• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

ইন্টারনেট দুনিয়া ও বর্তমান প্রজন্ম

  • প্রকাশিত ২৮ মার্চ ২০২১

ফারহানা ইয়াসমিন

 

 

 

নিঃসন্দেহে আল-কোরআন হলো একটি অপরিবর্তনীয় গ্রন্থ। এই চিরঞ্জীবী গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে মানুষের নৈতিক মানদণ্ডের মাপকাঠি। এই গ্রন্থেই রয়েছে মানুষের যাবতীয় কল্যাণ। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি সব বিষয়ে বিশদ ভারসাম্য বিধান রয়েছে এই সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাবে। সুতরাং সৃষ্টির সেরা জীবের জন্য কোরআনের শিক্ষার বিকল্প নেই। এই আলোকিত কোরআনের আলো ও শিক্ষাই মানুষের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের সঠিক জীবন এবং সুন্দর একটি সমাজ গঠনের একমাত্র শক্ত স্বচ্ছ হাতিয়ার হিসাবে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। সামপ্রতিক সময়ে সমাজে একটি সংস্কৃতির প্রচলন দেখা যাচ্ছে। তা হলো তরুণ প্রজন্ম একদিকে মধ্যরাতে ঘুমের রাজ্যে পদার্পণ করছে, আর অন্যদিকে মধ্যদুপুরে কাজের জগৎ ফিরে আসছে। কথাটাতে বোধ হয় উপমার রস একটু বেশি পড়ে গেল! যাইহোক, এই অবস্থার অন্যতম কারণ হলো ইন্টারনেট দুনিয়ার প্রভাব ও ধর্মীয় শিক্ষার সংকট।

চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে একটু ভেবে দেখেন, ইন্টারনেট দুনিয়ায় পদচারণার আগে শিশু ও কিশোরেরা সকালে ঘুম থেকে উঠে মক্তবে যেতো আরবি পড়তে। তারপর বাড়িতে ফিরে খাওয়া-দাওয়া করে বিদ্যালয়ে যেতো। আর এখন কিশোর ও তরুণদের ঘুম ভাঙে মোবাইলের স্কীনের দিকে তাকিয়ে। আধুনিক জীবনের স্বপ্ন দেখতে দেখতে  তরুণ প্রজন্ম সরে যাচ্ছে নৈতিক শিক্ষার আসর থেকে। ভুলে যাচ্ছে এই জগৎ ছাড়াও অন্য একটা জগৎ প্রতিনিয়ত তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সন্তানেরা এখন মাদকাসক্ত হয়ে পিতামাতাকে হত্যা করছে। ভাই উন্মাদ হয়ে বোনকে ধর্ষণ করছে। চুরি ডাকাতি, ছিনতাইসহ গ্যাং কালচারের জন্ম হচ্ছে এই নৈতিক শিক্ষার অভাবে। আধুনিকতার সাথে সাথে মানুষ এখন মূলধারা থেকে প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে কয়েকশো মাইল দূরে চলে যাচ্ছে।

বেশ কিছুদিন আগেও মানুষ প্রকৃতির সাথে সাথে ডুবে যেতো। আবার প্রকৃতির সাথে সাথে জেগে উঠত। কিন্তু বর্তমানে প্রচলন রয়েছে সেই দৃশ্যের ঠিক ১৮০ ডিগ্রি উল্টো প্রথা। মাত্রারিক্ত ইন্টারনেটের ছোঁয়ায় তরুণ প্রজন্মের শুধু নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় হচ্ছে না, পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অবসান, বিষাদ, মাথায় যন্ত্রণা, চোখে জ্বালাপোড়া ও একঘেঁয়েমি ইত্যাদি। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের  চলমান চাকাও আজ হুমকির মুখে। এই বিপজ্জনক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হলো সমাজের সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্বের পাশাপাশি নৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আল্লাহতায়ালা  পরিবারের প্রধানদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘হে ইমানদারগণ!  নিজেকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।  (সুরা তাহরীম, আয়াত-৬)

একটি উপযুক্ত ও সুন্দর জীবন গড়ার জন্য তাদেরকে ভালো শিক্ষা দেওয়া পরিবার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়বদ্ধ এবং তোমাদের প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ প্রতিটি মানুষ তার পরিবারের যত্নের জন্য দায়বদ্ধ। মানুষকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে হাশরের মাঠে জিজ্ঞাসা করা হবে। যেমন ঃ পিতামাতা সন্তানদের ব্যাপারে দায়বদ্ধ। অতএব, পিতামাতার কর্তব্য তাদের সন্তানদের খেয়াল রাখা। তাদের বাচ্চারা কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশে যাচ্ছে ইত্যাদি সন্ধান করা। তাহলে হয়ত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপদগামী হওয়া থেকে বিরত রাখা সম্ভব। আবার একইভাবে সন্তানদের ওপরও কিছু দায়িত্ব আছে পিতামাতার দেখাশোনার জন্য। সেগুলোও সন্তানকে পালন করতে হবে। পিতামাতা ভুল পথে গেলে সন্তানেরও উচিত তাদেরকে সচেতন করা। আবার একজন নেতাও দায়বদ্ধ তার গোত্রের জন্য। তাকেও তার গোত্রের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। এভাবে সবাই সবার দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে হাশরের ময়দানে।  সুতরাং সকলের উচিত সকলের দায়িত্বগুলো পুঙ্খনুপুঙ্খভাবে পালন করা।

রাষ্ট্রীয় আইনের পাশাপাশি পিতামাতার উচিত সন্তানকে ছোট বেলা থেকেই নৈতিক শিক্ষা দেওয়া। শিশুরা স্বাভাবজাতভাবেই অনুকরণ প্রিয়। তাই ছোট বেলা থেকে তাদেরকে যেভাবে প্রতিপালন করা হবে তারা ঠিক সেভাবেই আউটপুট দিয়ে যাবে। এই মুহূর্তে বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় একটি লাইনের কথা মনে পড়ে গেলো-‘আজকের শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যত’। এজন্য এখনই সময় সচেতন হোন আর শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করুন।

 

লেখিকা : শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads