• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
অসহায়কে অন্নদান মহৎ কাজ

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

অসহায়কে অন্নদান মহৎ কাজ

  • প্রকাশিত ২৪ মার্চ ২০২১

ক্ষুধার্তকে খাবার দেওয়া পুণ্যের কাজ। সহানুভূতি ও মানবিকতার পরিচয়। রাসুল সালালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘তোমরা গরিব-দুঃখী এতিমদেরকে দেখাশোনা করো। কেননা আমি নিজে এতিম ছিলাম।’ তিনি আরো এরশাদ করেন, ‘আমি নিজেকে ভালোবাসি। আর যারা এতিমদেরকে গরিব-দুঃখীদেরকে ভালোবাসে তারা হলো আল্লাহতায়ালার চোখে উত্তম ব্যক্তি। আল্লাহতায়ালাও তাদেরকে ভালোবাসেন।’ ইসলামের  দৃষ্টিতে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাবার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে অত্যধিক গুরুত্ব ও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মানুষের কল্যাণসংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হচ্ছে দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাবার দান করা।’ (বুখারি, হাদিস নং-১২) পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে মহান আল্লাহ ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাবার দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাকে দুটি পথ প্রদর্শন করেছি। অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কী? তা হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে এতিম আত্মীয় অথবা ধুলি-ধুসরিত মিসকিনকে অন্নদান।’ (সুরা বালাদ, আয়াত : ১০-১৬)

ক্ষুধার্ত দরিদ্র ব্যক্তিকে খাবার দানের মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনকারী বান্দা হিসেবে গণ্য হতে পারি। হাদিস শরিফে এসেছে মহান আল্লাহ তায়ালা কাল কিয়ামতের দিন বান্দাদেরকে প্রশ্ন করবেন দুনিয়াতে আমি অভাবে ছিলাম কিন্তু তোমরা আমাকে কেন দেখনি? আমার সাহায্য প্রয়োজন হয়েছিল কিন্তু তোমরা আমাকে সাহায্য করোনি আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম কিন্তু তোমরা আমাকে খাবার দাও নি কেন? তখন বান্দা উত্তর দিবেন হে আল্লাহ! আপনাকে কোথায় পাবো, কীভাবে সাহায্য করবো? আপনি তো সমস্ত কিছু থেকে অমুখাপেক্ষী। কীভাবে আপনাকে আমরা খাবার দেব? তখন আল্লাহতায়ালা বলবেন, তোমাদের প্রতিবেশীদের মাঝে অনেকে অভুক্ত থেকেছে। অনেকের সাহায্যের প্রয়োজন পড়েছে কিন্তু তোমরা তাকে সাহায্য করোনি। অনেকে না খেয়ে রাত্রি যাপন করেছে কিন্তু তোমরা তার খোঁজ নাওনি। অনেকে অসুখের যন্ত্রণায় ভুগেছে কিন্তু তোমরা তার সেবা করো নি। যদি তাদেরকে তোমরা সাহায্য করতে তাহলে সেটা আমাকে সাহায্য করা হতো।’ (সহিহ মুসলিম) অন্য এক জায়গায় মহানবী (সা.) বলেন, ‘দয়াশীলদের ওপর দয়াময় আল্লাহ দয়া করে থাকেন। তোমরা জমিনবাসীদের ওপর দয়া করো, আসমানবাসী (আল্লাহ) তোমাদের ওপর দয়া করবেন।’। (তিরমিযি, হাদিস নং-১৯২৪) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অনুগ্রহ করে না, তার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হয় না।’ (বুখারি, হাদিস নং- ৭৩৭৬)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো গরিবের চলার পথ সহজ করে দেয়, দুনিয়া-আখিরাতে মহান আল্লাহ তার চলার পথ সহজ করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং-২৫৯৪) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকবে, আল্লাহ তার সাহায্যে থাকবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিনে একটি বড় বিপদ দূর করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস নং-২৪৪২; মুসলিম, হাদিস নং-২৫৮০) পবিত্র কোরআনুল কারীমে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসার খাতিরে ক্ষুধার্ত এতিম, মিসকিন ও কয়েদিদের খাবার দান করে।’

ক্ষুধার্তকে খাবার দান করার মাধ্যমে মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়। এতে আমরা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতে পারি। আবার তাদের কষ্ট লাঘবের কারণে আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন বিভিন্ন কষ্ট লাঘব করে দেবেন। হাদিস শরিফে পাওয়া যায় হজরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাতু সালাম কখনো তিনি মেহমান ছাড়া খাবার খেতেন না। কোনো একজন মেহমানকে বা ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে নিয়ে তারপর খাবার খেতেন। গরিব, অসহায় ও ক্ষুধার্তকে খাবারদানকারী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুগত্যকারী বলে গণ্য হবেন। রাসুল (সা.) ক্ষুধার্তকে খাবার দান করতে কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা ভিক্ষুক (ক্ষুধার্তকে) কিছু না কিছু দাও। আগুনে পোড়া একটা খুর হলেও।’ (আহমাদ, হাদিস নং-১৬৬৯৯; নাসাঈ, হাদিস নং-২৫৬৫)

ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাবার দেওয়ার চমৎকার একটি উপমা হলো-হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তার ঘরে তিন দিন যাবত চুলায় আগুন জ্বলে না। ক্ষুধার যন্ত্রণায় সকলে ভুগছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কিছু আটা নিয়ে আসলেন। যা দিয়ে তিনি রাত্রিবেলা রুটি বানালেন। রাতে যখন  রুটি খেতে যাবেন ঠিক ওই মুহূর্তে একজন এতিম এসে বলতে লাগল, মা আমি আজ সারা দিন কিছু খাইনি সুতরাং আপনি আমাকে কোনো কিছু খেতে দেন। তখন যে কয়েকটি রুটি বানিয়ে ছিলেন সব তাকে দিয়ে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। পরদিন তিনি আবার তিনটি রুটি বানালেন। বানানোর পর প্রথম দিনের ন্যায় একজন মহিলা এসে বলতে লাগল, মা আমি আজ সারা দিনে এক গ্লাস পানিও খাইনি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ঘরে কোনো কিছু খাবার থাকলে আপনি কিছু আমাকে খাবার দিলে খুশি হবো। হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা মহিলার কষ্ট দেখে নিজের কষ্টের কথা ভুলে গিয়ে তাকে রুটিগুলো দিয়ে দিলেন। আর তিনি না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। তৃতীয় দিনও ওই একই রকম ঘটনা ঘটলো। যখন তিনি রুটি খেতে যাবেন এমন সময় একজন অন্ধ ব্যক্তি এসে বলল, মা আমি কোনো কাজ করতে পারি না। বিধায় কোনো কিছু খেতে পারি না। আপনি আমাকে কিছু সাহায্য করুন। তখন হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নিজের কষ্টের কথা ভুলে গিয়ে সেই অন্ধ ব্যক্তিকে সমস্ত খাবারগুলো দিয়ে তিনি আজও না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন...।

লেখক : মাওলানা মাহাথির মোবারক

আলেম, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads