ্গে নরম ব্যবহার করতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা আমার নিকট এই মর্মে ওহি পাঠিয়েছেন যে, তোমরা বিনয়ী হও, যতক্ষণ না একে অপরের সঙ্গে জুলুম করে এবং অহংকার করে।’ (আবু দাউদ,হাদিস, নং-৪৮৯৫) জাহান্নামের অধিবাসী হওয়ার জন্য খুব বেশি নয়, কিঞ্চিত পরিমাণ অহংকারেই যথেষ্ট। এ ব্যাপারে মুসলিম শরিফের ১১৬ নং হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ এছাড়াও অন্য হাদিসে জাহান্নামীদের স্পষ্ট পরিচয় তুলে ধরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামী লোকদের পরিচয় বলব না? তারা হলো: কর্কশ স্বভাব, শক্ত হূদয় ও অহংকারী ব্যক্তি।’ (বুখারি, হাদিস নং-৬০৭১)

আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন কিছু কিছু মানুষের ওপর গোস্বা হয়ে তাদের প্রতি দয়ার দৃষ্টিও  দেবেন না। তাদের মধ্যে একশ্রেণির মানুষ হলো যারা দুনিয়াতে চলাফেরা করার ক্ষেত্রে দাম্ভিক তথা অহংকারী ছিল। এ সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা কিয়ামত দিবসে সে ব্যক্তির দিকে (দয়ার) দৃষ্টি দেবেন না, যে ব্যক্তি অহংকারবশত ইযার বা পরিধেয় বস্ত্র ঝুলিয়ে পরিধান করে।’ (বুখারি, হাদিস নং- ৫৭৮৮) সুতরাং পায়জামা বা লুঙ্গি অথবা প্যান্ট পরিধান করার সময় অবশ্যই আমরা এ বিষয়ে সতর্ক থাকব, যাতে করে পরিধেয় বস্ত্র টাকনু তথা গিড়ার নিচে না নেমে যায়।

আমাদেরকে বিনয় নম্রতা স্বভাব অবলম্বন করে, কর্কশ ভাষা, দাম্ভিকতা, অহংকারী স্বভাব পরিহার করতে হবে। কেননা বিনয়-নম্রতা স্বভাব জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য আর কর্কশ ভাষা, দাম্ভিকতা রূঢ় স্বভাব জাহান্নামিদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ যেন আমাদেরকে অহংকারী স্বভাব পরিহার করে বিনয়-নম্রতা স্বভাব গ্রহণ করার তৌফিক দান করেন। আমীন!

নিজামুল ইসলাম নিজাম

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads